শনিবার, ১৯ অক্টোবর ২০২৪, ৩ কার্তিক ১৪৩১
কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৭ আগস্ট ২০২৪, ০৮:২৭ পিএম
অনলাইন সংস্করণ
‘আয়নাঘরে’ ছেলে

বেঁচে নেই ভেবে শেষকৃত্যও করেছিল পরিবার

মাইকেল চাকমা। ছবি : বিবিসি
মাইকেল চাকমা। ছবি : বিবিসি

শেখ হাসিনা সরকারের গোপন বন্দিশালার নাম ‘আয়নাঘর’। এ কারাগারে অজ্ঞাত স্থানে বিভিন্নজনকে আটকে রাখা হয়েছে বলে অভিযোগ উঠেছে। এমনকি শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর বিভিন্ন জায়গা থেকে একাধিক ব্যক্তিকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। কারাগার থেকে মুক্তি পেয়ে নির্মম জীবনের কথাও জানিয়েছেন একাধিক বন্দি।

আইনাঘরের বন্দিদের একজন মাইকেল চাকমা। ২০১৯ সালের ৯ এপ্রিল থেকে নিখোঁজ ছিলেন তিনি। তবে সম্প্রতি তাকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। তিনি মূলত পার্বত্য চট্টগ্রাম কেন্দ্রিক রাজনৈতিক দল ইউপিডিএফ-এর সংগঠক ছিলেন।

ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসির কাছে তিনি দীর্ঘ বন্দি জীবনের বর্ণনা দিয়েছেন। কারগার থেকে বের হয়ে তিনি জানতে পারেন যে পুত্রশোকে তার পিতার মৃত্যু হয়েছে। এমনকি তিনি জীবিত নেই ভেবে পরিবার তার শেষকৃত্যও সম্পন্ন করেছ।

মাইকেল চাকমাকে ঢাকার শ্যামলী এলাকা থেকে সাদা পোশাকে তুলে নিয়ে যায় অজ্ঞাতরা। পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে গোপন কারাগারে আটক ছিলেন তিনি। তার এ কারাগারটি ‘আয়নাঘর’ নামে পরিচিত।

বিবিসিকে দেওয়া একান্ত সাক্ষাৎকারে তিনি জানান, ছেড়ে দেওয়ার জন্য যখন তাকে চোখ বেঁধে গাড়িতে তোলা হয়। তখন ওই রাতকে নিজের জীবনের শেষ সময় ভেবে নিয়েছেন তিনি।

মাইকেল চাকমা জানান, শেষ রাতে গাড়িতে তোলার সময় তাকে কিছুটা আলগা করে চোখে কাপড় বাঁধা হয়েছিল। তবে গাড়ির সিটে ঘষে কিছুটা নিচে নামান তিনি। এরপর ফজরের আজানের পর কিছুটা আলো দেখতে পান তিনি।

তিনি জানান, ২০১৯ সালের পর মুক্তি পাওয়ার দিনই প্রথম দিনের আলো দেখতে পান তিনি। তবে তিনি যে মুক্তি পেতে যাচ্ছেন তখনও তার সেটি জানা ছিল না। ভেবেছিলেন আজ কোথাও নিয়ে তাকে মেরে ফেলা হবে।

কোথায় রাখা হয়েছিল?

মাইকেল চাকমা জানান, পাঁচ বছরের বেশি সময় ধরে তাকে বেশ কয়েকটি গোপন কারাগারে রাখা হয়েছিল। শুরুর দিকে তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হলেও মারধর করা হয়নি কখনও। তবে যেভাবে বন্দিদের একাকী আর যে পরিবেশ রাখা হয় তা অমানবিক এবং ভয়ংকর মানসিক অত্যাচার।

তিনি বলেন, তারা যেভাবে রাখে তা অত্যন্ত অমানবিক। এটি মানুষের বসবাসের জায়গা না। এটি অনেকটা কবরের মতো, গুহার মতো। গুহায় যেভাবে মানুষ কিছুই দেখে না এখানেও সেভাবে কেউ কিছু দেখতে পায় না। এটা মানুষের বাঁচার মতো জায়গা না। কোনো জানালা নেই। আলো বাতাস ঢোকে না। চারদিকে খালি দেয়াল আর দেয়াল।

মাইকেল চাকমা জানান, সেখানকার কোনো কোনো রুম সাত ফিট বাই ১১ ফিট। আবার কোনো রুম ছিল আট ফিট বাই ১১ বা ১২ ফিট এরকমের হবে। মানে একদম ছোট ছোট রুম। কারাগারটিতে লোহার বা কাঠের তিন ফিট বাই সাত ফিটের একটি খাট আছে।

যেসব বন্দিদের দেখেছেন তিনি

দীর্ঘ পাঁচ বছরের বেশি সময়ে তাকে চার থেকে ৫টি বন্দিশালায় রাখা হয়েছে। এসব জায়গায় আরও বন্দি ছিল। এ সময়ে তার দুজনের সঙ্গে দেখা হয়েছে এবং আরও ‍দুজনের নাম শুনতে পেয়েছেন তিনি। তবে তাদের ভাগ্যে কী হয়েছে তা তার জানা নেই।

মাইকেল চাকমা জানান, গোপন কারাগারে কেউ কারও দেখার বা কথা বলার সুযোগ ছিল না। তবে গোসল করতে নেওয়ার সময় বাথরুমের ছিদ্র দিয়ে তিনি বিভিন্ন সময়ে কিছু বন্দিদের দেখা পেয়েছেন।

তিনি জানান, আমি সেখানে বিভিন্ন বয়সের লোক দেখেছি। তাদের মধ্যে কারও চুল দাড়ি পাকা, কেউ আবার কম বয়সী। এমনকি পঞ্চাশ-পঁয়তাল্লিশ বছরের লোকজনও দেখেছি। আবার কারও বয়স ষাটের ওপরে হবে। কেউ আবার একদম ইয়াং।

তিনি আরও জানান, দুই দফায় দুজন বন্দিকে তার সঙ্গে রাখা হয়েছিল। অত্যন্ত গোপনে তিনি তাদের নাম শুনতে পান। এ ছাড়া পাশের রুমের আরও এক বন্দি এবং তার সঙ্গীর নাম জানতে পারেন। দার মধ্যে সাইদুল ও এরশাদ নামে দুজনের সঙ্গে একসাথে ছিলেন তিনি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

ঘটনাপ্রবাহ: কোটা সংস্কার আন্দোলন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

সাবেক এমপি কামাল মজুমদার গ্রেপ্তার

নির্যাতনের শিকার শিশুর চিকিৎসার দায়িত্ব নিলেন তারেক রহমান

ডেঙ্গু প্রতিরোধে বিএনপির লিফলেট বিতরণ

আওয়ামী ফ্যাসিবাদীরা আমাদের প্রাণনাশের হুমকি দিচ্ছে : নাসীরুদ্দীন

ঢাকায় মসজিদ দখল করতে হামলা, আহত ৫

যত দ্রুত সম্ভব নির্বাচন দিন : আব্দুস সালাম

গবেষণায় মাইক্রোপ্লাস্টিক নিয়ে ভয়ংকর তথ্য

ইসরায়েলের বিরুদ্ধে আবারও গর্জে উঠলেন এরদোয়ান

রাশিয়ায় গোপনে সেনা পাঠাচ্ছে ‍উত্তর কোরিয়া

১৪ বছর পরে দেশে ফিরলেন বিএনপি নেতা আবুল হোসেন

১০

সেই চার পুলিশ কর্মকর্তার তিনজন গ্রেপ্তার

১১

র‍্যাগিংয়ের বিরুদ্ধে জিরো টলারেন্স ঘোষণা জবির

১২

উগান্ডায় বন্দি কন্যাকে মুক্ত করতে জাতিসংঘে গেলেন ভারতীয় ধনকুবের

১৩

কথা স্পষ্ট, দলের নিয়ম ভঙ্গ করলেই ব্যবস্থা : নয়ন

১৪

এবার ভয়ংকর সেই আয়নাঘর নিয়ে নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদন

১৫

দ্রব্যমূল্যের অসহনীয় উচ্চ মূল্যে খেলাফত মজলিসের ক্ষোভ প্রকাশ

১৬

বার্সায় ইয়ামাল মেসি, ক্রুইফের মতো হবেন

১৭

নিরপরাধী নয় অপরাধীকে আইনের আওতায় আনা হবে : এসএম জিলানী

১৮

সরকারি পদক্ষেপে ডিমের দাম হালিতে কমেছে ১০ টাকা

১৯

লেবাননের হামলায় ইসরায়েলের ৩১ সেনা আহত

২০
X