রাফসান জানি
প্রকাশ : ২৪ জুলাই ২০২৪, ০১:১৬ এএম
আপডেট : ২৪ জুলাই ২০২৪, ০১:২৮ এএম
অনলাইন সংস্করণ

পুলিশ সদস্যদের দেওয়া হয়েছে সতর্কবার্তা, চোরাগোপ্তা হামলার শঙ্কা

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

টানা কয়েক দিন ধরে চলা সহিংস পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে সক্ষম হলেও চোরাগোপ্তা হামলা অব্যাহত থাকতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা। শিক্ষার্থীদের কোটাবিরোধী আন্দোলন পুঁজি করে দেশে বড় রকমের অস্থিতিশীলতা সৃষ্টির ষড়যন্ত্র ব্যর্থ হওয়ায় দুর্বৃত্তরা এখন ভিন্ন কৌশলে নাশকতা চালাতে পারে বলে আভাস দিয়েছেন গোয়েন্দারা। ইতোমধ্যেই সারা দেশে পুলিশ সদস্যদের বিষয়টি অবহিত করে জনগণের জানমালের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে সর্বোচ্চ সতর্কতা অবলম্বনের নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্টরা।

এ বিষয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল কালবেলাকে বলেন, চোরাগোপ্তা হামলার মতো অনেক কিছুই হতে পারে। সব ঝুঁকি বিবেচনা করেই নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সূত্রগুলো বলছে, দেশে গত কয়েকদিনে ভয়ংকর নাশকতা চালানো হয়েছে। এই নাশকতার পরিকল্পনা আরও বড় ছিল। আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর তৎপরতায় তাতে বাধা পেলেও থেমে নেই নাশকতাকারীরা। ভিন্নপন্থায় এবার তারা হামলার চেষ্টা করবে। গোয়েন্দারা তথ্য বিশ্লেষণ করে জানতে পেরেছেন, চোরাগোপ্তা হামলায় টার্গেট করা হয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্য, সরকারদলীয় নেতাকর্মী ও সংবাদমাধ্যমের কর্মীদের। এই পরিকল্পনার সঙ্গে সরাসরি অন্তত চারটি রাজনৈতিক দলের নেতারা জড়িত। রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে এসব দলের নেতাকর্মীদের গ্রেপ্তারের পর তাদের কাছে এই তথ্যগুলো পাওয়া গেছে।

চলমান অভিযানে গ্রেপ্তার কয়েকজনকে জিজ্ঞাসাবাদের ভিত্তিতে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্র বলছে, সাধারণ শিক্ষার্থীদের ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে সহিংসতা চালানোর পেছনে একাধিক রাজনৈতিক দল এবং তাদের ছাত্র সংগঠনগুলো সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। পরিকল্পনা প্রাথমিকভাবে বাস্তবায়ন করার পর একে অন্যকে অভিনন্দন জানিয়ে মেসেজ আদান-প্রদান করেছে। সরকারের পতনকে চূড়ান্ত লক্ষ্য নির্ধারণ করে এসব নাশকতার পরিকল্পনা করা হয়। তাদের পরিকল্পনায় চোরাগোপ্তা হামলার বিষয়টিও রয়েছে। এসব হামলা ঠেকাতে ইতোমধ্যে মাঠে নেমেছে পুলিশসহ অন্যান্য বাহিনীর সদস্যরা। তবে এই দলগুলোর সঙ্গে উগ্রবাদী কোনো সংগঠনের যোগাযাগ ছিল কি না—সে বিষয়েও তদন্ত শুরু হয়েছে।

পুলিশের সংশ্লিষ্ট ইউনিটগুলোর দায়িত্বশীলরা বলছেন, এর আগে বিভিন্ন সময়ে হওয়া আন্দোলনে রাজধানীকে বিচ্ছিন্ন করা যায়নি। তবে এবার পরিকল্পিতভাবেই ঢাকার চারটি প্রবেশপথ যাত্রাবাড়ী-পোস্তগোলা, মিরপুর, উত্তরা ও সাভার এলাকায় সহিংসতা সৃষ্টি করা হয়। টানা কয়েকদিনের সহিংসতায় এবার রাজধানী কার্যত বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছিল। অত্যন্ত সুপরিকল্পিতভাবে এই হামলাগুলো হয়েছে। রাজধানীজুড়ে সহিংসতা চালানোর জন্য বিভিন্ন জেলা থেকে প্রশিক্ষিত ক্যাডারদের নিয়ে আসা হয়েছিল। যারা অন্তত দুই মাস আগে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নে ঢাকার চারপাশে অবস্থান নিয়ে নাশকতার ছক আঁকে।

দায়িত্বশীল এক কর্মকর্তা কালবেলাকে বলেন, নাশকতার পরিকল্পনাকারীরা কোনো একটি আন্দোলনের অপেক্ষায় ছিল। ছাত্রদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে ঢুকে পরিস্থিতি সৃষ্টির পর বাকি ক্যাডারদের আগে থেকে ভাড়া করা বাসায় নিয়ে আসা হয়। সেখান থেকে ঢাকার গুরুত্বপূর্ণ পয়েন্টগুলোতে সহিংসতা চালানো হয়।

পুলিশ সদর দপ্তর সূত্র জানায়, চোরাগোপ্তা হামলার মতো ঘটনা যেন না ঘটে, সেজন্য পুলিশের সব ইউনিটকে সতর্ক করা হয়েছে। জনগণের নিরাপত্তা নিশ্চিতের পাশাপাশি পুলিশ সদস্যরা যেন ব্যক্তিগত নিরাপত্তা নিশ্চিত করে চলাফেরা করেন, সে ব্যাপারে নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।

পুলিশ সদর দপ্তরে অপারেশন শাখার দায়িত্বে থাকা অতিরিক্ত আইজিপি আনোয়ার হোসেন কালবেলাকে বলেন, সার্বিক বিষয় মাথায় রেখে আমরা নিরাপত্তা ব্যবস্থা সাজিয়েছি। পরিস্থিতি সম্পূর্ণ স্বাভাবিক না হওয়া পর্যন্ত পুলিশের সব সদস্যকে সতর্কভাবে চলাচলের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।

তিনি বলেন, পুলিশ সদস্য, পুলিশের স্থাপনা, এমনকি পুলিশ সদস্যদের বাসা খুঁজে টার্গেট করে হামলা করেছে। মাইকিং করে পুলিশ সদস্যদের বাসা ভাড়া না দেওয়া, তাদের খুঁজে বের করে দেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে। দুর্বৃত্তদের এ ধরনের তৎপরতা বিশ্লেষণ করে নিরাপত্তা ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।

সূত্র জানায়, গত শনিবার রাত থেকে দেশব্যাপী সাঁড়াশি অভিযান চালানো হচ্ছে। এতে ঢাকাতেই সহস্রাধিক ব্যক্তিকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে। এই তালিকায় বিএনপি, জামায়াত ও গণঅধিকার পরিষদের প্রথম ও মধ্যমসারির নেতারা রয়েছেন। তাদের মধ্যে গণঅধিকার পরিষদের যুগ্ম সদস্য সচিব মো. তারেক রহমানসহ চারজন বিটিভি ভবন, মেট্রো স্টেশনসহ সরকারি স্থাপনায় হামলার সঙ্গে সরাসরি যুক্ত ছিলেন বলে অভিযোগ করছে র‌্যাব।

গ্রেপ্তার হওয়া কয়েক জনকে জিজ্ঞাসাবাদ করে পাওয়া তথ্যের বরাত দিয়ে তদন্ত কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, তিন স্তরের ক্যাডার নিয়োগ করে ঢাকাসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হামলা ও নাশকতা চালানো হয়েছে। সাতক্ষীরা, চট্টগ্রামের সাতকানিয়া, কুষ্টিয়াসহ বিভিন্ন এলাকা থেকে ক্যাডারদের ঢাকায় নিয়ে আসা হয়েছিল। ছাত্রদের আন্দোলনে অছাত্ররা বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের ভুয়া আইডি কার্ড ব্যবহার করে অনুপ্রবেশ করেছে। তিন স্তরের নেতাকর্মীদের ভাগ করে তারা আন্দোলনে নামে। প্রথম স্তর গ্রেপ্তার হলে দ্বিতীয়, আর দ্বিতীয় স্তরের লোকজন গ্রেপ্তার হলে তৃতীয় স্তরের কর্মীরা মাঠে নামবে- এমন পরিকল্পনা ছিল।

এ বিষয়ে ঢাকা মহানগর পুলিশ (ডিএমপি) কমিশনার হাবিবুর রহমান সাংবাদিকদের বলেছেন, ‘আমাদের কাছে তথ্য আছে, এই নাশকতা চালানোর জন্য অনেকদিন আগে থেকেই সন্ত্রাসীরা ঢাকায় এসে ঘাঁটি গেড়েছে এবং বিভিন্ন বাসা ভাড়া নিয়ে তারা থাকতে শুরু করেছে।

জনগণের প্রতি আহ্বান জানিয়ে কমিশনার বলেন, যারা নতুন এসেছে, নতুন বাসা ভাড়া নিয়েছে, তাদের বিষয়ে তথ্য দিয়ে পুলিশকে সহযোগিতা করুন।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সহিংসতায় দেশের ভেতর ও বিদেশ থেকে অর্থের জোগান এসেছে। যেগুলো আন্দোলনের নামে নাশকতার কাজে ব্যবহার হয়েছে। মধ্যপ্রাচ্য ও ইউরোপের দেশগুলো থেকে এসব অর্থ এসেছে।

ঢাকা মহানগর পুলিশের অতিরিক্ত কমিশনার (গোয়েন্দা শাখা) মোহাম্মদ হারুন অর রশীদ বলেন, দেশের বাইরে থেকে নাশকতার নির্দেশ এসেছে। গ্রেপ্তার বিএনপি-জামায়াতের নেতাকর্মীদের মোবাইল ফোন, মেসেজ এবং তথ্য প্রযুক্তি বিশ্লেষণ করে আমরা এসব তথ্য পেয়েছি। শীর্ষ নেতাদের নির্দেশে এই ধ্বংসলীলা চালানো হয়। তারা কেউ নির্দেশ দিয়েছে, কেউ মাঠে কাজ করেছে, কেউ অর্থ দিয়েছে, গুলি দিয়েছে, গান পাউডার দিয়েছে। যারা এসব করেছে তাদের অনেকের নাম এবং মোবাইল নম্বর আমরা পেয়েছি।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

কী ঘটেছিল ইতিহাসের এই দিনে

দেশে ফিরলেন আমিরাতে ক্ষমা পাওয়া ১৪ বাংলাদেশি

আজকের নামাজের সময়সূচি

শহীদ আমিনুলের সন্তানদের দায়িত্ব নিল ইত্তেফাকুল উলামা

রোববার রাজধানীর যেসব এলাকায় যাবেন না

মিছিলে বিএনপি নেতার গুলির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

রৌমারীতে ব্যবসায়ীদের আহ্বায়ক কমিটির শপথ অনুষ্ঠিত

৬৫ ভরি স্বর্ণ ছিনিয়ে নেয়ায় মামুনের বিরুদ্ধে যুবদলের মামলা

আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের ইসলামী আন্দোলনে যোগদান

ক্ষমা পেয়ে আমিরাত থেকে ১২ জন ফিরছেন চট্টগ্রামে

১০

‘ছাত্র জনতার আন্দোলনে হাসিনা সরকার দুই ভাবে পরাজিত’

১১

মহানবীকে (সা.) কটূক্তিকারী সেই যুবকের বিরুদ্ধে মামলা

১২

শিবচর আঞ্চলিক সড়কে গ্রামবাসীর বৃক্ষরোপণ

১৩

মাদ্রাসাছাত্রকে বলাৎকার চেষ্টার অভিযোগ ধামাচাপা, ৭ দিন পর ফাঁস

১৪

১২ দিনেও মেলেনি রানীনগরে নিখোঁজ নার্গিসের সন্ধান

১৫

দায়িত্বশীলদের নিয়ে সাতক্ষীরায় ছাত্র শিবিরের সমাবেশ

১৬

আযহারী শিক্ষার্থীরা হবে বাংলাদেশ ও মিশরীয় ঐতিহ্যের সেতুবন্ধন : মিশরীয় রাষ্ট্রদূত

১৭

রাজশাহীতে বস্তাভর্তি দেশীয় অস্ত্র উদ্ধার

১৮

আন্দোলনের ছাত্রীকে ধর্ষণের অভিযোগে ছাত্রলীগ কর্মীকে গণধোলাই

১৯

আশুলিয়ায় গার্মেন্টস শ্রমিক অসন্তোষ ও ষড়যন্ত্রকারীদের বিরুদ্ধে শ্রমিক সমাবেশ

২০
X