সিলেট অঞ্চলের নদীর পানি কমতির দিকে থাকলেও দেশের উত্তর ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের নদীর পানি বাড়তে পারে বলে আভাস দিয়েছে বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্র। এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, আগামীকাল রোববার রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগে ভারি বৃষ্টি হতে পারে। অন্যত্র হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি হতে পারে।
এবারের বর্ষায় ভারি বৃষ্টিপাতের সঙ্গে বন্যার শঙ্কা করছেন আবহাওয়াবিদরা। তারা বলছেন, বছরের সবচেয়ে বেশি বৃষ্টি হয় জুলাইয়ে। তবে এবার বৃষ্টির পরিমাণ অন্য বছরের তুলনায় বেশি হবে এবং এই মৌসুমে দেশের বিভিন্ন স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা হতে পারে। দেশের উত্তরাঞ্চলে এ বন্যা পরিস্থিতি তীব্র হতে পারে।
জুলাইয়ের আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রতিবেদন বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, চলতি মাসে মৌসুমি ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে দেশের উত্তরাঞ্চল, উত্তর-পূর্বাঞ্চল, উত্তর-পশ্চিমাঞ্চল, উত্তর-মধ্যাঞ্চল এবং মধ্যাঞ্চলের কয়েকটি স্থানে স্বল্প থেকে মধ্যমেয়াদি বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। অন্যদিকে দক্ষিণ-পূর্ব পার্বত্য অববাহিকার কয়েকটি স্থানে স্বল্পমেয়াদি আকস্মিক বন্যা পরিস্থিতির সৃষ্টি হতে পারে।
শনিবার (৬ জুলাই) কেন্দ্রের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, এদিন দেশের ১০টি নদীর পানি ২১টি পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে বইছিল। ওই সময় বন্যা পূর্বাভাস কেন্দ্রের ১১০টি স্টেশনের মধ্যে ৪২টি পয়েন্টে পানি কমার প্রবণতা দেখা গেলেও ৬৩ পয়েন্টে বাড়ছিল আর অপরিবর্তিত ছিল পাঁচ পয়েন্টে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় উত্তরাঞ্চলের তিস্তা, ধরলা, দুধকুমার ও ঘাঘট নদীর পানি সময় বিশেষে দ্রুত বাড়তে পারে।
তাতে তিস্তা নদীর পানি কিছু পয়েন্টে স্বল্পমেয়াদে বিপৎসীমার উপর দিয়ে প্রবাহিত হতে পারে এবং ধরলা, দুধকুমার ও ঘাঘট নদী সংলগ্ন কুড়িগ্রাম ও গাইবান্ধা জেলার কিছু নিম্নাঞ্চলে বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা অবনতি হতে পারে। এসময়ে দেশের উত্তরাঞ্চল ও উত্তর-পশ্চিমাঞ্চলের যমুনাশ্বরী, করতোয়া, বাঙ্গালী, আপার করতোয়া, পুর্নভবা, টাঙ্গন, ইছামতি-যমুনা, আত্রাই, মহানন্দা এবং ছোট যমুনা নদীর পানিও বাড়তে পারে। তবে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রধান নদীগুলোর পানি সার্বিকভাবে কমছে, এ অবস্থা আগামী ২৪ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে বলে জানিয়েছে কেন্দ্র। তাতে এ সময়ে এই এলাকার নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতির কিছুটা উন্নতি হতে পারে।
বন্যা পূর্বভাস কেন্দ্র বলছে, ব্রহ্মপুত্র নদীর পানি স্থিতিশীল আছে; আগামী ২৪ ঘণ্টায় কমতে পারে। এদিকে যমুনা নদীর পানি বাড়ছে, পরবর্তী ২৪ ঘণ্টায় স্থিতিশীল থাকতে পারে। গঙ্গা-পদ্মা নদীর পানিও বাড়ছে, যা আগামী ৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত অব্যাহত থাকতে পারে। আগামী ২৪ ঘণ্টায় কুড়িগ্রাম, জামালপুর, গাইবান্ধা, বগুড়া, টাঙ্গাইল ও সিরাজগঞ্জ জেলার ব্রহ্মপুত্র-যমুনা নদী সংলগ্ন নিম্নাঞ্চলের বন্যা পরিস্থিতি স্থিতিশীল থাকতে পারে। তবে পরবর্তী ৪৮ ঘণ্টায় পদ্মা নদীর গোয়ালন্দ পয়েন্টে বিপৎসীমার উপর দিয়ে পানি প্রবাহিত হতে পারে।
বন্যা পূর্বাভাস ও সতর্কীকরণ কেন্দ্রের নির্বাহী প্রকৌশলী সরদার উদয় রায়হান বলেন, এখন যেহেতু বর্ষা মৌসুম, তাই প্রতি বছরই এ সময়ে স্বল্প ও মধ্যমেয়াদি বন্যা হয়। আমাদের গঙ্গা, ব্রহ্মপুত্র ও মেঘনা নদীর অববাহিকার মাত্র ১০ শতাংশ বাংলাদেশে। ৯০ শতাংশের বেশি পানি আসে ভারত থেকে। বর্ষা মৌসুমে এই পানি আসার প্রভাবে বন্যা পরিস্থিতি তীব্র হচ্ছে। বর্তমানে আটটি নদীর ২১টি পয়েন্টে পানি বিপৎসীমার ওপর দিয়ে প্রবাহিত হচ্ছে।
তিনি বলেন, পরিস্থিতি সামগ্রিকভাবে স্থিতিশীল থাকতে পারে। ৭ তারিখের দিকে উন্নতির দিকে যাবে, তবে পুরোপুরি স্বাভাবিক হতে ১১ তারিখ পর্যন্ত লেগে যাবে। তবে আগস্ট মাসেও বন্যার ঝুঁকি রয়েছে।
আবহাওয়াবিদ মনোয়ার হোসেন বলেন, ‘আমাদের দেশে এখনো স্বাভাবিক বৃষ্টি হচ্ছে। তবে বৃষ্টির পরিমাণ আরও বাড়বে। দেশে যে বৃষ্টিপাত হয়, সৃষ্ট বন্যায় সেটার প্রভাব কম। আমাদের দেশের নদীগুলোর উৎপত্তিস্থল ভারত ও মিয়ানমার। সেখানে ভারি বৃষ্টিপাতের কারণে আমাদের দেশে বন্যা হয়। ভারতের চেরাপুঞ্জি ও মেঘালয়ে জুলাইয়ে ভারি থেকে অতি ভারি বৃষ্টির সম্ভাবনা রয়েছে, ফলে এই পানির চাপ আমাদের এখানেও আসবে।’
এদিকে আবহাওয়া অধিদপ্তরের নিয়মিত বুলেটিনে বলা হয়েছে, রোববার রংপুর, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, বরিশাল, চট্টগ্রাম ও সিলেট বিভাগের অনেক জায়গায় এবং ঢাকা ও খুলনা বিভাগের কিছু কিছু জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেই সঙ্গে রংপুর, ময়মনসিংহ ও সিলেট বিভাগের কোথাও কোথাও মাঝারি ধরনের ভারী থেকে ভারী বর্ষণ হতে পারে। গতকাল সর্বোচ্চ ২৯২ মিলিমিটার বৃষ্টি ঝরেছে পটুয়াখালীর খেপুপাড়ায়। এছাড়া প্রায় সারাদেশেই কমবেশি বৃষ্টি হয়েছে।
মন্তব্য করুন