কোটা নিয়ে যারা আন্দোলন করছে, তারা আইন বোঝে না বলে মন্তব্য করেছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা।
রোববার (১৪ জুলাই) বিকেল ৪টায় গণভবনে চীন সফর নিয়ে এক সংবাদ সম্মেলনে এক প্রশ্নের জবাবে এ মন্তব্য করেন তিনি।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যারা আন্দোলন করছে তারা আইন মানবে না, আদালত মানবে না, সংবিধান কী সেটা তারা চেনে না। একটা কাজ করতে গেলে তার যে নীতিমালা, বিধিমালা বা ধারা থাকে বা একটা সরকার কীভাবে চলে এ সম্পর্কে কোনো ধারণাই এদের নেই, কোনো জ্ঞানই নেই।
তিনি বলেন, তারা পড়াশোনা করছে, ভালো নম্বর পাচ্ছে সেটা ঠিক। কিন্তু ভবিষ্যতে এরা তো নেতৃত্ব দেবে, এ ধারণাগুলো তাদের তো দরকার। আমাদের সংবিধান কী বলে সেটা তাদের জানা উচিত। একটা রাষ্ট্র পরিচালনায় কী ধরনের কাজকর্ম চলে সে সম্পর্কে তাদের কোনো ধারণা আছে? সে ধারণা তো আমরা দেখি না। যেটা আদালতে চলে গেল সেটা আদালত দেখবে। আদালত তাদের সুযোগ দিয়েছে। তারা আদালতে যাক, তাদের বিষয়গুলো বলুক। না তারা রাজপথেই সমাধান করবে। বিষয়টা যখন আদালতে চলে গেছে সেখান থেকে আদালত রায় দিয়েছে সেখানে তো আমার কিছু বলার নেই, এটা সংবিধানও বলে না।
আদালতের প্রসঙ্গ উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, যেহেতু আদালতে বিষয়টি চলে গেছে আমাদের কিছু করার নেই। সংসদেরও কিছু করার নেই। তারা রাজপথে সমাধান করবে, তারা আন্দোলন করুক। তারা যতক্ষণ শান্তিপূর্ণ আন্দোলন করবে করে যাক। কিন্তু কোনো ধ্বংসাত্মক কিছু করলে, পুলিশকে মারধর করলে, পুলিশের গাড়ি পোড়ালে তখন আইন তার আপন গতিতে চলবে। এখানে আমাদের কিছু করার নেই।
মুক্তিযোদ্ধা কোটার প্রসঙ্গ তুলে শেখ হাসিনা বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে এত ক্ষোভ কেন? মুক্তিযোদ্ধাদের নাতি-পুতি কোটা পাবে না তাহলে কী রাজাকারের নাতি-পুতিরা কোটা পাবে? সেটা আমার প্রশ্ন। দেশবাসীর কাছে প্রশ্ন। মুক্তিযোদ্ধারা খেয়ে না খেয়ে কাদামাটি মাখিয়ে তারা যুদ্ধ করে দেশ স্বাধীন করেছিল বলেই আজ দেশ স্বাধীন। আজ সবাই বড় বড় পদে আসীন। নইলে তো ওই পাকিস্তানিদের বুটের লাথি খেয়ে চলতে হতো।
তিনি বলেন, এখন যারা লাফাচ্ছে তারা মনে হয় পনেরো-বিশ বছর আগের বিষয়টিও জানে না। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসার আগে বাংলাদেশের অবস্থা কী ছিল। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ সব বিশ্ববিদ্যালয়ে ছিল অস্ত্রের ঝনঝনানি, আর সেশন জট। কোনো সেমিস্টার সিস্টেম ছিল না। গ্রেডিং পদ্ধতি ছিল না, বহু সাবজেক্ট ছিল না। কারিকুলামে পরিবর্তন আনা, সেমিস্টার সিস্টেম আনা, গ্রেডিং পদ্ধতি আনা- সব কিছুই কিন্তু আওয়ামী লীগ এনে দিয়েছে।
এর আগে প্রধানমন্ত্রী বলেন, চীনের ব্যবসায়ীরা বাংলাদেশে রিয়েল এস্টেট (আবাসন) এবং হসপিটালিটি খাতে বিনিয়োগে আগ্রহ দেখিয়েছে। দ্বিপাক্ষিক সফরে আমি গত ৮ থেকে ১০ জুলাই চীন সফর করি। ৮ জুলাই বেইজিং পৌঁছলে বিমানবন্দরে আমাকে লালগালিচা সংবর্ধনার মাধ্যমে স্বাগত জানানো হয়। ৯ জুলাই সকালে এশিয়ান ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট ব্যাংকের (এআইআইবি) প্রেসিডেন্ট জিন লিকুন আমার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎ করেন। আমি এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ উপযোগী খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানাই। এরপর আমি ‘দ্য রাইজ অব বেঙ্গল টাইগার : সামিট অন ট্রেড, বিজনেস অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট অপরচুনিটিজ বিটুইন বাংলাদেশ অ্যান্ড চায়না’ শীর্ষক একটি ব্যবসায়িক সম্মেলনে অংশগ্রহণ করি। সেখানে বাংলাদেশ ও চীনের ব্যবসায়ীরা অংশ নেন।
তিনি বলেন, সম্মেলনে আমি চীনা ব্যবসায়ী সম্প্রদায়কে বিশ্বের সবচেয়ে উদার বিনিয়োগ ব্যবস্থার সুবিধা নিয়ে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আমন্ত্রণ জানাই। এ সময় অবকাঠামো, আইসিটি, পর্যটন, কৃষি প্রক্রিয়াকরণ শিল্প, নবায়নযোগ্য জ্বালানিসহ জ্বালানি খাত, জলবায়ু-সহনশীল স্মার্ট ফার্মিং, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা, সবুজ প্রযুক্তি ও উন্নয়ন খাতে বৃহত্তর বিনিয়োগের আহ্বান জানাই।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশে তিনটি বিশেষ পর্যটন অঞ্চল প্রতিষ্ঠার পরিকল্পনা ও সেখানে চীন রিয়েল এস্টেট এবং হসপিটালিটি খাতে বিনিয়োগের সুযোগের কথা উল্লেখ করলে চীনের ব্যবসায়ীরা এ বিষয়ে যথেষ্ট আগ্রহ দেখান। একই সঙ্গে এআইআইবিকে বাংলাদেশের অবকাঠামো উন্নয়ন, নদী খনন, জলবায়ু পরিবর্তনসহ উপযোগী খাতে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছি।
তিনি আরও জানান, এই সম্মেলনে চীনের ভাইস মিনিস্টার অব কমার্স লি ফেই, চায়না কমিউনিকেশনস কনস্ট্রাকশন গ্রুপ কোম্পানি লিমিটেডের চেয়ারম্যান ওয়াং টং ঝু, এইচএসবিসি চায়নার প্রেসিডেন্ট ও সিইও মার্ক ওয়াং, হুয়াওয়ের সিনিয়র ভাইস প্রেসিডেন্ট সাইমন লিন বক্তব্য দেন এবং তাদের আগ্রহের কথা তুলে ধরেন। এ সম্মেলনে বাংলাদেশের ১০টি কোম্পানির প্রতিনিধির সঙ্গে চীনের বিভিন্ন কোম্পানির ১৬টি সমঝোতা স্মারক ও চুক্তি সই হয়।
মন্তব্য করুন