সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে শুরু হওয়া ছাত্র আন্দোলনের জেরে দেশজুড়ে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি মোকাবিলায় কারফিউ জারি করা হলেও তা ধীরে ধীরে শিথিল করা হচ্ছে।
বুধবার (২৪ জুলাই) ও বৃহস্পতিবার ঢাকাসহ আশপাশের চারটি জেলায় সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। অন্য জেলাগুলোতে স্থানীয় প্রশাসন প্রয়োজন অনুযায়ী এই শিথিলের সময় নির্ধারণ করবে। স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্রে এসব তথ্য জানা গেছে।
আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর কর্মকর্তারা বলছেন, কয়েকদিন ধরে চলা নৈরাজ্য সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর অবস্থানে রয়েছে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী। চলমান কারফিউর মধ্যে রাজধানীসহ সারা দেশে মোতায়েন রয়েছে সশস্ত্র বাহিনীর সদস্য। এতে গত সোম ও মঙ্গলবার ঢাকাসহ দেশের কোথাও নাশকতা চালাতে পারেনি দুর্বৃত্তরা। এই পরিস্থিতিতে মানুষের মনে স্বস্তি ফিরেছে এবং জনজীবন স্বাভাবিক হয়ে আসছে। এজন্য ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিল করা হচ্ছে।
স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল সাংবাদিকদের বলেছেন, বুধ ও বৃহস্পতিবার ঢাকা, নারায়ণগঞ্জ, নরসিংদী ও গাজীপুরে সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত কারফিউ শিথিল থাকবে। অন্য জেলাগুলোতে স্থানীয় প্রশাসন নিজেদের মতো করে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে।
এদিকে বুধবার (২৪ জুলাই) সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত কারফিউ শিথিল হওয়ায় আজ থেকে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য অফিস-আদালতের কার্যক্রমও শুরু হচ্ছে। ব্যাংক, বীমাসহ সব ধরনের প্রতিষ্ঠান চালু হচ্ছে। জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, আজ সকাল ১১টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত অফিসের কার্যক্রম চলবে।
সূত্রগুলো বলছে, সার্বিক পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করে ধীরে ধীরে কারফিউ শিথিলের সময় আরও বাড়ানো হবে। পাশাপাশি অফিসের সময়সূচিও আগের অবস্থায় ফেরানো হবে। শুক্র ও শনিবার সরকারি ছুটির পর রোববার থেকে সার্বিক পরিস্থিতি পুরো স্বাভাবিক হয়ে আসবে বলে আশা করা হচ্ছে।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের ব্যানারে সাধারণ শিক্ষার্থীরা চলতি মাসের শুরু থেকে কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনে নামেন। শুরুর দিকে এই আন্দোলন শান্তিপূর্ণ থাকলেও হঠাৎ করে তা সহিংস রূপ নেয়। ছাত্রদের আন্দোলনকে পুঁজি করে দুর্বৃত্তরা ঢাকাসহ বিভিন্ন এলাকায় নাশকতা চালাতে থাকে। পথেঘাটে নির্বিচারে গাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়। থানা, পুলিশ ফাঁড়ি ছাড়াও সরকারি বিভিন্ন স্থাপনায় হামলা, ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ চালানো হয়। নৈরাজ্যকর পরিস্থিতিতে হামলাকারীরা বিটিভি ভবন, মেয়র হানিফ ফ্লাইওভারের টোল প্লাজা, এলিভেটেড এক্সপ্রেসওয়ের টোল প্লাজা, মেট্রোরেলের অন্তত দুটি স্টেশনে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে। শুরুর দিকে এই ভয়ংকর পরিস্থিতি থামাতে পুলিশ ও র্যাবের সঙ্গে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) ও আনসার বাহিনী মাঠে নামে। তাতেও পরিস্থিতি পুরোপুরি নিয়ন্ত্রণে না আসায় গত শুক্রবার মধ্যরাত থেকে সরকার সারা দেশে কারফিউ জারি করে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তার জন্য সশস্ত্র বাহিনী মোতায়েন করে।
কারফিউর শুরুর দিন শনিবার (২০ জুলাই) দুই ঘণ্টা শিথিল ছিল। পরের দুদিনও নির্দিষ্ট সময় ধরে তা শিথিল থাকে। অবশ্য মঙ্গলবার এই শিথিলতা ছিল দুপুর ১টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। তবে বুধবার তা সকাল ১০টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত করা হয়েছে। অর্থাৎ বুধ ও বৃহস্পতিবার বিকেল ৫টার পর থেকে পরের দিন সকাল ১০টা পর্যন্ত কারফিউ চলবে।
কারফিউর চতুর্থ দিন রাজধানীর বিভিন্ন পয়েন্টে সেনা সদস্যদের নিরাপত্তা তল্লাশি করতে দেখা গেছে। পাশাপাশি বিভিন্ন সড়কে টহল দিতে দেখা গেছে। বিজিবি, পুলিশ, র্যাব ও আনসার বাহিনীর সদস্যরাও ছিলেন নিরাপত্তার দায়িত্বে।
মন্তব্য করুন