কোটা সংস্কারের দাবিতে ছাত্র আন্দোলনকে কেন্দ্র করে ব্যাংকপাড়া খ্যাত মতিঝিলে থমথমে অবস্থা বিরাজ করছে। স্বাভাবিক দিনের তুলনায় উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে জনসাধারণের চলাচল। লেনদেনে ভাটা পড়েছে ব্যাংকের শাখাগুলোতে। বুলেটের শব্দে শঙ্কিত ব্যাংক কর্মকর্তারাও।
বৃহস্পতিবার (১৮ জুলাই) রাজধানীর মতিঝিল, পল্টন, ফকিরাপুল ও গুলিস্তান এলাকা সরেজমিন পরিদর্শনে এসব তথ্য উঠে এসেছে।
সোনালী ব্যাংকের লোকাল অফিসের ম্যানেজার শফিকুল ইসলাম বলেন, ছাত্র আন্দোলনের কারণে অন্যান্য দিনের তুলনায় গ্রাহক সংখ্যার উপস্থিতি অনেক কম। এ কারণে লেনদেনের পরিমাণও কমে গেছে শাখায়। তা ছাড়া শাখার নিরাপত্তার জন্য আমাদের নিয়োগকৃত নিরাপত্তা রক্ষী বাহিনী রয়েছে। অপ্রীতিকর পরিস্থিতি এড়াতে পার্শ্ববর্তী থানাতেও অবহিত করে রেখেছি।
মতিঝিল এলাকা ঘুরে দেখা যায়, চলাচলের প্রধান বাহন এখন রিকশা, সিএনজি এবং প্রাইভেট কার। তারাও নিজেদের নিরাপদ মনে করছেন না। শঙ্কিত রিকশাচালকরাও। অনেকক্ষণ অপেক্ষা করেও গণপরিবহনের খোঁজ পাননি রাব্বি সজল। এদিকে দক্ষিণবঙ্গের গুরুত্বপূর্ণ ফকিরাপুল বাসস্ট্যান্ডে কোনো বাস দেখা যায়নি।
ফকিরাপুলের জনতা ব্যাংকের লেনদেনের চিত্রেও ফুটে উঠেছে ছাত্র আন্দোলনের প্রভাব। নিয়মিত যেখানে ১৫ থেকে ২০ জন গ্রাহক লাইনে দাঁড়িয়ে থাকেন সেখানে আজকে কাউন্টারে মাত্র দুজন। তবে ব্যাংক কর্মকর্তারা বলছেন লেনদেন স্বাভাবিক। শাখা ম্যানেজার সাব্বির আহমেদ শিমুল জানান এই শাখাতে মূলত বিমানের টিকিট কেনাবেচাকারী গ্রাহকরা টাকা জমা দিয়ে থাকেন। এখন সাড়ে ১২টা বাজে। দুইটার পর থেকে চাপ তৈরি হবে লেনদেনের। প্রতিদিনই এই সময় অল্প গ্রাহক দেখা যায়। ছাত্র আন্দোলনকে লেনদেনের জন্য কোনো সমস্যা মনে করছে না তিনি। তাছাড়া পার্শ্ববর্তী থানা তে অবহিত করে রাখা হয়েছে বলেও জানান এই শাখা প্রধান।
দিলকুশা এলাকার সবচেয়ে বেশি লেনদেন হওয়া শাখা ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিস। সেখানেও ফুটে উঠেছে কমপ্লিট শাটডাউনের ছাপ। গতকাল কোটা সংস্কার আন্দোলনকারীরা কমপ্লিট শাটডাউন কর্মসূচি ঘোষণা করার কারণে পুরো এলাকা প্রায় ফাঁকা। একান্ত প্রয়োজন ছাড়া ইসলামী ব্যাংকের লোকাল অফিসে লেনদেন করতে আসতে কাউকে দেখা যায়নি।
ব্যাংকের একজন কর্মকর্তা জানান, অন্যান্য দিনের তুলনায় লেনদেনের পরিমাণ একেবারেই কম। স্বাভাবিক দিনে যেখানে সাপের মতো লাইন হয়ে থাকে, আজকে প্রতিটি কাউন্টারে একজন দুজনের উপস্থিতি। কারণ বাইরের লক্ষ্য করলেই দেখতে পাবেন সাধারণ জনগণের চেয়ে পুলিশের সংখ্যা বেশি। সারাক্ষণ বাজছে পুলিশের সাইরেন। থেমে থেমেই গোলাবারুদের শব্দ। এসব কারণে শাখায় লেনদেনে নেতিবাচক প্রভাব পড়েছে বলে মনে করেন তিনি।
প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার সারা দেশে কমপ্লিট শাটডাউন (সর্বাত্মক অবরোধ) কর্মসূচি ঘোষণা করেছেন কোটা সংস্কারের দাবিতে আন্দোলনকারীরা। আজ বৃহস্পতিবার এই কর্মসূচি চলাকালে শুধু হাসপাতাল ও জরুরি সেবা ছাড়া সবকিছু বন্ধ করে দেওয়ার কথা বলেছেন তারা। শিক্ষার্থীদের শান্তিপূর্ণ আন্দোলনে পুলিশ-বিজিবি-র্যাব ও সোয়াটের ন্যক্কারজনক হামলা, খুনের প্রতিবাদ, খুনিদের বিচার, সন্ত্রাসমুক্ত ক্যাম্পাস নিশ্চিত করা এবং কোটাব্যবস্থার যৌক্তিক সংস্কারের দাবিতে’ এই কর্মসূচি পালন করবেন আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা।
জরুরি সেবার আওতায় গণমাধ্যমের গাড়ি ও সংবাদপত্র পরিবহনের গাড়ি বাধাহীনভাবে চলতে পারবে বলে জানিয়েছেন আন্দোলনকারীরা।
মন্তব্য করুন