দেশে সম্প্রতি ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএনের ব্যবহার ব্যাপকভাবে বেড়েছে। গত কয়েক দিনে ভিপিএনের ব্যবহার বেড়েছে পাঁচ হাজার শতাংশেরও বেশি। মূলত সামাজিকমাধ্যম ব্যবহারের জন্য বিকল্প হিসেবে ভিপিএন ব্যবহার করছে। তবে ভিপিএনে অভ্যস্ত হয়ে যাওয়ায় অনেকে এই সফটওয়্যারে কানেকন্ট থেকে বিকাশ বা নগদের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসের অ্যাপে লগইন করার চেষ্টা করছেন। ভিপিএন চালু রেখে মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিস ব্যবহার করা যাবে কিনা তা জানতে চেষ্টা করছেন অনেকে।
ভার্চুয়াল প্রাইভেট নেটওয়ার্ক বা ভিপিএন হলো- পরিচয় গোপন করে ইন্টারনেট ব্যবহার করার একটি মাধ্যম। ভিপিএনের অন্যতম উদ্দেশ্য হচ্ছে ব্যবহারকারীর পরিচয় গোপন রাখা। এর মাধ্যমে ব্যবহারকারীর ইউজারনেম ও পাসওয়ার্ড গোপন রেখেই ইন্টারনেট ব্যবহার করা যায়। কোটা সংস্কার আন্দোলনের পরিপ্রেক্ষিতে গত বুধবার (১৭ জুলাই) সন্ধ্যায় দেশের বিভিন্ন স্থানে মোবাইল ইন্টারনেট সীমিত করা হয়। পরদিন (১৮ জুলাই) মোবাইল ইন্টারনেট বন্ধের বিষয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে জানান ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে অপপ্রচার ও গুজব প্রতিরোধে এমন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল বলে সে সময় তিনি উল্লেখ করেছিলেন। একই দিন সন্ধ্যায় সঞ্চালন লাইনে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় বন্ধ হয়ে যায় ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেটও। ফলে দেশজুড়ে সব ধরনের ইন্টারনেট যোগাযোগব্যবস্থা বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়ে। এমন প্রেক্ষাপটে গত মঙ্গলবার (২৩ জুলাই) রাত থেকে পরীক্ষামূলকভাবে ব্রডব্যান্ড ইন্টারনেট চালু করা হয়। এরপর রোববার (২৮ জুলাই) বিকেল ৩টায় মোবাইলের ফোর-জি সেবা চালু করা হয়। ইন্টারনেট চালু করা হলেও এখনো বন্ধ রয়েছে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক। সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম বন্ধ থাকায় অনেকেই ভিপিএন ব্যবহার করছেন। ভিপিএনের মাধ্যমে ফেসবুক, ইনস্টাগ্রাম, হোয়াটসঅ্যাপ ও টিকটক চালাচ্ছেন। গত কয়েক দিনে বাংলাদেশ থেকে ভিপিএন ব্যবহারের হার পাঁচ হাজার গুণ বেড়েছে।
অনেকে ভিপিএনে যুক্ত থাকা অবস্থায় বিকাশ বা নগদের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসে লগইন করার চেষ্টা করছেন। বিষয়টি নিয়ে বুধবার সকালে কালবেলার পক্ষ থেকে বিকাশ ও নগদ কর্তৃপক্ষের সঙ্গে আলোচনা করা হয়।
জানা যায়, বিকাশ বা নগদের মতো মোবাইল ফিন্যান্সিয়াল সার্ভিসগুলোর যে অ্যাপ ব্যবহার করা হয় তা ভোগৌলিক সীমা নির্ধারণ (জিও লগড) করা রয়েছে। অর্থাৎ এই অ্যাপ আপনার মোবাইলে ইনস্টল করা থাকলে আপনি দেশের বাইরে থেকে লগইন করতে পারবেন না। মোবাইলে যখন ভিপিএন চালু বা কানেক্ট করা হয় তখন মোবাইলের বর্তমান যে আইপি নেটওয়ার্ক আছে তা পরিবর্তন হয়ে বিদেশের কোনো আইপি নেটওয়ার্কে সংযুক্ত হয়ে যায়। ফলে যেসব অ্যাপে ভৌগোলিক সীমা নির্ধারণ করে দেওয়া আছে ওইসব অ্যাপ স্বযংক্রিয়ভাবে বুঝতে পারে যে ব্যবহারকারী বাংলাদেশের বাইরের নেটওয়ার্ক ব্যবহার করছেন। তখন ওই অ্যাপে লগইন করা যাবে না।
যেহেতু বিকাশ বা নগদের মতো অ্যাপগুলো ভৌগোলিক সীমা নির্ধারণ করা রয়েছে ফলে ভিপিএন চালু থাকা অবস্থায় এসব অ্যাপ লগইন করা সম্ভব নয়।
প্রশ্ন উঠতে পারে বাংলাদেশে কি ভিপিএন ব্যবহার করা অবৈধ? এককথায় এর উত্তর হলো- আমাদের দেশে ভিপিএন ব্যবহার করা অবৈধ নয়। দেশে এখনো ভিপিএনের ব্যবহার নিষিদ্ধ করা হয়নি। কিংবা প্রযুক্তিগত কারণে এর ব্যবহার বন্ধ করারও উপায় নেই। সম্প্রতি প্রতিমন্ত্রী জুনাইদ আহমেদ পলক ভিপিএন ব্যবহারে সতর্ক করেছেন। পাশাপাশি এই প্রাইভেট নেটওয়ার্ক টানেল ব্যবহার না করার পরামর্শ দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ভিপিএন থেকে বিরত থাকি। তথ্য সুরক্ষার জন্য বিরত থাকি। ভিপিএন যে দিচ্ছে, সে পুরো তথ্যউপাত্ত পাচ্ছে। ভিপিএন চালু রেখে অনলাইন প্ল্যাটফর্মে আর্থিক লেনদেন করলে, গুরুত্বপূর্ণ সংবেদনশীল তথ্য অন্যের কাছে চলে যেতে পারে।
ভিপিএন নিয়ে নেটওয়ার্ক বিশেষজ্ঞ ও এশিয়া প্যাসিফিক নেটওয়ার্ক ইনফরমেশন সেন্টার-এপিনিকের নির্বাহী কমিটির সদস্য সুমন আহমেদ সাবির জানান, ভিপিএন একটি বৈধ প্রযুক্তি। ভিপিএন ব্যবহার করা হয় নিরাপদে ইন্টারনেট ব্যবহার ও তথ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে।
তিনি আরও জানান, ‘ভিপিএনের মূল উদ্দেশ্য হলো সাইবার জগতে নিরাপত্তা দেওয়া। ভিপিএন সাইবার ঝুঁকি বাড়ায় না বরং কমায়।’ ভিপিএন একটি শক্তিশালী টুল যা ব্যবহারকারীর অনলাইন নিরাপত্তা এবং গোপনীয়তা রক্ষায় সহায়ক। তবে ভিপিএনের ব্যবহারসংক্রান্ত ঝুঁকি সম্পর্কে সচেতন থাকা এবং সঠিক পদক্ষেপ গ্রহণ করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মন্তব্য করুন
আর্কাইভ 
| ২৫ নভেম্বর ২০২৪ 
