কোটা সংস্কার নিয়ে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে সরকার রাজি আছে বলে জানিয়েছেন আইনমন্ত্রী আনিসুল হক। তিনি বলেন, আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানিয়েছে তারা আন্দোলনের পাশাপাশি আলোচনার জন্যও প্রস্তুত। তাদের এই অবস্থানকে স্বাগত জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
আইনমন্ত্রী বলেন, আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনা করার জন্য আমাকে এবং শিক্ষামন্ত্রী মহিবুল হাসান চৌধুরীকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আমরা তাদের সঙ্গে বসব। তারা যখনই আলোচনায় বসতে চায়... সেটা যদি আজকে হয়, আজই আমরা বসতে রাজি আছি।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) বেলা ২টার দিকে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক এক সংবাদ সম্মেলনে এ তথ্য জানান।
সরকার কোটা সংস্কারের পক্ষে রয়েছে জানিয়ে আইনমন্ত্রী আনিসুল হক আরও বলেন, আমরা কোটা সংস্কারের পক্ষে। এ নিয়ে সরকার আদালতে প্রস্তাব দেবে।
তিনি বলেন, মামলাটা সর্বোচ্চ আদালতে আছে। এই মামলা যখন আদালতে শুনানি শুরু হবে, সরকার একটা প্রস্তাব আদালতে দেবে। সেখানে সংস্কারের প্রস্তাব দেব। অতএব আপনারা বলতে পারেন আমরা কোটা সংস্কারের পক্ষে।
মন্ত্রী বলেন, আগামী ৭ আগস্ট কোটা নিয়ে সুপ্রিম কোর্টে মামলার শুনানির তারিখ রয়েছে। তবে আমি বাংলাদেশের অ্যার্টনি জেনারেলকে নির্দেশ দিয়েছি, যেন আগামী রোববার (২১ জুলাই) আদালতে মামলাটির শুনানির তারিখ এগিয়ে আনেন। তিনি যেন উচ্চ আদালতে আবেদন করে শুনানি এগিয়ে আনার চেষ্টা করেন।
আইনমন্ত্রী আরও বলেন, গতকাল প্রধানমন্ত্রী তার ভাষণে বিচারবিভাগীয় তদন্তের ঘোষণা দিয়েছিলেন। সেই পেক্ষিতে হাইকোর্টের বিচারপতি খোন্দকার দিলীরুজ্জামানকে দিয়ে বিচার বিভাগীয় তদন্ত কমিটি গঠনের প্রস্তাব করা হয়েছে। এই প্রস্তাব প্রধান বিচারপতির কাছে যাবে।
মন্ত্রী বলেন, যেহেতু সরকার দিক বিবেচনা করে সরকার রাজি হয়েছে, আমার মনে আজ থেকে আন্দোলন করার আর কোনো প্রয়োজন নেই। আমি পিতৃতুল্য নাগরিক হিসেবে অনুরোধ করছি, তারা (আন্দোলনকারীরা) যেন আন্দোলন বন্ধ করে, সহিংসতা বন্ধ করে।
উল্লেখ্য, দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের তুমুল আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওইসব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।
এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট।
এরপর থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে নানা স্থানে বিক্ষোভ করেন কোটাবিরোধীরা। ঢাবি ছাড়াও বিক্ষোভ হয় জাবি, জবি, রাবি, সাত কলেজসহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন কলেজে।
এরমধ্যে গত মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) মঙ্গলবার দিনব্যাপী রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে বিশেষ করে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ ও হামলার ঘটনা ঘটে। এতে অন্তত ছয়জন নিহত হন। নিহতদের মধ্যে চট্টগ্রামে তিনজন, ঢাকায় দুজন ও রংপুরে একজন রয়েছেন।
এদিকে পরিস্থিতির যেন আরও অবনতি না হয় সে জন্য দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয় অনির্দিষ্টকালের জন্য বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে। মঙ্গলবার রাতে দেশের সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ রাখার নির্দেশনা দিতে উপাচার্যদের চিঠি দেয় বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি)। পাশাপাশি সব আবাসিক শিক্ষার্থীদের হল ছাড়তে নির্দেশ দেওয়া হয়।
তবে কর্তৃপক্ষের নির্দেশ প্রত্যাখ্যান করে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে অবস্থান করছেন আন্দোলনকারীরা। এ নিয়ে বুধবার (১৭ জুলাই) দুপুরের পর থেকেই বিভিন্ন ক্যাম্পাসে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে জড়িয়েছেন তারা। এতে বিভিন্ন ক্যাম্পাসে অনেকেই আহত হয়েছেন।
এমন পরিস্থিতি বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) সারা দেশে সম্পূর্ণ শাটডাউন পালন করার ঘোষণা দেন ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন’ এর সমন্বয়ক আসিফ মাহমুদ।
এই কর্মসূচি বৃহস্পতিবার সকাল থেকেই দেশের বিভিন্ন স্থানে সংঘর্ষের খবর পাওয়া যায়। গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী বৃহস্পতিবার দুপুর পর্যন্ত এসব সংঘর্ষে দেশের বিভিন্ন স্থানে দুইজন নিহত হয়েছে বলে জানা গেছে।
মন্তব্য করুন