কোটা সংস্কার আন্দোলনকে কেন্দ্র করে চলমান ঘটনাপ্রবাহ নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা শুনতে চেয়েছে রাষ্ট্রদূতরা। তবে সরকার আন্দোলন ঘিরে মৃত্যুর তদন্ত ও বিচার নিয়ে কূটনীতিকদের আশ্বস্ত করেছে। সে সঙ্গে সহিংসতায় হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশে গঠিত তদন্ত কমিটিকে জাতিসংঘ কারিগরি সহায়তা করতে চাইলে আপত্তি নেই সরকারের। তবে আলাদা কোনো তদন্ত কমিটিতে এখনই উৎসাহ নেই বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন।
বৃহস্পতিবার (১ আগস্ট) সন্ধ্যায় রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় কোটা সংস্কার আন্দোলন ঘিরে উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উন্নয়ন অংশীদার রাষ্ট্রের কূটনীতিকদের ব্রিফ শেষে সাংবাদিকদের এসব কথা জানান তিনি। এর আগে বিকেলে চলমান পরিস্থিতি নিয়ে উন্নয়ন অংশীদার রাষ্ট্রের কূটনীতিকদের ব্রিফ করেন পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন। এ সময় প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান উপস্থিত ছিলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘চলমান ঘটনা নিয়ে সরকারের ব্যাখ্যা জানতে অনেক দেশ আগ্রহী ছিল। গ্রেপ্তারের সংখ্যা, অতিরিক্ত বলপ্রয়োগ হচ্ছে কি না, সভা-সমিতি ও সমাবেশের অধিকার হরণ করা হচ্ছে কি না, বাকস্বাধীনতা আছে কি না- এসব বিষয়ে প্রশ্ন রয়েছে কয়েকটি দেশের। বিদেশিদের এখানে বিনিয়োগ আছে। ইন্টারনেট বন্ধ ছিল। এসব নিয়ে তাদের উদ্বেগ রয়েছে।
তিনি বলেন, কূটনীতিকদের আমরা লেটেস্ট তথ্য ও ভিডিও দেখিয়েছি। আমরা জানিয়েছি, হেলিকপ্টার থেকে র্যাব গুলি করেনি। এ ছাড়া আন্দোলনের সময় বিটিভিতে কঠিন পরিস্থিতিতে বিজিবি ও পুলিশের ভূমিকা কী ছিল, সেটাও তুলে ধরেছি। ভিডিওচিত্র দেখানোর পাশাপাশি পেনড্রাইভে করে নানা ঘটনার ভিডিওচিত্র তাদের সরবরাহ করেছি।
পররাষ্ট্রসচিব জানান, কূটনীতিকদের সামনে আমরা আমাদের অবস্থান তুলে ধরেছি। আমরা জানিয়েছি, আন্দোলনে মৃত্যুর ঘটনায় বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিশন কাজ শুরু করে দিয়েছে। কমিশন সুষ্ঠুভাবে প্রতিটি ঘটনার তদন্ত করবে।
তিনি আরও বলেন, কোটা সংস্কার আন্দোলনকে ঘিরে চলা সহিংসতায় হতাহতের ঘটনায় বাংলাদেশে গঠিত তদন্ত কমিটিকে জাতিসংঘ কারিগরি সহায়তা করতে চাইলে আপত্তি নেই সরকারের। তবে আলাদা কোনো তদন্ত কমিটিতে এখনই উৎসাহ নেই।
পররাষ্ট্রসচিব বলেন, ‘সাম্প্রতিক ঘটনা নিয়ে দেশে এবং বিদেশে নানা গুজব ছড়াচ্ছে সেগুলো স্পষ্ট করতে বিদেশি মিশনগুলোর সঙ্গে সম্পৃক্ততা অব্যাহত রাখবে সরকার। আন্দোলনকারীদের কর্মসূচিতে বাধার বিষয়ে তিনি বলেন, যেসব জায়গায় শান্তিপূর্ণ সমাবেশ করছে সেখানে বাধা দেয়া হচ্ছে না।
এসময় চলমান ঘটনায় সরকারের প্রতি বিদেশিদের অনাস্থা নেই বলে জানান প্রধানমন্ত্রীর প্রেস সচিব নাঈমুল ইসলাম খান। তিনি বলেন, ‘আমরা যেকোনো জিনিস নিয়েই কথা বলতে প্রস্তুত। কূটনীতিকদের সঙ্গে আমরা তথ্য শেয়ার করেছি। আমরা ধারাবাহিকভাবে এটা শেয়ার করব। কোটা আন্দোলন নিয়ে কোনো দেশের সঙ্গেই আন্তঃরাষ্ট্রীয় সম্পর্কে প্রভাব ফেলেনি।
মোট ২১টি দেশ- যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ভারত, চীন, সৌদি আরব, জাপান, রাশিয়া, কানাডা, জার্মানি, সুইডেন, কাতার, ডেনমার্ক, সুইজারল্যান্ড, ,ইতালি ,অস্ট্রেলিয়া, ফ্রান্স, নেদারল্যান্ড, ডেনমার্ক , স্পেন , মরোক্ক, নরওয়ের রাষ্ট্রদূতরা এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের রাষ্ট্রদূত ও জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী পররাষ্ট্র সচিবের ব্রিফিংয়ে উপস্থিত ছিলেন।
এর আগে গত ২১ জুলাই কোটা সংস্কার ঘিরে পরিস্থিতি তুলে ধরতে কূটনৈতিকদের ব্রিফিং করেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
মন্তব্য করুন