কালবেলা প্রতিবেদক
প্রকাশ : ১৬ জুলাই ২০২৪, ১০:৪৮ পিএম
আপডেট : ১৬ জুলাই ২০২৪, ১১:০৪ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

সব বিশ্ববিদ্যালয় বন্ধ ঘোষণা, হল ত্যাগের নির্দেশ

গ্রাফিক্স : কালবেলা
গ্রাফিক্স : কালবেলা

দেশজুড়ে চলছে কোটা আন্দোলন। এর মধ্যেই দেশের সব পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় এবং বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিংসহ সব কলেজ বন্ধ ঘোষণা করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) ইউজিসি সচিব ড. ফেরদৌস জামান স্বাক্ষরিত বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় দেশের সকল পাবলিক ও বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় অধিভুক্ত মেডিকেল, টেক্সটাইল, ইঞ্জিনিয়ারিং ও অন্যান্য কলেজসহ সকল কলেজের শিক্ষা কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

একইসঙ্গে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার স্বার্থে আবাসিক হল ত্যাগের নির্দেশনা দিয়ে নিরাপদ আবাসস্থলে অবস্থানের নির্দেশনা প্রদান করা হলো।

এর আগে শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তায় পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত দেশের সব স্কুল-কলেজ বন্ধ ঘোষণা করেছে শিক্ষা মন্ত্রণালয়। সন্ধ্যায় এক বিজ্ঞপ্তিতে এমন নির্দেশনার কথা জানিয়েছে মন্ত্রণালয়।

শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের জনসংযোগ কর্মকর্তা এম এ খায়ের জানান, বিদ্যালয় ও কলেজগামী শিক্ষার্থীদের নিরাপত্তার বিষয়টি বিবেচনায় নিয়ে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক পর্যায়ের সকল শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান এবং পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটসমূহের শ্রেণি কার্যক্রম পরবর্তী নির্দেশ না দেওয়া পর্যন্ত বন্ধ থাকবে।

তবে, প্রাথমিক বিদ্যালয় বন্ধের বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত হয়নি। এ বিষয়ে প্রাথমিক ও গণশিক্ষা মন্ত্রণালয়ের সচিব ফরিদ আহাম্মদ বলেন, বুধবার যেহেতু সরকারি বন্ধ আছে, তাই এখনই কোনো সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি। পরিস্থিতি বিবেচনায় পরবর্তীতে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।

এদিকে সরকারি চাকরিতে কোটা সংস্কারের দাবিতে চলমান আন্দোলনে মঙ্গলবার (১৬ জুলাই) দেশের বিভিন্ন স্থানে আন্দোলনকারীদের সঙ্গে পুলিশ ও ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে। এতে মোট ছয়জন নিহত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে।

রাজধানীর সায়েন্সল্যাব মোড়ে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগের সংঘর্ষে অজ্ঞাতনামা দুই যুবক নিহত হয়েছেন। চিকিৎসকের বরাত দিয়ে বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন ঢামেক হাসপাতালের পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ পরিদর্শক বাচ্চু মিয়া।

তিনি বলেন, গুরুতর আহত অবস্থায় এক যুবককে ঢাকা মেডিকেলে নিয়ে এলে কর্তব্যরত চিকিৎসক মৃত ঘোষণা করেন। তার কানের নিচে ও মুখের বিভিন্ন জায়গায় ধারালো অস্ত্রের আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। প্রাথমিকভাবে হাসপাতালে নিয়ে আসা ওই পথচারী তার নাম পরিচয় বলতে পারেননি। এরপর সন্ধ্যায় আরও এক যুবক নিহত হয়েছেন। তবে তার নাম পরিচয় জানা যায়নি; বয়স আনুমানিক ২৫।

চট্টগ্রামে কোটা আন্দোলনকারীদের সঙ্গে ছাত্রলীগ ও যুবলীগের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। এতে তিনজন নিহত হয়েছেন। নিহতরা হলেন- ওয়াসিম আকরাম, ফয়সাল আহমেদ শান্ত (২৪) ও মোহাম্মদ ফারুক (৩২)। এর মধ্যে ওয়াসিম আকরাম চট্টগ্রাম কলেজ ছাত্রদলের যুগ্ম আহ্বায়ক। তিনি ছুরিকাঘাতে মারা গেছেন। ওয়াসিম কলেজের রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের অনার্স থার্ড ইয়ারের ছাত্র। তার গ্রামের বাড়ি কক্সবাজারের পেকুয়ায়। এ ছাড়া নিহত ফয়সাল আহমেদ শান্ত নগরীর এমইএস কলেজের ছাত্র। তার পিঠে গুলির আঘাতের চিহ্ন রয়েছে। অন্যদিকে গুলিবিদ্ধ হয়ে মারা যাওয়া মোহাম্মদ ফারুক (৩২) স্থানীয় একটি ওয়ার্কশপের মিস্ত্রি। নিহত মোহাম্মদ ফারুকের গ্রামের বাড়ি নোয়াখালী। চট্টগ্রামে তিনজনের মৃত্যুর তথ্য নিশ্চিত করেছেন চমেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মোহাম্মদ তসলিম উদ্দীন।

রংপুরে দুপুর আড়াইটার দিকে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) কোটা সংস্কার আন্দোলনের অন্যতম সমন্বয়ক ও ইংরেজি বিভাগের ১২তম ব্যাচের শিক্ষার্থী আবু সাঈদ নিহত হন। আবু সাইদ রংপুরের পীরগঞ্জ উপজেলার বাবনপুরের বাসিন্দা মকবুল হোসেনের ছেলে। বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন বেরোবির ইংরেজি বিভাগের প্রধান আসিফ আল মতিন।

প্রত্যক্ষদর্শীরা জানান, আজ দুপুর ২টায় রংপুর খামার মোড় থেকে শিক্ষার্থীরা বিশাল মিছিল নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১নং ফটকের সামনে আসেন। এ সময় তারা বিভিন্ন স্লোগান দিতে থাকেন। শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে প্রবেশের চেষ্টা করলে পুলিশ বাধা দেয়। এতে পুলিশের সঙ্গে শিক্ষার্থীদের সংঘর্ষ বাধে। এ সময় পুলিশ প্রায় ২০০ রাউন্ড গুলি ও রাবার বুলেট ছোড়ে। পুলিশের গুলিতে আন্দোলনের সমন্বয়ক আবু সাঈদ নিহত হন।

প্রসঙ্গত, দেশজুড়ে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালের ৪ অক্টোবর সরকারি চাকরিতে নারী কোটা ১০ শতাংশ, মুক্তিযোদ্ধা কোটা ৩০ শতাংশ এবং জেলা কোটা ১০ শতাংশ বাতিল করে পরিপত্র জারি করে সরকার। সেখানে বলা হয়েছিল, ৯ম থেকে ১৩তম গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগের ক্ষেত্রে মেধার ভিত্তিতে নিয়োগ দিতে হবে। ওইসব গ্রেডের পদে সরাসরি নিয়োগে বিদ্যমান কোটা বাতিল করা হলো।

এ পরিপত্র চ্যালেঞ্জ করে রিট করেন মুক্তিযোদ্ধার সন্তান ও প্রজন্ম কমান্ড কাউন্সিলের সভাপতি অহিদুল ইসলামসহ সাত শিক্ষার্থী। এর প্রেক্ষিতে গত ৫ জুন ২০১৮ সালের জারিকৃত পরিপত্রটিকে অবৈধ বলে ঘোষণা করেন হাইকোর্ট। এরপর থেকেই সারা দেশে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ফুঁসে ওঠেন। কোটা পুনর্বহালের প্রতিবাদে নানা স্থানে বিক্ষোভ করেন কোটাবিরোধীরা। ঢাবি ছাড়াও বিক্ষোভ হয় জাবি, জবি, রাবি, সাত কলেজসহ দেশের স্বনামধন্য বিভিন্ন কলেজে।

আন্দোলন যখন তীব্র থেকে আরও তীব্রতর হচ্ছিল ঠিক তখন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) ক্যাম্পাসে সোমবার (১৫ জুলাই) কোটা সংস্কার দাবিতে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে দফায় দফায় সংঘর্ষ হয় ছাত্রলীগের। দুপক্ষের দফায় দফায় সংঘর্ষে ঢাবি এলাকা রণক্ষেত্রে পরিণত হয়। এ ঘটনায় অন্তত ২২০ জন আহত হয় বলে জানা গেছে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
ঘটনাপ্রবাহ: কোটাবিরোধী আন্দোলন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

দোহারে সালমান এফ রহমানকে প্রধান আসামি করে মামলা

সড়ক দুর্ঘটনায় মা-ছেলেসহ চারজন নিহত

সাবেক মন্ত্রী গোলাম দস্তগীর গাজীসহ ৫ জনের বিরুদ্ধে দুদকের অনুসন্ধান

চার কিলোমিটার রাস্তা সংস্কার করল বিজিবি ও ছাত্র-জনতা

ক্রিকেটে এই অবিস্মরণীয় জয় আমাদের প্রয়োজন ছিল : জিএম কাদের

বন্যার্তদের সহায়তায় প্রাইজমানির অর্থ দিলেন মুশফিক

মাছ ব্যবসায়ীকে গুলি করে হত্যা

শেখ হাসিনার আমলে সম্পাদিত ভারতের অসম চুক্তি বাতিল করুন : জাগপা 

জন্মদিন মানেই শান্তর জন্য বিশেষ কিছু

বন্যার্তদের সহায়তায় একদিনের বেতন দিচ্ছেন বেরোবি কর্মকর্তারা

১০

সালাউদ্দিন-জায়েদ-জয়সহ ৫০ জনের বিরুদ্ধে মামলা

১১

গোষ্ঠীশাসনতন্ত্রের জাল ভাঙতে প্রয়োজন ক্ষমতার যথাযথ বণ্টন ও বিকেন্দ্রীকরণ

১২

আহতদের চিকিৎসা সহায়তা দিলেন তারেক রহমান

১৩

গাজীপুরে চাকরি পুনর্বহালের দাবিতে জাতীয় বিশ্ববিদ্যালয়ে বিক্ষোভ

১৪

৬ ঘণ্টা পর বন্ধ হলো কাপ্তাই বাঁধের জলকপাট

১৫

অতিরিক্ত সচিব হলেন ১৩১ কর্মকর্তা

১৬

অটোরিকশা-মোটরসাইকেলের সংঘর্ষে নিহত ২

১৭

পাকিস্তানকে হারিয়ে বাংলাদেশের ইতিহাস

১৮

দখলদার, সন্ত্রাসী, লুটেরার রাজনীতি বাংলাদেশে চলবে না : আমির খসরু

১৯

মাঠের কোচ কি সাকিব!

২০
X