সারা দেশে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা চেয়ে মিছিলে স্লোগানে উত্তাল ছিল রাজধানীর শাহবাগ।
রোববার (১১ আগস্ট) দুপুরের পর থেকেই রাজধানীর বিভিন্ন এলাকা থেকে প্রজন্ম চত্বরে এসে জড়ো হন হাজারো মানুষ।
তাদের সবার দাবি একটাই, সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। এ দেশ, মাটি, জল আমার। মৃত্যু হবে, রক্ত দেব তবুও আমরা দেশ ছাড়ব না বলে শপথ নেন সবাই। পাশাপাশি সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ওপর হামলাকারীদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি, ক্ষতিগ্রস্তদের আর্থিক ক্ষতিপূরণ দেওয়াসহ সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানানো হয়েছে।
অনতিবিলম্বে সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধ ও হামলাকারীদের চিহ্নিত করে গ্রেপ্তার, বিচার ও হামলায় ক্ষতিগ্রস্তদের ক্ষতিপূরণ প্রদান এবং বাস্তুহারাদের জায়গাজমি ফিরিয়ে দিতে সরকারী পদক্ষেপ গ্রহণের দাবিতে রাজধানীসহ সারা দেশে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিলের ডাক দেয় তিন সংগঠন।
এগুলোর মধ্যে রয়েছে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদ, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদ ও সংখ্যালঘু ঐক্য মোর্চাভুক্ত সংগঠনগুলো। ঢাকার পাশাপাশি চট্টগ্রাম, সিলেট, ময়মনসিংহ, নরসিংদী, কুমিল্লা, ব্রহ্মণবাড়িয়া, সুনামগঞ্জ, ফরিদপুর, বরিশালসহ বিভিন্ন জেলা উপজেলায় কর্মসূচি পালিত হয়েছে।
সংখ্যালঘুদের ওপর হামলাকারী সাম্প্রদায়িক গোষ্ঠীর বিরুদ্ধে সবাইকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানিয়ে রাজধানীতে আয়োজিত সমাবেশে নেতারা বলেন, গত ৫ আগস্ট থেকে এখন পর্যন্ত সারা দেশে হিন্দু, বৌদ্ধ ও খ্রিস্টান সম্প্রদায়ের মানুষ আক্রান্ত হচ্ছে। অথচ উপযুক্ত প্রতিকার মিলছে না। সরকার ও সেনাবাহিনীর উচ্চপর্যায় থেকে হামলা বন্ধে কঠোর হুঁশিয়ারি উচ্চারণ করলেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি। এই ঘটনা আমাদের আরও বেশি উদ্বিগ্ন করে তুলছে। চলমান পরিস্থিতিতে ভবিষ্যতে সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তার স্বার্থে বিশেষ অধ্যাদেশের মাধ্যমে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়নের দাবি জানান তারা।
চলমান সময়কে জাতির ক্রান্তিকাল উল্লেখ করে সমাবেশে বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সভাপতি বাসুদেব ধর বলেন, গত ৫ মে থেকে দেশের হিন্দুরা আক্রান্ত হচ্ছে। গ্রাম-গ্রামান্তরসহ সবখানে আর্তনাদ প্রতিধ্বনী হচ্ছে। আমরা আক্রান্ত। আমরা বিচার চাই। মা-জমি-মন্দির-ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, রাষ্ট্রপতি, সেনাপ্রধান সাম্প্রদায়িক হামলা বন্ধের আহ্বান জানালেও পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়নি।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়কে বাঁচানোর আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, আমাদের বাঁচাতে এগিয়ে আসুন। মড়ব, রক্ত দেব তবুও এই মাটি ছেড়ে যাব না। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের শপথ অনুষ্ঠানে সব ধর্মের ধর্মগ্রন্থ পাঠ না করার সমালোচনা করেন বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কারণে নতুন সরকার পেলেও একটি চরম বৈষম্যের মধ্য দিয়ে সরকারের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু আমরা দেখলাম। এটি ভুল কি না জানি না।
বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের অন্যতম সভাপতি নির্মল রোজারিও বলেন, সারা দেশে চলমান সাম্প্রদায়িক সন্ত্রাসের প্রতিবাদ জানাতে আমরা সমাবেত হয়েছি। সব হামলা, হত্যার বিচার চাই। সব ঘটনার সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ তদন্তের দাবি জানিয়ে তিনি বলেন, সংখ্যালঘু নির্যাতনের সঙ্গে যুক্ত অপরাধীদের শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে।
এই ইস্যুতে কোনো আপস নয় একথা উল্লেখ করে তিনি বলেন, অর্ডিনেন্সের মাধ্যমে সংখ্যালঘু সুক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে। এই সরকারের কাছ থেকে সুংখ্যালঘুদের সুরক্ষায় একটি ভালো কাজ চাই, তা হলো সংখ্যালঘু সুক্ষা আইন প্রণয়ন।
তিনি আরও বলেন, নির্যাতনের মুখে সংখ্যালঘুরা দেশ ছাড়লে পথ হারাবে বাংলাদেশ।
অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ বিনির্মাণের আহ্বান জানিয়ে বাংলাদেশ হিন্দু বৌদ্ধ খ্রিস্টান ঐক্য পরিষদের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মণীন্দ্র কুমার নাথ বলেন, সব অপরাধীর বিচার করতে হবে। মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশ চাই।
কর্মসূচিতে উপস্থিত ছিলেন, বাংলাদেশ পূজা উদযাপন পরিষদের সাধারণ সম্পাদক সন্তোষ শর্মা, ঐক্য পরিষদের প্রেসিডিয়াম সদস্য কাজল দেবনাথ, তাপস পাল প্রমুখ।
মন্তব্য করুন