টানা ১৪ দিন পর আবারও ঘুরতে শুরু করেছে ট্রেনের চাকা। আজ বৃহস্পতিবার থেকে স্বল্প দূরত্বে চলবে যাত্রীবাহী মেইল, লোকাল ও কমিউটার ট্রেন। ঢাকাসহ দেশের পূর্ব ও পশ্চিমাঞ্চলে কারফিউ চলাকালে সীমিত পরিসরে ট্রেন পরিচালনার কথা জানিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ। বেশি দূরত্বে পণ্যবাহী ট্রেন চলাচলে অনুমতি দেওয়া হয়েছে।
কোটা আন্দোলন শুরুর পর সৃষ্ট সহিংসতার পরিপ্রেক্ষিতে পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত ১৮ জুলাই থেকে সারা দেশে ট্রেন চলাচল বন্ধ হয়। অবশেষে ঘুরতে শুরু করেছে ট্রেনের চাকা। তবে আন্তঃনগর ট্রেনের ব্যাপারে এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। মোবাইল ইন্টারনেট সেবা সচল হওয়ায় চলতি সপ্তাহেই এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত আসতে পারে।
মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা গেছে, ১৮ জুলাইয়ের পর সারা দেশে কিছু তেলবাহী ট্রেন বিজিবি নিরাপত্তায় চলাচল করলেও পণ্যবাহী ও যাত্রীবাহী সেবা বন্ধ ছিল। গত মঙ্গলবার রেলমন্ত্রীর সভাপতিত্বে রেল ভবনে অনুষ্ঠিত বৈঠকে থেকে ট্রেন চালানোর ঘোষণা আসে।
ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন সূত্রে জানা গেছে, বৃহস্পতিবার ঢাকা-চট্টগ্রাম পর্যন্ত পাঁচ জোড়া মালবাহী কনটেইনার ট্রেন চলাচল করবে।
কমলাপুর থেকে কয়টি যাত্রীবাহী ট্রেন চলবে এ নিয়ে সন্ধ্যায় বৈঠকে বসেন সংশ্লিষ্ট কর্তাব্যক্তিরা। রাত সাড়ে ৭টার পর রেলওয়ের ঢাকা বিভাগীয় বাণিজ্যিক কর্মকর্তা (ডিসিও) শাহ আলম শিশির কালবেলাকে জানান, সকাল সাতটায় ঢাকা রেলওয়ে স্টেশন থেকে যাত্রীবাহী ট্রেন চলাচল শুরু হবে। প্রথম দিনে তুরাগ, তিতাস ও নারায়ণগঞ্জ কমিটিউটার ট্রেন চলবে। নারায়ণগঞ্জ, জয়দেবপুর ও ভৈরব হয়ে ব্রাক্ষণবাড়িয়া পর্যন্ত এই তিন ট্রেন চলাচল করবে। এর মধ্যে জয়দেবপুর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একটি ট্রেন যাবে ও আসবে। তিন থেকে চারবার নারায়ণগঞ্জ পর্যন্ত ট্রেন চলবে বলেও জানান রেলওয়ের এই কর্মকর্তা। রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ বলছে, আন্দোলনে দেশের বিভিন্ন এলাকায় লাইন ও ট্রেন ঘিরে সহিংসতার ঘটনা ঘটেছে। সব মিলিয়ে ক্ষতি হয়েছে ৫৬ কোটি টাকার বেশি। এ ঘটনার পর গত ২৪ জুলাই থেকে স্বল্প দূরত্বে ট্রেন পরিচালনার সিদ্ধান্ত নেয় রেলওয়ে। শেষ পর্যন্ত নিরাপত্তার কথা ভেবে এই সিদ্ধান্ত থেকে সড়ে আসে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ, ঢাকা-গাজীপুর, ঢাকা- ব্রাহ্মণবাড়িয়া পথের কমিউটার ট্রেনগুলো প্রথম পর্যায়ে চলবে। পর্যায়ক্রমে অন্যান্য রুটের ট্রেন চলাচল বাড়বে। দূরবর্তী যাত্রার মধ্যে ঢাকা থেকে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার মধ্যে চলাচল করবে তিতাস কমিউটার। স্বাভাবিক সময়ে তিতাস ট্রেন দিনে চারবার আসা-যাওয়া করে। বৃহস্পতিবার থেকে একবার আসা-যাওয়া করবে। ঢাকা-নারায়ণগঞ্জ পথে স্বাভাবিক সময়ে ২০ বারের বেশি কমিউটার ট্রেন যাতায়াত করে। শুরুতে সর্বোচ্চ চারবার আসা-যাওয়া করতে পারে বলে রেলের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন।
রেলের পশ্চিমাঞ্চলে (রাজশাহী, রংপুর ও খুলনা বিভাগ) কয়েকটি পথে ট্রেন চলাচল করতে পারে। এর মধ্যে রাজশাহী থেকে চাঁপাইনবাবগঞ্জ এবং লালমনিরহাট থেকে বুড়িমারী পর্যন্ত চলাচল করবে কমিউটার ট্রেন। এ ছাড়া ঢাকা থেকে পদ্মা সেতু হয়ে রাজবাড়ী পর্যন্ত কমিউটার ট্রেন চালুর কথা রয়েছে। এর বাইরে রাজশাহী থেকে রাজবাড়ী ও ফরিদপুরের পথেও লোকাল ট্রেন চলতে পারে। চট্টগ্রাম থেকে দোহাজারি পথে ট্রেন চালানোর পরিকল্পনা আছে রেল কর্তৃপক্ষের।
রেলওয়ে সূত্র জানায়, প্রতিদিন ৪০০টির মতো যাত্রীবাহী ও মালবাহী ট্রেন চলাচল করে। এর মধ্যে ভারত ও বাংলাদেশের মধ্যে চলাচলকারী মৈত্রী, বন্ধন এবং মিতালি এক্সপ্রেসও রয়েছে। আন্তঃদেশীয় ট্রেন চলাচল বন্ধ রয়েছে। ঢাকা থেকে সারা দেশে চলে ৫৬ জোড়া ট্রেন।
মন্তব্য করুন