সারা দেশে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে সাংবাদিকদের ওপর বর্বরোচিত হামলা এবং শিক্ষার্থী-সাংবাদিক-সাধারণ জনতার বিপুল প্রাণহানি, গণগ্রেপ্তার, হয়রানি ও নাগরিকদের ব্যক্তিগত গোপনীয়তা লঙ্ঘনের তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়েছে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সাংবাদিক সমিতি (ডুজা)। একইসঙ্গে বিভিন্ন উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠানের ভেতরে প্রবেশ করে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বহিরাগতদের মাধ্যমে শিক্ষার্থীদের ওপর হামলায় জড়িতদের চিহ্নিত করে অবিলম্বে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের জোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনটি বলছে, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে যৌক্তিক দাবি তা আরও আগেই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের সুযোগ ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটি যথাসময়ে করতে ব্যর্থ হয়েছে।
শুক্রবার (০২ আগস্ট) ডুজার সভাপতি আল সাদী ভূঁইয়া ও সাধারণ সম্পাদক মহিউদ্দিন মুজাহিদ মাহি গণমাধ্যমে পাঠানো এক যৌথ বিবৃতিতে এই দাবি জানান।
নেতারা বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনে পেশাগত দায়িত্ব পালনকালে হামলার শিকার হয়ে এখন পর্যন্ত চারজন সাংবাদিক প্রাণ হারিয়েছেন। তারা হলেন- ঢাকা টাইমসের জ্যেষ্ঠ প্রতিবেদক হাসান মেহেদী, দৈনিক নয়া দিগন্তের সিলেট ব্যুরো প্রধান এটিএম তুরাব, ফ্রিল্যান্স ফটোসাংবাদিক তাহির জামান প্রিয় এবং দৈনিক ভোরের আওয়াজ পত্রিকার গাজীপুরের গাছা থানা প্রতিনিধি মো. শাকিল হোসেন। এছাড়া পুলিশের ছোড়া ছররা গুলিতে ৩৫ এবং গুলি ও হামলার শিকার হয়ে ২৩০ জন গণমাধ্যমকর্মী আহত হয়েছেন। যাদের মধ্যে ৬৮ জনের অবস্থা গুরুতর বলে আমরা বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমে জানতে পেরেছি। বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত ক্যাম্পাস সাংবাদিকরাও হামলার শিকার হয়েছেন। এছাড়া কয়েকজন সাংবাদিককে গ্রেপ্তারের ঘটনাও ঘটেছে। আমরা গভীর উদ্বেগের সঙ্গে লক্ষ্য করছি যে, প্রতিনিয়ত দেশব্যাপী সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনা বৃদ্ধি পাচ্ছে। সাংবাদিকরা সত্য প্রকাশের মাধ্যমে দেশ, সমাজ ও গণমানুষের কল্যাণে বস্তুনিষ্ঠতার সঙ্গে কাজ করে থাকেন। কিন্তু তাদের ওপর বারবার হামলার মাধ্যমে গণমাধ্যমের কণ্ঠরোধ করা হচ্ছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক এবং সংবিধানস্বীকৃত গণমাধ্যমের স্বাধীনতার ধারণার পরিপন্থি।
নেতারা আরও বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে সারা দেশে ২৬৬ জন নিহত হয়েছে বলে মানবাধিকার সংস্কৃতি ফাউন্ডেশনের (এমএসএফ) গত ৩১ জুলাই প্রকাশিত প্রতিবেদনে উঠে এসেছে। এতে উল্লেখ করা হয়, এ পর্যন্ত আহত হয়েছেন অন্তত ৭ হাজার ৭৩০ জন। এছাড়া, ৭৯৮টি মামলা হয়েছে। যার মধ্যে ২০০ মামলায় ২ লাখ ১৩ হাজারের বেশি আসামি করা হয়েছে এবং ১০ হাজার ৩৭২ জনেরও বেশি লোককে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। পাশাপাশি ‘শিক্ষার্থী’ পরিচয় পেলেই হয়রানি, বাড়ি বাড়ি গিয়ে তল্লাশি এবং সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়াই গণগ্রেপ্তারের অভিযোগ পাওয়া যাচ্ছে। এমনকি শিক্ষার্থীদের অভিভাবকদেরও বিভিন্নভাবে হেনস্থা করা হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠছে। এছাড়া ঢাকা, জাহাঙ্গীরনগর, রাজশাহী, কুমিল্লা, বরিশাল, বেগম রোকেয়াসহ সরকারি-বেসরকারি বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ও বহিরাগত কর্তৃক শিক্ষার্থীদের ওপর নির্বিচারে লাঠিচার্জ-গুলি এবং ন্যক্কারজনক হামলার ঘটনা ঘটেছে। এমনকি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন ক্যাম্পাসে নারী শিক্ষার্থীদের ওপর ঘৃণিত ও নজিরবিহীন হামলা হয়েছে। এসব ঘটনায় শিক্ষক-শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে ও শিক্ষার পরিবেশ বজায় রাখতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর প্রশাসন চরম ব্যর্থতার পরিচয় দিয়েছে। আমরা মনে করি, কোটা সংস্কার নিয়ে শিক্ষার্থীদের যে যৌক্তিক দাবি তা আরও আগেই শান্তিপূর্ণভাবে সমাধানের সুযোগ ছিল। কিন্তু সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ সেটি যথাসময়ে করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সাংবাদিকদের ওপর হামলার ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করে ডুজার নেতারা বলেন, সারা দেশে নিহত সাংবাদিকদের ক্ষতিপূরণ, আহতদের সুচিকিৎসা এবং গ্রেপ্তারদের অতি দ্রুত মুক্তি দিতে হবে ও মামলা প্রত্যাহার করতে হবে। তাদের ওপর হামলার ঘটনায় জড়িতদের চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। পাশাপাশি, আন্দোলন ঘিরে সব হামলা ও আহত-নিহতের ঘটনায় নিরপেক্ষ তদন্ত করে জড়িতদের শাস্তি প্রদানপূর্বক শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ নিশ্চিত করে সব শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান খুলে দিতে হবে।
মন্তব্য করুন