সরকারি চাকরিতে মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ কোটাপদ্ধতি বাতিলের সিদ্ধান্ত বহালে উচ্চ আদালতের রায়ের প্রতিবাদে এবং ২০১৮ সালের পরিপত্র পুনর্বহালের দাবিতে আন্দোলন করছেন শিক্ষার্থীরা। এর ফলে দীর্ঘ দুই ঘণ্টারও বেশি সময় ধরে সায়েন্সল্যাব মোড়ে যানচলাচল বন্ধ রয়েছে। এর ফলে ওই মোড়ের চতুর্দিকে আটকা পড়েছে কয়েকশ গাড়ি। তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট। চরম ভোগান্তিতে পড়েছেন ব্যক্তিগত ও গণপরিবহনের যাত্রীরা।
রোববার (৭ জুলাই) দুপুর ১টা ৪০ মিনিট থেকে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ এই মোড় অবরোধ করেন শিক্ষার্থীরা।
সড়ক অবরোধের কারণে তৈরি হওয়া যানজটে অচল হয়ে পড়েছে নিউমার্কেট, নীলক্ষেত ও সায়েন্সল্যাবসহ আশপাশের গোটা এলাকা। নীলক্ষেত থেকে সায়েন্সল্যাব অভিমুখী সড়ক, শাহবাগ থেকে সায়েন্সল্যাব অভিমুখী সড়ক, ধানমন্ডি এবং মোহাম্মদপুর থেকে সায়েন্সল্যাবমুখী সব সড়কেই তৈরি হয়েছে তীব্র যানজট। সবগুলো সড়কে যানবাহনের দীর্ঘ সারি দেখা গেছে।
পুরো কর্মসূচিতে আন্দোলনকারীদের ‘কোটা প্রথা বাতিল চাই’; ‘আঠারোর পরিপত্র পুনর্বহাল করতে হবে’; ‘রক্তের বন্যায় ভেসে যাবে অন্যায়’; ‘৫২ এর হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার’; ‘ছাত্রসমাজের একশন ডাইরেক্ট একশন’; ‘বঙ্গবন্ধুর বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’; ‘মেধা যার, চাকরি তার’; ‘সারা বাংলায় খবর দে কোটাপ্রথা কবর দে’; ‘মুক্তিযুদ্ধের বাংলায় বৈষম্যের ঠাঁই নাই’; ‘জেগেছে রে জেগেছে ছাত্রসমাজ জেগেছে’; ‘সংবিধানের মূলকথা সুযোগের সমতা’; ‘লেগেছে রে লেগেছে রক্তে আগুন লেগেছে’; ‘৭১ এর হাতিয়ার গর্জে উঠো আরেকবার’; ‘কোটা না মেধা, মেধা মেধা’; ‘আপস না সংগ্রাম, সংগ্রাম সংগ্রাম’ ইত্যাদি সংবলিত স্লোগান দিতে দেখা যায়।
এ ছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় ও আশপাশের এলাকার বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ জায়গার মোড়ে মোড়ে অবস্থান নিয়ে রাস্তা অবরোধও করছেন আন্দোলনকারীরা। বিশেষ করে, শাহবাগ মোড়ে ঢাবির শামসুন্নাহার হল, বাংলাদেশ-কুয়েত মৈত্রী হল, বেগম রোকেয়া হল, সুফিয়া কামাল হল, বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেসা মুজিব হল, মাস্টারদা সূর্যসেন হল, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, বিজয় একাত্তর হল, কবি জসীম উদ্দিন হল, এ এফ রহমান হল, শহীদ সার্জেন্ট জহুরুল হক হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল ও জগন্নাথ হল; চানখারপুলে ড. মোহাম্মদ শহীদুল্লাহ হল, ফজলুল হক মুসলিম হল, অমর একুশে হল, বেগম বদরুন্নেসা সরকারি মহিলা কলেজ ও শেখ বোরহানউদ্দিন পোস্ট গ্রাজুয়েট কলেজ এবং সায়েন্সল্যাবে ঢাকা কলেজ, ইডেন মহিলা কলেজ ও গার্হস্থ্য অর্থনীতি ইনস্টিটিউটের শিক্ষার্থীরা রাস্তা অবরোধ করে রেখেছে বলে জানা গেছে।
কোটাবৈষম্য নিরসন এবং দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে শিক্ষার্থীদের পক্ষ থেকে চার দফা দাবি জানানো হয়েছে। সেগুলো হলো- ২০১৮ সালে ঘোষিত সরকারি চাকরিতে কোটা পদ্ধতি বাতিল ও মেধাভিত্তিক নিয়োগের পরিপত্র বহাল রাখতে হবে; ১৮ এর পরিপত্র বহাল সাপেক্ষে কমিশন গঠন করে দ্রুত সময়ের মধ্যে সরকারি চাকরিতে (সব গ্রেডে) অযৌক্তিক ও বৈষম্যমূলক কোটা বাদ দিতে হবে এবং কোটাকে ন্যূনতম পর্যায়ে নিয়ে আসতে হবে। সেক্ষেত্রে সংবিধান অনুযায়ী কেবল অনগ্রসর জনগোষ্ঠীর কথা বিবেচনা করা যেতে পারে; সরকারি চাকরির নিয়োগ পরীক্ষায় কোটা সুবিধা একাধিকবার ব্যবহার করা যাবে না এবং কোটায় যোগ্য প্রার্থী না পাওয়া গেলে শূন্যপদগুলোতে মেধা অনুযায়ী নিয়োগ দিতে হবে; দুর্নীতিমুক্ত, নিরপেক্ষ ও মেধাভিত্তিক আমলাতন্ত্র নিশ্চিত করতে কার্যকর ব্যবস্থা নিতে হবে।
প্রসঙ্গত, সরকারি চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা বাতিল করে ২০১৮ সালে সরকারের জারি করা পরিপত্র পুনর্বহালসহ কয়েকটি দাবিতে শিক্ষার্থী ও চাকরিপ্রত্যাশীরা আন্দোলন করছেন। যদিও স্বাধীনতার পর থেকেই বিভিন্ন শ্রেণির চাকরিতে কোটা ব্যবস্থা চলে আসছিল। একপর্যায়ে কোটা সংস্কারের দাবিতে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে ২০১৮ সালের অক্টোবরে নবম থেকে ১৩তম গ্রেডের (প্রথম ও দ্বিতীয় শ্রেণি) সরকারি চাকরিতে কোটা বাতিল করে পরিপত্র জারি করেছিল জনপ্রশাসন মন্ত্রণালয়।
মন্তব্য করুন