বাজারে ব্র্যান্ডভেদে ৭০ হাজার টাকায় যে ল্যাপটপ পাওয়া যায়, সেই ল্যাপটপ একেকটি কেনা হয়েছে ৫ লাখ ৭২ হাজার টাকায়। এছাড়া রাউটার, প্রিন্টার, স্লিপ প্রিন্টার, এসিসহ বিভিন্ন পণ্য বাজার দরের চেয়ে কেনা হয়েছে কয়েকগুন বেশি দামে। বিদ্যুৎ বিতরণকারী রাষ্ট্রীয় সংস্থা পল্লী বিদ্যুতায়ন বোর্ডের (আরইবি) সাম্প্রতিক কেনাকাটায় এমন নজিরবিহীন অনিয়ম-দুর্নীতির তথ্য সামনে এসেছে।
‘প্রি-পেমেন্ট ই-মিটারিং ইন ঢাকা ডিভিশন আন্ডার রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন প্রোগ্রাম (ফেইজ-১)’ নামে একটি প্রকল্পের আওতায় ১১টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জন্য এসব মালপত্র কিনেছে আরইবি।
প্রকল্পের আওতায় পাঁচটি সমিতিতে বেসরকারি প্রতিষ্ঠান ওয়েশন গ্রুপ লিমিটেড (ডব্লিউজিএল) এবং অপর ছয়টি সমিতিতে মালপত্র সরবরাহ করেছে হেক্সিং ইলেকট্রিক্যাল কোম্পানি লিমিটেড (এইচইএল)। একই প্রকল্পের আওতায় একই কাজের জন্য দুই ধাপে এসব মালপত্র কেনা হলেও প্রতিষ্ঠান দুটির দামের ক্ষেত্রে রয়েছে বিশাল পার্থক্য।
তিনটি সমিতিতে ৫০টি এইচপি ব্র্যান্ডের ডেস্কটপ কম্পিউটার (কোর আই ফাইভ) সরবরাহ করেছে ওয়েশন গ্রুপ লিমিটেড (ডব্লিউজিএল)। প্রতিটি কম্পিউটারের দাম ৫ লাখ ৭২ হাজার ৮৬২ টাকা হিসাবে মোট ২ কোটি ৮৬ লাখ ৪৩ হাজার টাকা নিয়েছে প্রতিষ্ঠানটি। অথচ বাজারে ওই মানের একটি কম্পিউটারের দাম ৬০-৬৫ হাজার টাকা।
অন্যদিকে একই প্রকল্পে তিনটি সমিতিতে ৪০টি একই ধরনের কম্পিউটার সরবরাহ করেছে এইচইএল। তারা একেকটি কম্পিউটারের দাম ধরেছে মাত্র ৫৭ হাজার টাকা। যার মোট মূল্য ২২ লাখ ৮০ হাজার টাকা।
এসব প্রকল্পে সরবরাহ করা এইচপি ব্র্যান্ডের একেকটি ল্যাপটপের দাম (কোর আই ফাইভ, ১৫ ইঞ্চি) প্রায় ৪ লাখ ৮৬ হাজার টাকা নিয়েছে ডব্লিউজিএল। অথচ জেনুইন অপারেটিং সিস্টেমসহ এই মানের ল্যাপটপের ব্রান্ডভেদে বাজারমূল্য ৭০-৯৫ হাজার টাকা। আর এইচইএল সরবরাহ করেছে ১ লাখ ১ হাজার ৭৬১ টাকা করে ৩৮টি ল্যাপটপ।
এসব মালামাল কেনায় ‘শুভংকরের ফাঁকির’ কৌশল হিসেবে প্রতিটি পণ্যের সঙ্গে প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার সরবরাহের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। কম্পিউটারের সঙ্গে উইনডোজ অপারেটিং সিস্টেমের একটি নিবন্ধনকৃত সফটওয়্যার সরবরাহ করা হয়েছে। কিন্তু যে ব্র্যান্ডের কম্পিউটারটি কেনা হয়েছে তাতে প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান নিবন্ধনকৃত ওই সফটওয়্যার ফ্রি দিয়ে থাকে।
দেশের ৮০টি পল্লী বিদ্যুৎ সমিতির জন্য বিভিন্ন সময়ে প্রয়োজনীয় মালপত্র কিনে থাকে আরইবি। ‘প্রি-পেমেন্ট ই-মিটারিং ইন ঢাকা ডিভিশন আন্ডার রুরাল ইলেকট্রিফিকেশন প্রোগ্রাম (ফেইজ-১)’ প্রকল্পের আওতায় নজিরবিহীন এসব অনিয়ম-দুর্নীতির খবর প্রকাশ করেছে দেশের অন্যতম শীর্ষ গণমাধ্যম দেশ রূপান্তর।
কেনাকাটায় এই অনিয়মের বিষয়ে কথা বলতে আরইবির চেয়ারম্যান অজয় কুমার চক্রবর্তীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, আমি একটি জরুরি মিটিংয়ে আছি। তবে বিভিন্ন সময়ে আরইবির কেনাকাটার তথ্য যাচাই করলে বিপুল পরিমাণ অনিয়ম দুর্নীতির চিত্র উঠে আসবে বলে অভিযোগ করেছেন সংস্থাটির একাধিক কর্মকর্তা।
কেনাকাটায় অনিয়মের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রকল্প পরিচালক আরইবির বর্তমান পরিচালক (কারিগরি) মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, দরপত্রের মাধ্যমে মালপত্রগুলো কেনা হয়েছে। যথাযথ নিয়ম মেনে সব আইটেম মিলে সর্বনিম্ন দরদাতাকেই কাজ দেওয়া হয়েছে। এখানে কোনো ধরনের অনিয়ম-দুর্নীতি হয়নি।
মন্তব্য করুন