পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী ও অল ইন্ডিয়া তৃণমূল কংগ্রেসের সভাপতি মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় সম্প্রতি বাংলাদেশ নিয়ে বিরূপ বক্তব্য দিয়েছেন। গত রোববার (২১ জুলাই) কলকাতার ধর্মতলার জনসভায় বাংলাদেশে চলমান কোটা আন্দোলনে সহিংসতা নিয়ে স্পর্শকাতর বক্তব্য দেন। এতে তিনি বাংলাদেশ থেকে কেউ পশ্চিমবঙ্গের দরজায় এলে ফেরাবেন না জানিয়ে বলেন, বাংলাদেশের পরিস্থিতির জন্য সহমর্মিতা রয়েছে তার।
জানা যায়, মমতা বন্দ্যোপাধ্যায়ের একজন রাজনৈতিক উপদেষ্টা রয়েছেন আহমেদ হাসান ইমরান। যিনি বাংলাদেশে জামায়াতে ইসলামীর মুখপত্র হিসেবে পরিচিত একটি দৈনিক পত্রিকার কলকাতা প্রতিনিধি ছিলেন দীর্ঘদিন। একইসঙ্গে ভারতের রাজ্যসভার সংসদ সদস্য ছিলেন। ভারত সরকার কর্তৃক টেলিফোন উপদেষ্টা কমিটির চেয়ারম্যান হিসেবেও দায়িত্ব পালন করেন। বর্তমানে পশ্চিমবঙ্গ সংখ্যালঘু কমিশনের চেয়ারম্যান হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন।
এর আগেও ভারত সরকার ইমরানের বিরুদ্ধে জামায়াতকে অর্থ সহায়তার অভিযোগ এনেছিল। তখন বলা হয়েছিল, যুদ্ধাপরাধের বিচার ঠেকাতে বিপুল টাকা দিয়েছিলেন ইমরান। এছাড়া বিভিন্ন সময়ে, বাংলাদেশে পুলিশের তাড়া খেয়ে পালিয়ে আসা মৌলবাদীদের পশ্চিমবঙ্গে আশ্রয় দেন ইমরান।
সূত্র বলছে, তুণমূল কংগ্রেস প্রতি বছর ২১ জুলাই শহীদ দিবস হিসেবে পালন করে। ১৯৯৩ সালে মমতার নেতৃত্বে এক সমাবেশে গুলি চালায় বাম সরকার। সেই থেকে প্রতি বছর ঘটা করে দিবসটি পালন করে তৃণমূল। প্রতি বছরের মতো এবারও ধর্মতলায় ২১ জুলাইয়ের সমাবেশ করে। কিন্তু সেখানে বিজেপি সরকারকে আক্রমণের পাশাপাশি টেনে আনেন বাংলাদেশ প্রসঙ্গ। এতেই অবাক হয়েছে দেশ-বিদেশের বোদ্ধারা।
কলকাতার প্রবীণ সাংবাদিকরা বলছেন, তৃণমূলের রাজনৈতিক সভায় বাংলাদেশ প্রসঙ্গ টানার পেছনে ভিন্ন কোনো উদ্দেশ্য রয়েছে। কলকাতার সূত্রগুলো বলছে, তৃণমূলের সংখ্যালঘু ভোটব্যাংক দেখাশোনার অন্যতম দায়িত্ব আহমেদ হাসান ইমরানের ওপর। পুরস্কারস্বরূপ রাজ্যসভার সংসদ সদস্যও হয়েছিলেন। পেয়েছেন নানা রকম সরকারি সুযোগ-সুবিধা। সারদা কেলেঙ্কারিতেও নাম জড়িয়েছিল তার। অভিযোগ রয়েছে, সারদার টাকা পাচার করেছেন বাংলাদেশে। ধারণা করা হচ্ছে, ইমরানের দ্বারা প্রভাবিত হয়ে এ ধরনের বক্তব্য দিয়ে থাকতে পারেন মমতা বন্দ্যোপাধ্যায় ।
জানা যায়, শহীদ দিবসের ওই সভায় মমতা বলেন, কোনো অসহায় মানুষ যদি বাংলার দরজা খটখট করেন, আমরা নিশ্চয়ই আশ্রয় দেব। কারণ, এটা রাষ্ট্রপুঞ্জের নিয়ম। কেউ শরণার্থী হলে পার্শ্ববর্তী এলাকায় তাকে সম্মান দেওয়া হয়। তিনি বলেন, ‘বাংলাদেশ নিয়ে কেউ কোনো প্ররোচনায় পা দেবেন না। কোনো উত্তেজনা যেন তৈরি না হয়। ওখানকার পরিস্থিতির জন্য আমার সহমর্মিতা রয়েছে। ছাত্রছাত্রীদের তাজা প্রাণগুলো চলে যাচ্ছে। আমরা খবর রাখছি।’
এদিকে মমতার সাম্প্রতিক মন্তব্যে তোলপাড় চলছে। এ নিয়ে ঢাকার পক্ষ থেকে ভারতের বিদেশ মন্ত্রকে নোট পাঠিয়ে তার বক্তব্যের প্রতিক্রিয়া জানানো হয়েছে। মঙ্গলবার এ নিয়ে কথা বলেছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ।
মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়, পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতার ‘বাংলাদেশে শিক্ষার্থীদের রক্ত ঝরছে’ মর্মে এক্স হ্যান্ডেল-এ (টুইট) যে মন্তব্য করেছেন সে বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘তার প্রতি যথাযথ সম্মান রেখে বলতে চাই, তার সঙ্গে আমাদের সম্পর্ক অত্যন্ত চমৎকার, ঘনিষ্ট ও উষ্ণ। কিন্তু তার (মমতা) এই বক্তব্যে বিভ্রান্তির সুযোগ রয়েছে। আমরা এ বিষয়ে ভারত সরকারকে নোট পাঠিয়েছি।’
তবে ভারতের কেন্দ্রীয় সরকারের সূত্র উদ্ধৃত করে সংবাদ সংস্থা পিটিআইয়ের প্রতিবেদনে জানানো হয়েছে, মমতার মন্তব্যে একেবারেই প্রসন্ন হয়নি কেন্দ্রীয় সরকার। স্পষ্টভাবে জানিয়ে দেওয়া হয় যে, সে বিষয় নিয়ে মন্তব্য করার কোনো এখতিয়ারই নেই পশ্চিমবঙ্গ সরকারের।