কোটাবিরোধী আন্দোলনে লাশের গুজব ছড়িয়ে রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করা হয়েছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে দেশের জনগণ। তাদের বিরুদ্ধে জনগণকে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
বুধবার (২৪ জুলাই) প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে এডিটর্স গিল্ড-এর উদ্যোগে সম্পাদক, হেড অব নিউজ ও সিনিয়র সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময় করেন প্রধানমন্ত্রী। মতবিনিময়কালে সংক্ষিপ্ত বক্তব্যে এসব কথা বলেন তিনি।
ঢাকাসহ সারা দেশে ধ্বংসলীলার চিত্র তুলে ধরে প্রধানমন্ত্রী তার বক্তব্যে বলেন, ছাত্রদের আন্দোলনে সারা দেশের শিবির যোগ দেয়। বিএনপি-জামায়াত, শিবির লাশের গুজব ছড়িয়ে জনগণের রাষ্ট্রীয় সম্পদ নষ্ট করেছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে জনগণ। এখানে তো জনগণকেই রুখে দাঁড়াতে হবে, এই সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে, জঙ্গীবাদের বিরুদ্ধে, জনগণকেই সোচ্চার হতে হবে। কারণ এরা তো কোনো দিনই কোনো দেশে ভালো কিছু করতে পারেনি।
তিনি বলেন, কোনো গালিগালাজ দেশের মানুষের জন্য কাজ করা বন্ধ করতে পারবে না। সমস্ত বাংলাদেশ থেকে শিবির-জামায়াত এরা কিন্তু এসেছে। সাথে সাথে ছাত্রদলের ক্যাডাররাও কিন্তু সক্রিয় ছিল। যতগুলো ঘটনা ঘটেছে এরাও (বিএনপি) কিন্তু সক্রিয় ছিল।
আন্তর্জাতিক ষড়যন্ত্র প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আরেকটা জিনিস খেয়াল করবেন তখনও কিন্তু লাশ পড়েনি। কিন্তু স্টেট ডিপার্টমেন্টের (যুক্তরাষ্ট্রের) বক্তব্যে এসে গেল যে লাশ পড়েছে। তো লাশের খবর তাদের কে দিল? তাহলে লাশ ফেলার নির্দেশটা কে দিয়েছে? এটাও খবর নেওয়া দরকার। এবং তারপরে কিন্তু লাশ পড়তে শুরু করল।
কোটা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে সাম্প্রতিক সহিংসতায় মেট্রোরেল, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ে, বাংলাদেশ টেলিভিশন, দুর্যোগ ভবন, সেতু ভবন, বিআরটিএ, ডাটা সেন্টারে হামলা ও অগ্নিসংযোগের মাধ্যমে ধ্বংসাত্মক কর্মকাণ্ডের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, তারা (বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন) এভাবে কেন সুযোগটা সৃষ্টি করে দিল সে জবাবটাও জাতির কাছে তাদের দিতে হবে। আমরা তো বারবার তাদের সঙ্গে বসলাম। প্রজ্ঞাপন সেটাও করা হলো। তাদের কোনো দাবি তো পূরণ করা ছাড়া রাখিনি।
তিনি বলেন, যে দাবি তারা করেছিল কোটা সংস্কারে, যতটুকু চেয়েছিল তার থেকে অনেক বেশি দিয়েছি। যখন তাদের দাবি মেনে নেওয়া হলো, তারপরও তারা এই জঙ্গিদের সুযোগ করে দিল কেন? কোটা আন্দোলনকারীদের কিন্তু জাতির কাছে একদিন এই জবাব দিতে হবে। কেন মানুষের এত বড় সর্বনাশ করার সুযোগ করে দিল।
গণমাধ্যমগুলোকে সঠিক সংবাদ পরিবেশনের মাধ্যমে গুজব প্রতিরোধের আহ্বান জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আরও বলেন, এটা ঠিক অনেকে গুজবে কান দেয়। কান নিয়ে গেছে চিলে, ওটার পেছনে ছোটে, কানে হাত দিয়ে দেখল না কান আছে কিনা। তাই মিথ্যাচারের হাত থেকে মানুষকে রক্ষা করেন। মানুষ যাতে সঠিক তথ্য জানতে পারেন, সেভাবে সংবাদগুলো পরিবেশন করুন।
তিনি বলেন, ডিজিটাল বাংলাদেশ করে দিয়েছি, এর সুফলও মানুষ পেল, কুফলও মানুষ পেল। আপনাদের কাছে যা তথ্য আছে আপনারা তা ব্যাপকভাবে প্রচার করে জনমত সৃষ্টি করুন।
মতবিনিময় সভা সঞ্চালনা করেন প্রধানমন্ত্রীর প্রেসসচিব মো. নাঈমুল ইসলাম খান। মতবিনিময় সভায় বক্তব্য দেন- এডিটর্স গিল্ড-এর সভাপতি মোজাম্মেল বাবু, দৈনিক জাগরণের সম্পাদক আবেদ খান, বাংলাদেশ প্রতিদিনের সম্পাদক নঈম নিজাম, যুগান্তরের সম্পাদক সাইফুল আলম, বাংলাদেশ জার্নালের সম্পাদক শাহজাহান সরদার, জাতীয় প্রেসক্লাবের সভাপতি ফরিদা ইয়াসমিন এমপি, সাধারণ সম্পাদক ও ভোরের কাগজের সম্পাদক শ্যামলদত্ত, ডিবিসি টেলিভিশনের সিইও মঞ্জুরুল ইসলাম, ঢাকা জার্নালের সম্পাদক সৈয়দ ইশতিয়াক রেজা, বাংলাদেশ ফেডারেল সাংবাদিক ইউনিয়নের মহাসচিব দীপ আজাদ, ডিবিসি টেলিভিশনের সম্পাদক জায়েদুল আহসান পিন্টু, ইনডিপেন্ডেন্ট টেলিভিশনের সিএনই আশীষ সৈকত, একাত্তর টেলিভিশনের সিনিয়র সাংবাদিক শাকিল আহমেদ, আরটিভির সিনিয়র সাংবাদিক মামুনুর রহমান খান, কিংস নিউজের সাংবাদিক নাজমুল হক সৈকত।
সিনিয়র সাংবাদিক ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন- স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের স্বাস্থ্য ও জনসংখ্যাবিষয়ক সম্পাদক অধ্যাপক ডা. রোকেয়া সুলতানা, তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক ড. সেলিম মাহমুদ, প্রধানমন্ত্রীর বিশেষ সহকারী ও আওয়ামী লীগের দপ্তর সম্পাদক ব্যারিস্টার বিপ্লব বড়ুয়া।
মন্তব্য করুন