রাজধানীর বকশিবাজার শিক্ষাবোর্ড আবাসিক এলাকায় অবস্থিত ময়লার ভাগাড় নিয়ে চরম দুর্ভোগে পড়েছেন হাজার হাজার শিক্ষার্থী ও বাসিন্দারা। ময়লার বিকট দুর্গন্ধ আর মশা-মাছির উৎপাতে অতিষ্ঠ এলাকাবাসী। নাক চেপে পথ চলতে হয় তাদের। বাড়ছে ডেঙ্গুসহ নানা রোগে আক্রান্তের সংখ্যা। এছাড়া ময়লার ভাগাড়কে কেন্দ্র করে বেশ সংখ্যক ময়লার ভ্যান গাড়ি রেখে দেয়া ও টোকাইদের তৎপরতায় সরু রাস্তা দিয়ে পথচারীদের চলাচলে মারাত্মক বিঘ্ন ঘটে। সব মিলিয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ এই আবাসিক এলাকায় মানুষের বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়ছে বলে সংশ্লিষ্টদের অভিযোগ। জরুরি ভিত্তিতে ময়লার ভাগাড় অপসারণের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।
আরও পড়ুন : সামাজিক ও আইনি সমস্যায় ব্লকচেইন টেকসই সমাধান : পলক
এ বিষয়ে স্থানীয় বাসিন্দা আলহাব্ব ওয়ালী উল্লাহ চৌধুরী বলেন, আমাদের এখানে মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষাবোর্ড, মাদ্রাসা শিক্ষাবোর্ড, সরকারি আলীয়া মাদ্রাসা, বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়সহ অনেকগুলো আবাসিক ভবন বিদ্যমান। স্থানীয় বাসিন্দাদের পাশাপাশি শিক্ষা সংশ্লিষ্ট কাজে দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে প্রতিদিন হাজার হাজার শিক্ষক-শিক্ষার্থী এই এলাকায় আসা-যাওয়া করেন। অথচ গুরুত্বপূর্ণ এই আবাসিক এলাকার রাস্তা ময়লার ভাগাড়ে পরিণত হয়েছে। গত কয়েক মাস যাবত ছোট পরিসরে ময়লা-আবর্জনা রাখা হলেও দিন দিন এটা বৃদ্ধি পাচ্ছে। এরইমধ্যে আমরা বিশ্বস্ত সূত্রে জানতে পারলাম যে, এখানে ময়লার বড় ধরনের একটি ডিপো করার চিন্তা-ভাবনা করা হচ্ছে। যদি এটা করা হয়, তা হবে আত্মঘাতী ও অমানবিক একটি সিদ্ধান্ত। কারণ এখানে হাজার হাজার মানুষের বসবাস। এটা একটা আবাসিক এলাকা। বিদ্যাপিঠ সংশ্লিষ্ট গুরুত্বপূর্ণ একটি এলাকা। এখানে ময়লার ডিপো করলে মানুষের জন্য খুব কষ্টকর ও বসবাসের অযোগ্য হয়ে পড়বে।
তিনি বলেন, আমাদের এলাকায় উন্মুক্তভাবে ময়লা রাখার কারণে মশা-মাছির বিস্তারের পাশাপাশি বিকট দুর্গন্ধ ও মানুষের নানা রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা দিয়েছে। দুর্গন্ধ ও মশা-মাছির কারণে বাসা-বাড়িতেও থাকা যাচ্ছে না। সম্প্রতি ডেঙ্গু আক্রান্তের সংখ্যাও দিন দিন বাড়ছে। এই অবস্থায় অতি দ্রুত এখান থেকে ময়লার ভাগাড় না সরালে মানুষের বসবাস করা অসম্ভব হয়ে পড়বে।
আরও পড়ুন : বাজারে খোলা সয়াবিন তেল বিক্রি করা যাবে না
শিক্ষাবোর্ড ভবনের বাসিন্দা মো. রফিকুল ইসলাম জানান, তার বাসার পাশেই ময়লার ভাগাড়। যে কারণে বাচ্চাদের নিয়ে বসবাস করা দুষ্কর হয়ে পড়েছে। ময়লা-আবর্জনার দুর্গন্ধে অসম্ভব কষ্টের মধ্যে আছেন বলেও জানান তিনি।
নাসিমা সুলতানা নামের একজন অভিভাবক জানান, তার সন্তান স্থানীয় মোত্তালিব স্কুলে দ্বিতীয় শ্রেণিতে পড়ে। প্রতিদিন সন্তানকে নিয়ে স্কুলে যাওয়া আসা করতে হয় তাকে। এ সময় শিক্ষাবোর্ডর পাশের ময়লার ভাগাড়ের কারণে চরম দুর্ভোগের শিকার হতে হয়। স্কুল শিক্ষার্থী শিশুদের জন্য হলেও এই এলাকা থেকে ময়লার স্তূপ সরানো জরুরি।
বুয়েটের কয়েকজন কর্মকর্তা-কর্মচারী বলেন, আবাসিক এলাকা থেকে প্রতিদিন বুয়েট অফিসে যাওয়া-আসার সময় বোর্ড এলাকার ময়লার ভাগাড় এখন গলার কাটা হয়ে গেছে।
দেশের বিভিন্ন স্থান থেকে বোর্ড অফিসে আসা শিক্ষক-শিক্ষার্থীরাও দুর্ভোগের কথা জানিয়ে বলেন, দেশের গুরুত্বপূর্ণ এই শিক্ষাবোর্ড এলাকায় ময়লার ভাগাড় স্থাপনের বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। এতে বোর্ডে আগত মানুষের দুর্ভোগের পাশাপাশি সরকারের ভাবমূর্তিও নষ্ট হচ্ছে। রাজধানী ঢাকা শহরের পরিচ্ছন্নতা নিয়েও প্রশ্ন দেখা দিয়েছে।
আরও পড়ুন : আন্দোলনের নামে জনদুর্ভোগ সৃষ্টি করলে ব্যবস্থা : স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী
এলাকাবাসী জানান, বর্তমানে যেখানে ময়লার ভাগাড় বানানো হয়েছে সেখানে কিছুদিন আগেও একটি কমিউনিটি সেন্টার ছিল। হাজী গোলাম মোর্শেদ নামের ওই কমিউনিটি সেন্টারে প্রায় সময় নানা সামাজিক অনুষ্ঠানে এলাকাবাসীর জমজমাট পদচারণা থাকতো। কিন্তু সেটি ভেঙে ফেলে ময়লার ভাগাড় বানানোতে এলাকাবাসী বিস্মিত হয়েছে। দুই পাশে দুটি শিক্ষাবোর্ডের মাঝখানের গুরুত্বপূর্ণ এই রাস্তায় ময়লার ভাগাড় বানানো সম্পূর্ণ অযৌক্তিক ও আত্মঘাতী সিদ্ধান্ত। তাই অবিলম্বে ময়লার ভাগাড়টি সরিয়ে এলাকাবাসীর চলাচল ও বসবাসের স্বাভাবিক পরিবেশ ফিরিয়ে আনার জন্য ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়রসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের জরুরি হস্তক্ষেপ কামনা করেন তারা।
এ বিষয়ে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের ২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর ওমর বিন আব্দাল আজিজ কালবেলাকে বলেন, সেখানে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন (এসটিএস) নির্মাণ করা হচ্ছে। এখন যে খোলা ময়লাটি দেখা যাচ্ছে এসটিএস নির্মিত হলে সেগুলো আর থাকবে না।
মন্তব্য করুন