সকল গ্রেডে অযৌক্তিক এবং বৈষম্যমূলক কোটা বাতিল করে সংবিধানে উল্লিখিত অনগ্রসর গোষ্ঠীর জন্য কোটাকে ন্যূনতম মাত্রায় এনে সংসদে আইন পাস করে কোটাপদ্ধতিকে সংস্কার করার দাবিতে দেশব্যাপী অবরোধ কর্মসূচি চালিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা।
এমনতাবস্থায়, তাদের উদ্দেশ্য করে ছাত্রলীগ বলছে, আন্দোলনের নামে অনিঃশেষ অবরোধ কার্যক্রম পরিচালনা কোনোভাবেই দাবির সুষ্ঠু সমাধান নিয়ে আসতে পারে না। তারা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে গিয়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিবেশ স্বাভাবিক রাখবে এটাই প্রত্যাশা।
বৃহস্পতিবার (১১ জুলাই) দুপুর ১২টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মধুর ক্যান্টিনে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিবেশ অব্যাহত রাখা, জনদুর্ভোগ তৈরি না করে ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে আসা এবং কোটা ইস্যুর যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক ও ইতিবাচক সমাধানের দাবিতে আয়োজিত ছাত্রলীগের সংবাদ সম্মেলনে এ মন্তব্য করেন সংগঠনটির সভাপতি সাদ্দাম হোসেন।
এক লিখিত বক্তব্যে সাদ্দাম বলেন, বিদ্যমান প্রতিটি বাস্তবতা বিবেচনায় নিয়ে বাংলাদেশ ছাত্রলীগ মনে করে, কোটা ব্যবস্থায় একটি যৌক্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধান ও সংস্কার আনায়ন করা এই মুহূর্তে সবচেয়ে জরুরি পদক্ষেপ। এই পদক্ষেপ বাস্তবায়নে কোনো হঠকারিতা নয়, তাড়াহুড়ো নয়, কোনো অবরোধ বা জিম্মি পরিস্থিতি তৈরি করে ‘স্পট ডিসসিশন’ গ্রহণ করা নয়। কোটাব্যবস্থার সময়োপযোগী সংস্কার আনয়নের জন্য একটি সমন্বিত রাষ্ট্রীয় উদ্যোগের মাধ্যমে সংশ্লিষ্ট সব পক্ষের সঙ্গে আলোচনা সাপেক্ষে, বৈশ্বিক প্রেক্ষাপটে বর্তমান ও ভবিষ্যৎ রাষ্ট্রকাঠামোর প্রেক্ষিতে একটি যৌক্তিক, অন্তর্ভুক্তিমূলক, স্থায়ী সমাধান উদ্যোগ প্রয়োজন। এমন উদ্যোগে এদেশের ছাত্রসমাজ, তরুণ প্রজন্ম তাদের মেধা-মনন দিয়ে একটি উপযুক্ত ব্যবস্থা প্রণয়নে সক্রিয়ভাবে ভূমিকা রাখতে পারে। কিন্তু তেমন কোনো সমন্বিত উদ্যোগের আহ্বান না জানিয়ে, এমনকি আদালতের চূড়ান্ত রায় পর্যন্ত অপেক্ষা না করেই কেন এই অনিঃশেষ আন্দোলন?
তিনি বলেন, হাইকোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে সরকার আপিল করেছে, বর্তমানে যা বিচারাধীন বিষয়। একটি বিষয় যখন আলদালতের গণ্ডিতে প্রবেশ করে তখন তার সমাধান আইনের কাঠামোতেই হতে হয় এবং এর জন্য প্রয়োজনীয় সময় অপেক্ষ করতে হয়। একথা কি তথাকথিত আন্দোলনকারীরা জানে না? পাশাপাশি হাইকোর্টের পৃথক আরেকটি রায়ে যখন স্ট্যাটাস কো অবস্থা জারি করে সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিলের সিদ্ধান্ত বহাল রাখা হয়েছে সেহেতু আইনের পরবর্তী ধাপগুলো পর্যন্ত অপেক্ষা না করে কেন জনসাধারণ বিরোধী এই অবরোধ অব্যাহত রাখতে হবে তা এদেশের মানুষ জানতে চায়।
সাদ্দাম হোসেন আরও বলেন, দেশের আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগের পার্থক্য সম্পর্কে আমাদের জানতে হবে। রাষ্ট্র ব্যবস্থার পৃথক ৩টি কাঠামো আইন, বিচার ও নির্বাহী বিভাগ। প্রতিটি বিভাগ পৃথক ও স্বাধীনভাবে কাজ করে এবং একটি অন্যটির কাজে হস্তক্ষেপ করে না। কোটা বতিলের নির্বাহী আদেশ যেহেতু বিচার বিভাগ থেকে বাতিল করা হয়েছে সেহেতু আদালতে এটির কার্যক্রম শেষ হবার পরই কেবল আইন ও নির্বাহী বিভাগ নতুন করে নিজেদের সিদ্ধান্ত নিতে পারে এবং ততদিন অপেক্ষা করতে হবে। রাষ্ট্র কাঠামোর এই বেসিক বিষয় না বুঝে জনগণকে জিম্মি করে তথাকথিত আন্দোলন চালানো হলে আন্দোলনকারীদের এটিও মনে রাখা দরকার যে, এদেশের আইন বিভাগ সার্বভৌম, বিচার বিভাগ স্বাধীন এবং নির্বাহী বিভাগ জনগণের ভোটে প্রতিষ্ঠিত। তাই অহেতুক কোনো উদ্দেশ্যপ্রণোদিত আন্দোলনের কাছে কেউ নতি শিকার করবে না।
এ সময় ছাত্রসমাজের প্রতি ছাত্রলীগ সভাপতি বেশকিছু আহ্বান জানান। সেগুলো হলো- আন্দোলনের নামে অনিঃশেষ অবরোধ কার্যক্রম পরিচালনা কোনোভাবেই দাবির সুষ্ঠু সমাধান নিয়ে আসতে পারে না; চলমান এইচএসসি পরীক্ষা, তীব্র তাপদাহ এবং মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাত্রার মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো বিবেচনায় নিয়ে সড়ক অবরোধ, নিরবিচ্ছিন্ন যোগাযোগ ব্যবস্থা ও জীবনযাত্রায় বাধা সৃষ্টি এবং ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের কর্মসূচি থেকে তাদের অবিলম্বে ফিরে আসতে হবে; শিক্ষার্থীদের মনে রাখতে হবে, কোটা ব্যবস্থা বাতিল করেছে দেশরত্ন শেখ হাসিনার সরকার। উচ্চ আদালতে কোটা ব্যবস্থা বাতিলের সিদ্ধান্ত পুনর্বহালের জন্য কাজ করছে সরকারের আইনজীবী; তাই দেশরত্ন শেখ হাসিনার প্রতি আস্থা রেখে স্বাভাবিক আইনগত প্রক্রিয়ায় কোটাসংক্রান্ত জটিলতার যৌক্তিক সমাধান নিয়ে আসার জন্য শিক্ষার্থীদের সবরকম বিশৃঙ্খলাপূর্ণ কর্মকাণ্ড থেকে বিরত থাকতে হবে; কোটা সংক্রান্ত বিষয়টি আদালতে বিচারাধীন এবং কেউই দেশের প্রচলিত আইনের ঊর্ধ্বে নয় বিধায় আইনি প্রক্রিয়াতেই এর চূড়ান্ত, স্থায়ী, যৌক্তিক ও অন্তর্ভুক্তিমূলক সমাধানের দিকে এগুতে হবে; এক্ষেত্রে দেশের শিক্ষার্থী সমাজের নির্ভরতার প্রতীক দেশরত্ন শেখ হাসিনা তাদের পাশে রয়েছেন। বাংলাদেশ ছাত্রলীগ তাদের পাশে রয়েছেন; তারা ক্লাস-পরীক্ষায় ফিরে গিয়ে, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের একাডেমিক পরিবেশ স্বাভাবিক রাখবে এটিই সকলে প্রত্যাশা করে।
বাংলাদেশ ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক শেখ ওয়ালী আসিফ ইনানের সঞ্চালনায় সংবাদ সম্মেলনে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি মাজহারুল কবির শয়ন ও সাধারণ সম্পাদক তানভীর হাসান সৈকত এবং ঢাকা মহানগর উত্তর ও দক্ষিণের নেতৃবৃন্দসহ বিভিন্ন শাখা ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা উপস্থিত ছিলেন।
মন্তব্য করুন