বিদায়ী জুলাই মাসে সড়কে মৃত্যু নিয়ে পৃথক পৃথকভাবে প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে বেসরকারি দুই সংগঠন। বৃহস্পতিবার (১৫ আগস্ট) প্রকাশিত প্রতিবেদনে যাত্রী কল্যাণ সমিতির হিসাবে উল্লিখিত মাসে ৩৩৬ সড়ক দুর্ঘটনায় ৩৭২ জনের প্রাণ গেছে। আহত হয়েছেন ৫৪৩।
বাংলাদেশ রোড সেফটি ফাউন্ডেশন বলছে, মাসজুড়ে ৪৫২টি দুর্ঘটনায় নিহত ৪৮৭ জন এবং আহত ৬৭৯ জন। এরমধ্যে ১৭৭টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় নিহত ১৫৬ জন, যা মোট নিহতের ৩২ দশমিক ০৩ শতাংশ। মোটরসাইকেল দুর্ঘটনার হার ৩৯ দশমিক ১৫ শতাংশ। সব মিলিয়ে দুই সংগঠনের পক্ষ থেকে সড়কের দুর্ঘটনা ও মৃত্যুর সংখ্যার চিত্র ভিন্ন ভিন্ন।
দুর্ঘটনার কারণ বিশ্লেষণে বলা হয়েছে, পেশাগত সুযোগ-সুবিধা বিশেষ করে, নিয়োগপত্র, বেতন ও কর্মঘণ্টা নির্দিষ্ট না থাকায় বাস এবং পণ্যবাহী যানবাহনের অধিকাংশ চালক শারীরিক ও মানসিকভাবে অসুস্থ। তাদের মধ্যে জীবনবোধ ঠিকমতো কাজ করে না। পণ্যবাহী যানবাহন চালকদের মধ্যে এই প্রবণতা প্রকট। তারা সবসময় অস্বাভাবিক আচরণ করেন এবং বেপরোয়াভাবে যানবাহন চালান। ফলে দুর্ঘটনায় আক্রান্ত হন। পরিবহন চালকদের পেশাগত সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত না করলে সড়ক দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণ সম্ভব নয়। মোটকথা, সড়ক দুর্ঘটনা রোধ করতে হলে টেকসই সড়ক পরিবহন কৌশল প্রণয়নের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে প্রকাশিত প্রতিবেদনে।
যাত্রী কল্যাণ সমিতির পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, সড়ক, রেল ও নৌ-পথে সর্বমোট ৩৭৪ টি দুর্ঘটনায় ৪১৬ জন নিহত এবং ৫৬১ জন আহত হয়েছে। এই সময়ে ১০৯ টি মোটরসাইকেল দুর্ঘটনায় ১২১ জন নিহত, ৮১ জন আহত হয়েছে। যা মোট দুর্ঘটনার ৩২ দশমিক ৪৪ শতাংশ, নিহতের ৩২ দশমিক ৫২ শতাংশ ও আহতের ১৪ দশমিক ৯১ শতাংশ। এই মাসে সবচেয়ে বেশি সড়ক দুর্ঘটনা হয়েছে ঢাকা বিভাগে- ৮৭ টি সড়ক দুর্ঘটনায় ৯২ জন নিহত ও ১৩৩ জন আহত হয়েছেন। বৃহস্পতিবার সংগঠনের মহাসচিব মো. মোজাম্মেল হক চৌধুরী স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, বৈষম্যবিরোধী শিক্ষাথীদের আন্দোলনে সারাদেশে যান চলাচল বন্ধ থাকায় ১৮ জুলাই থেকে ২৪ জুলাই পর্যন্ত সড়ক দুর্ঘটনাসংক্রান্ত সংবাদ গণমাধ্যমে তেমন একটি আসেনি। সেই কারনে বিদায়ী জুলাই মাসে সড়ক দুর্ঘটনা ও হতাহতের তথ্য প্রতিবেদনে অনেক কম এসেছে।
দুর্ঘটনার ধরন বিশ্লেষণে দেখা যায়, এ মাসে সংগঠিত মোট দুর্ঘটনার ৩৬ দশমিক ৬০ শতাংশ জাতীয় মহাসড়কে, ২৬ দশমিক ৪৮ শতাংশ আঞ্চলিক মহাসড়কে, ৩০ দশমিক ৯৫ শতাংশ ফিডার রোডে সংঘটিত হয়েছে। এছাড়াও সারা দেশে সংঘটিত মোট দুর্ঘটনার সাড়ে ৫ ভাগ ঢাকা মহানগরীতে হয়েছে।
যাত্রী অধিকার আদায়ে কাজ করা সামাজিক এই সংগঠনটি বলছে, গত মাসে দুর্ঘটনা ঘটেছে মূলত ৬ কারণে। দুর্ঘটনা প্রতিরোধে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়েছে।
রোড সেফটি ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক সাইদুর রহমান স্বাক্ষরিত প্রতিবেদনে বলা হয়, দুর্ঘটনাসমূহের ১০৬টি অর্থাৎ ২৩ দশমিক ৪৫ ভাগ মুখোমুখি সংঘর্ষ, ১৯১টি অর্থাৎ ৪২ দশমিক ২৫ ভাগ নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে, ১১৬টি ২৫ দশমিক ৬৬ ভাগ পথচারীকে চাপা/ধাক্কা দেওয়ায় ঘটেছে। দুর্ঘটনায় সম্পৃক্ত যানবাহনের সংখ্যা ৮০৪টি। এরমধ্যে বাস ৮৬, ট্রাক ১৩৫, কাভার্ডভ্যান ২৮, পিকআপ ২১, মোটরসাইকেল ১৮৩, থ্রি-হুইলার ১৮৯টি। দুর্ঘটনার ১০টি কারণ উল্লেখ করে প্রতিবেদনে দুর্ঘটনা নিয়ন্ত্রণে ১০টি সুপারিশ তুলে ধরা হয়।
সাইদুর রহমান বলেন, জুন মাসে সড়ক দুর্ঘটনায় ৬৪৪ জন নিহত হয়েছিল। প্রতিদিন গড়ে নিহত হয় ২১ দশমিক ৪৬ জন। জুলাই মাসে প্রতিদিন গড়ে নিহত হয়েছে ১৫ দশমিক ৭০ জন। এই হিসাবে জুলাই মাসে প্রাণহানি কমেছে ২৬ দশমিক ৮৪ ভাগ। বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে জুলাই মাসের বেশ কিছুদিন যানবাহন বন্ধ ছিল। মানুষ স্বাভাবিকভাবে যাতায়াত করেনি। সেজন্য দুর্ঘটনা এবং মৃত্যুহার উভয়ই কম হয়েছে। এটা কোনোভাবেই উন্নতির সূচক নয়।
অধিকাংশ দুর্ঘটনা ঘটছে অতিরিক্ত গতির কারণে যানবাহন নিয়ন্ত্রণ হারিয়ে একথা উল্লেখ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, এই গতি নিয়ন্ত্রণে প্রযুক্তির মাধ্যমে নজরদারী এবং চালকদের মোটিভেশনাল প্রশিক্ষণ দরকার। বেপরোয়া যানবাহন এবং পথচারীদের অসচেতনতার কারণে পথচারী নিহতের ঘটনা বাড়ছে। তাই, সরকারি উদ্যোগে গণমাধ্যম এবং সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে জীবনমুখি সচেতনতামূলক প্রচারণা চালাতে হবে।
মন্তব্য করুন