কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০৬:২৬ পিএম
আপডেট : ১৪ আগস্ট ২০২৪, ০৬:৪৩ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মাওলানা সাঈদীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ

মওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ছবি : সংগৃহীত।
মওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। ছবি : সংগৃহীত।

বিশ্ববরেণ্য আলেমে দ্বীন, খ্যাতিসম্পন্ন ইসলামী চিন্তাবিদ ও বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর সাবেক নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী আজ বুধবার (১৪ আগস্ট)। ২০২৩ সালে আজকের এই দিনে রাত ৮টা ৪০ মিনিটে রাজধানীর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয় (বিএসএসএমইউ) হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মৃত্যুবরণ করেন।

গত বছরের এ দিনে মাওলানা সাঈদীর ছেলে মাসুদ সাঈদী ফেসবুক স্ট্যটাসে বলেন, ‘ইন্নালিল্লাহি ওয়া ইন্না ইলাইহি রাজিউন, কোরআনের পাখি ৮টা ৪০ মিনিটে দুনিয়ার সফর শেষ করেছেন।’

এর আগে এক স্ট্যাটাসে তিনি বলেন, ‘আল্লাহ রহম করার মালিক। আমরা আব্বার শারীরিক অবস্থার অবনতির খবর পাচ্ছি। হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ এবং প্রশাসন নিষ্ঠুর আচরণ করছে। তারা আমাদের কোনো তথ্যতো দিচ্ছেই না, আমাদের এক রকম অসহায় করে রেখেছে। তারা কিছু একটা লুকাচ্ছে আমাদের কাছ থেকে। আমরা আব্বার আবারো হার্ট অ্যাটাকের খবর পাচ্ছি। আল্লাহ, দয়া করো তুমি। আল্লামা সাঈদীকে ভিক্ষা দাও।’

এর আগে গত বছরের ১৩ আগস্ট বিকেলে বুকের ব্যথায় অসুস্থ হয়ে পড়লে মাওলানা সাঈদীকে অ্যাম্বুলেন্সে করে কাশিমপুর কারাগার থেকে গাজীপুরের শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নেওয়া হয়। পরে সেখান থেকে তাকে বিএসএসএমইউতে পাঠানো হয়।

কারা কর্তৃপক্ষ সূত্রে জানা গেছে, গাজীপুরের কাশিমপুর কেন্দ্রীয় কারাগার পার্ট-১-এ বন্দি ছিলেন দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। সেখানে থাকা অবস্থায় ১১ আগস্ট বিকেল ৫টার দিকে হঠাৎ করে অসুস্থ হয়ে পড়েন তিনি। এ সময় বুকে ব্যথা অনুভব করছিলেন জামায়াতের এ নেতা। এরপরই তাকে হাসপাতালে নেওয়া হয়।

এরপর ১৫ আগস্ট ভোর ৫টা ৪০ মিনিটের দিকে লাশবাহী ফ্রিজিং গাড়িতে করে মাওলানা সাঈদীর লাশ পিরোজপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়। এ সময় লাশবাহী গাড়িকে ঘিরে পুলিশের কড়া নিরাপত্তা রাখা হয়। পুলিশি পাহারায় এক দফা ফ্রিজিং গাড়ি পরিবর্তন করে তাকে পিরোজপুরের উদ্দেশে নিয়ে যাওয়া হয়।

পিরোজপুরে দাফন :

দুই দফা নামাযে জানাজা শেষে ছেলের কবরের পাশে চিরনিদ্রায় শায়িত হন মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী। নিজের গড়া প্রতিষ্ঠান মাওলানা সাঈদী ফাউন্ডেশনের বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে দাফন করা হয় তাকে। সাঈদী ফাউন্ডেশনে অনুষ্ঠিত তার প্রথম নামাজে জানাজায় ইমামতি করেন জামায়াতে ইসলামীর তৎকালীন ভারপ্রাপ্ত আমির ও সাবেক এমপি অধ্যাপক মুজিবুর রহমান। তার দ্বিতীয় ছেলে শামীম বিন সাঈদীর ইমামতিতে দ্বিতীয় জানাজা অনুষ্ঠিত হয় এবং দেশে বিদেশে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। জানাজা শেষে তাকে নিজের প্রতিষ্ঠিত সাঈদী ফাউন্ডেশনের বায়তুল হামদ জামে মসজিদের পাশে দাফন করা হয়। এখানেই তার ছোট ভাই হুমায়ুন কবীর সাঈদী এবং জ্যেষ্ঠ পুত্র মাওলানা রাফিক বিন সাঈদীর কবর রয়েছে।

যে মামলায় কারাগারে ছিলেন মাওলানা সাঈদী

২০১৮ সালের ১৭ ফেব্রুয়ারি দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীকে আমৃত্যু কারাদণ্ডের আদেশ দেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। এর আগে, ২০১০ সালের ২৯ জুন ধর্মীয় অনুভূতিতে আঘাত দেওয়ার অভিযোগে গ্রেপ্তার হন দেলাওয়ার হোসেন সাঈদী। পরে একই বছরের ২ আগস্ট মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলায় তাকে গ্রেপ্তার দেখানো হয়।

সংক্ষিপ্ত জীবনী

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী ১৯৪০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি সুবহে সাদিকের সময় পিরোজপুর জেলার জিয়ানগর উপজেলার সাঈদখালী গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন। তার পিতা মাওলানা ইউসুফ সাঈদী ইসলামী চিন্তাবিদ ও বক্তা ছিলেন। ‘সাঈদী’ তার পারিবারিক উপাধি। ১৯৫৭ সালে দাখিল পাসের সার্টিফিকেটে তার নাম ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’। সেখানে তার পিতার নামেও ‘সাঈদী’ রয়েছে। এ ছাড়া ১৯৬৪ সালে যশোরের একটি তাফসীর মাহফিলের লিফলেটে নাম রয়েছে ‘দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী’।

মাওলানা সাঈদীর পিতা ইউসুফ সাঈদী স্বনামধন্য ইসলামী পণ্ডিত বা আলেম ছিলেন। মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর মায়ের নাম গুলনাহার বেগম। তার চার ছেলে হলেন মরহুম রফিক সাঈদী, শামীম সাঈদী, মাসুদ সাঈদী ও নাসিম সাঈদী।

মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী পিতার প্রতিষ্ঠিত মাদ্রাসায় প্রাথমিক শিক্ষা জীবন সমাপ্ত করেন। পরে তিনি খুলনা আলিয়া মাদ্রাসায় কিছুদিন এবং পরে ১৯৬২ সালে ছারছিনা আলিয়া মাদ্রাসা থেকে কামিল পাস করেন। কামিল পাস করার পর বিভিন্ন ভাষা, ধর্ম, বিজ্ঞান, রাজনীতি, অর্থনীতি, পররাষ্ট্র নীতি, মনোবিজ্ঞান ও বিভিন্ন তত্তের উপর দীর্ঘ ৫ বছর অধ্যয়ন করেন। জামায়াতে ইসলামীতে যোগদান

১৯৭৯ সালে সাধারণ সমর্থক হিসেবে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদী বাংলাদেশ জামায়াত-ই-ইসলামীতে যোগদান করেন। ১৯৮৯ সালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর মজলিসে শূরার সদস্য হিসেবে নির্বাচিত হন। সর্বশেষ তিনি বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমিরের দায়িত্ব পালন করেন।

রচনা

মাওলানা সাঈদী পবিত্র কোরআনের তাফসির করেছেন। তার এ তাফসির ‘তাফসিরে সাঈদী’ নামে পরিচিত। ইতোমধ্যেই এ তাফসিরের ৫ খণ্ড প্রকাশিত হয়েছে। এছাড়া তাফসীরের বাকি কাজ চলমান রয়েছে। তিনি ৫৮৪ পৃষ্ঠায় মহানবী হযরত মোহাম্মাদ (সা.) এর জীবনীমূলক গ্রন্থ ‘সীরাতে সাইয়্যেদুল মুরসালিন’ রচনা করেছেন। এ ছাড়াও ফিকহুল হাদিস, কুরআন এবং বিজ্ঞান, ইসলামে নারীর অধিকার, ইসলামে শ্রমিকের অধিকার, ইসলামের রাজনৈতিক দৃষ্টি ভঙ্গি, সন্ত্রাস ও জঙ্গিবাদ দমনে ইসলামসহ নানা বিষয়ে এ পর্যন্ত তার ৭৭টি গ্রন্থ প্রকাশিত হয়েছে। আমেরিকা ও লন্ডন থেকে তার ৪টি বই ইংরেজি ভাষায় প্রকাশিত হয়েছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

বৈরুত বিমানবন্দরের পাশেই ইসরায়েলি তাণ্ডব

সিলেটে রায়হান হত্যা মামলায় ২ যুবলীগ নেতা গ্রেপ্তার

৫ অক্টোবর : কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

রোহিঙ্গা সংকট একটি তাজা টাইম বোমা : ড. ইউনূস

বন্যার পানিতে মায়ের লাশের সঙ্গে ভেসে এল শিশু

লেবাননের যোদ্ধাদের সঙ্গে সংঘর্ষ, পিছু হঠল ইসরায়েলি বাহিনী

সাবেক রাষ্ট্রপতি বদরুদ্দোজা চৌধুরীর জানাজা কখন-কোথায়?

আজ প্রধান উপদেষ্টার সঙ্গে আলোচনায় বসবে বিএনপি

সকালের মধ্যে দেশের ১৮ অঞ্চলে ঝড়ের আভাস

৫ অক্টোবর : নামাজের সময়সূচি

১০

আজও কি দিনভর সারাদেশে বৃষ্টি হতে পারে?

১১

শনিবার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

১২

বিদ্যালয়ে কোনোরকম উচ্ছৃঙ্খলতা ছিল না

১৩

নারায়ণগঞ্জে বিপুল পরিমাণ ভারতীয় কাপড় জব্দ

১৪

ইদানীং শিক্ষকদের এক ধরনের হেয় করার প্রবণতা তৈরি হয়েছে

১৫

মানুষ হয়ে ওঠার শিক্ষা খুব জরুরি

১৬

কক্সবাজার সড়ক দুর্ঘটনায় ছাত্রদল নেতা নিহত

১৭

শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের মধ্যে যে বন্ধন সেটি ছিন্ন হয়ে গেছে

১৮

হত্যা মামলায় রসিকের সাবেক কাউন্সিলর মিলন গ্রেপ্তার

১৯

শিক্ষকদের শিক্ষাবাণিজ্য থেকে বেরিয়ে আসতে হবে

২০
X