২০১৮ সালে আন্দোলন ও সহিংসতার ঘটনায় বিরক্ত হয়ে কোটা বাতিল করেছিলেন বলে জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১৪ জুলাই) বিকেলে চীন সফর নিয়ে গণভবনে অনুষ্ঠিত সংবাদ সম্মেলনে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে এ কথা বলেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, একবার তারা এ ধরনের আন্দোলন করেছিল। শুধু অন্দোলন না, তারা যে ধরনের ঘটনা ঘটাচ্ছিল, সাধারণ মানুষের ওপর আঘাত করা, কিছু জ্ঞানী-গুণী আছে ঘরের মধ্যে বসে থেকে মিথ্যা অপপ্রচার রেকর্ড করে ছেড়ে দিচ্ছিল। সমস্ত কিছু দেখে আমি খুব বিরক্ত হয়ে যাই। তখন একপর্যায়ে বলি- ঠিক আছে, কোটা বাদ দিয়ে দিলাম।
তিনি বলেন, আমার উদ্দেশ্য ছিল- দেখ, কোটা বাদ দিলে কী অবস্থা হয়। এখন কী অবস্থা হয়েছে তা দেখেন। এর মধ্যে এবার ফরেন সার্ভিসে মাত্র দুজন মেয়ে চান্স পেয়েছে ও পুলিশ সার্ভিসে মাত্র চারজন মেয়ে চান্স পেয়েছে।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আন্দোলন করছে তারা আইন মানবে না, আদালত মানবে না, সংবিধান কী সেটা তারা চেনে না। একটা কাজ করতে গেলে তার যে নীতিমালা, বিধিমালা বা ধারা থাকে বা একটা সরকার কীভাবে চলে এ সম্পর্কে কোনো ধারণাই এদের নেই, কোনো জ্ঞানই নেই।
তিনি বলেন, তারা পড়াশোনা করছে, ভালো নম্বর পাচ্ছে সেটা ঠিক। কিন্তু ভবিষ্যতে এরা তো নেতৃত্ব দেবে, এ ধারণাগুলো তাদের তো দরকার। আমাদের সংবিধান কী বলে সেটা তাদের জানা উচিত। একটা রাষ্ট্র পরিচালনায় কী ধরনের কাজকর্ম চলে সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা আছে? সে ধারণা তো আমরা দেখি না। যেটা আদালতে চলে গেল সেটা আদালত দেখবে। আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা আদালতে যাক, তাদের বিষয়গুলো বলুক। না তারা রাজপথেই সমাধান করবে। বিষয়টা যখন আদালতে চলে গেছে সেখান থেকে আদালত রায় দিয়েছে সেখানে তো আমার কিছু বলার নেই, এটা সংবিধানও বলে না।
আদালতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আদালতে বিষয়টি চলে গেছে আমাদের কিছু করার নেই। সংসদেরও কিছু করার নেই। তারা রাজপথে সমাধান করবে, তারা আন্দোলন করুক। তারা যতক্ষণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবে করে যাক। কিন্তু কোনো ধ্বংসাত্মক কিছু করলে, পুলিশকে মারধর করলে, পুলিশের গাড়ি পোড়ালে তখন আইন তার আপন গতিতে চলবে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতি কোটা পাবে না তাহলে কী রাজাকারের নাতি-পুতিরা কোটা পাবে? সেটা আমার প্রশ্ন। দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন। মুক্তিযোদ্ধারা খেয়ে না খেয়ে কাদামাটি মাখিয়ে তারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল বলেই আজ দেশ স্বাধীন। আজ সবাই বড় বড় পদে আসীন। নইলে তো ওই পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে চলতে হতো।
তিনি বলেন, এখন যারা লাফাচ্ছে তারা মনে হয় পনেরো-বিশ বছর আগের বিষয়টিও জানে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বাংলাদেশের অবস্থা কী ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি, আর সেশন জট। কোনো সেমিস্টার সিস্টেম ছিল না। গ্রেডিং পদ্ধতি ছিল না, বহু সাবজেক্ট ছিল না। কারিকুলামে পরিবর্তন আনা, সেমিস্টার সিস্টেম আনা, গ্রেডিং পদ্ধতি আনা- সব কিছুই কিন্তু আওয়ামী লীগ এনে দিয়েছে।
মন্তব্য করুন