তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির আহ্বায়ক প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ আর নেই। আজ শুক্রবার (৯ আগস্ট) বাংলাদেশ সময় সকাল ৭টায় যুক্তরাষ্ট্রে চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি মারা গেছেন (ইন্নালিল্লাহি... রাজিউন)। মৃত্যুকালে তার বয়স হয়েছিল ৯৩ বছর।
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টির (সিপিবি) সাধারণ সম্পাদক রুহিন হোসেইন প্রিন্স মুহাম্মদ শহীদুল্লাহর মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অনন্য-লড়াকু প্রকৌশলী ছিলেন শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ। তিনি ছিলেন তেল-গ্যাস-খনিজসম্পদ ও বিদ্যুৎ, বন্দর রক্ষা জাতীয় কমিটির প্রাণভোমরা।
প্রকৌশলী শেখ মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ছিলেন জাতীয় সম্পদ রক্ষার আন্দোলনে নিবেদিতপ্রাণ। তার নেতৃত্বে আড়াই দশকেরও বেশি সময় ধরে চলা আন্দোলনের কারণে ভারতে গ্যাস রপ্তানির উদ্যোগ বন্ধ হয়েছে। বিদেশিদের গ্যাস ব্লক ইজারা দেওয়াসহ খনিজ সম্পদ উত্তোলনে জাতীয় স্বার্থ সংরক্ষণের আওয়াজ উঠেছে। বিদেশি কোম্পানির কাছে চট্টগ্রাম বন্দর তুলে দেওয়ার প্রচেষ্টা নস্যাৎ হয়েছে।
মুহাম্মদ শহীদুল্লাহ ১৯৩১ সালের ৩১ জুলাই খুলনার দৌলতপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন । তার বাবা শেখ মুহাম্মদ হানিফ দৌলতপুর মুহসীন উচ্চ ইংরেজি বিদ্যালয়ে শিক্ষকতা করতেন। মায়ের নাম মরিয়ম খাতুন।
তিনি দৌলতপুর মুহসীন উচ্চ বিদ্যালয় থেকে ১৯৪৬ সালে কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধীনে ম্যাট্রিকুলেশন পরীক্ষায় আরবিতে লেটারসহ প্রথম শ্রেণিতে উত্তীর্ণ হন। ১৯৪৮ সালে তৎকালীন ব্রজলাল একাডেমি (বর্তমান বিএল কলেজ) থেকে বিজ্ঞান বিভাগে ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় পূর্ব পাকিস্তান বোর্ডে সম্মিলিত মেধা তালিকায় ১৯তম স্থান অধিকার করেন।
১৯৫০ সালে একই শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান থেকে ডিস্টিংশনসহ বিএসসি পাস কোর্সে উত্তীর্ণ হন তিনি। এই পরীক্ষায় তিনি সমগ্র পূর্ব পাকিস্তান বোর্ডের মধ্যে দ্বিতীয় স্থান লাভ করেন। একই বছর ভর্তি পরীক্ষায় প্রথম হয়ে আহসান উল্লাহ ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে (বর্তমান বুয়েট) ভর্তি হন। সেখান থেকে ১৯৫৪ সালে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে ৭৯ শতাংশ নম্বর পেয়ে প্রথম শ্রেণিতে প্রথম হয়ে গোল্ড মেডেলিস্ট হিসেবে স্নাতক ডিগ্রি অর্জন করেন।
পেশাগত জীবনে তিনি ছিলেন বাংলাদেশের শ্রেষ্ঠ প্রকৌশলীদের একজন। রাজধানীসহ সারা দেশে গুরুত্বপূর্ণ অনেক সরকারি ও বেসরকারি স্থাপনার স্ট্রাকচারাল স্ট্রেন্থ গড়ে উঠেছে প্রকৌশলী শহীদুল্লাহর মেধা ও মননে। একটা বড় সময় ধরে দেশের যেকোনো জায়গায় যেকোনো ভবনে, যেকোনো বড় স্থাপনায় ফাটল ধরলে, বিপন্ন হলে তার প্রকৌশলগত সুরক্ষায় শেষ ভরসার দেশি মানুষ ছিলেন প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ।
ঢাকা স্টেডিয়ামসহ দেশের অনেক ছোট-বড় স্থাপনায় তার কৌশল প্রয়োগ করেছেন সফলতার সঙ্গেই।
তেল-গ্যাস খনিজসম্পদ রক্ষার আন্দোলনে শেখ মুহম্মদ শহীদুল্লাহর অসাধারণ নেতৃত্ব ও অপরিসীম ত্যাগ বিভক্ত বামপন্থিদের ঐক্যবদ্ধ রাখতে সক্ষম হয়েছে। তিনি নিজে কখনো কোনো রাজনৈতিক দলের প্রত্যক্ষ সদস্য ছিলেন না। কিন্তু বামপন্থি রাজনৈতিক দলগুলোর প্রতি সহানুভূতিশীল ছিলেন। এ সহানুভূতি শুধু দার্শনিক, আদর্শিক, বুদ্ধিবৃত্তিক নয়, আর্থিকও বটে। প্রতি মাসে তিনি নিজে যা আয় করতেন, তার ৩ ভাগের ২ ভাগ এ কাজে ব্যয় করেছেন। বহু বছর ধরেই তিনি সমাজ পরিবর্তনের কাজে নিবেদিত রাজনৈতিক ও সামাজিক-সাংস্কৃতিক দল, ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠানগুলোকে আর্থিক প্রণোদনা জুগিয়েছেন।
প্রকৌশলী শহীদুল্লাহ আমাদের কালের নায়ক। আমাদের জন্য এক অনন্য প্রেরণা। জনস্বার্থে তার লড়াই, সততা, পরিশ্রম, মেধা, পেশাগত উৎকর্ষতা বহুকাল এই ভূ-খণ্ডের চিন্তাশীল, সমাজমনস্ক মানুষকে উৎসাহ ও প্রেরণা জোগাবে।