কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ০৫ জুলাই ২০২৪, ০৯:৫৭ পিএম
আপডেট : ০৫ জুলাই ২০২৪, ১০:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

পদ্মা সেতুর জন্য বাংলাদেশ বিশ্বে সম্মান পেয়েছে : প্রধানমন্ত্রী

পদ্মা সেতুর প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত
পদ্মা সেতুর প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। ছবি : সংগৃহীত

পদ্মা সেতুকে ‘গর্বের প্রতীক’ হিসেবে আখ্যায়িত করে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, নিজস্ব অর্থায়নে এ সেতু নির্মিত হওয়ায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায় এখন বাংলাদেশকে যথাযথ মূল্যায়ন করছে।

তিনি বলেন, ‘এখন বাংলাদেশ শুনলেই মানুষ সমীহ করে আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে। বাংলাদেশের জনগণ একটা মর্যাদার আসনে অধিষ্ঠিত হয়েছে।’

শুক্রবার (৫ জুলাই) বিকেলে পদ্মা সেতুর মাওয়াপ্রান্তে পদ্মা সেতুর প্রকল্পের সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে শেখ হাসিনা এসব কথা বলেন।

গত দুবছরে পদ্মা সেতুর টোল প্রাপ্তিতে সংশ্লিষ্ট সবার মতো সন্তুষ্টি ব্যক্ত করে সরকারপ্রধান বলেন, আমি টাকার অঙ্ক দিয়ে এটা বিচার করব না। কারণ এই সেতু আমাদের গর্বের সেতু। এটা টাকার অঙ্ক দিয়ে বিচার করার নয়।

বিশ্ব ব্যাংকের ভুয়া দুর্নীতির অভিযোগ মিথ্যা প্রমাণ করে নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু নির্মাণের চ্যালেঞ্জ গ্রহণের যুগান্তকারী সিদ্ধান্তের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি শুধু এটুকু বলতে চাই- এই একটা সিদ্ধান্ত বাংলাদেশকে অন্তত সেই মর্যাদা দিয়েছে, আগে যারা কথায় কথায় আমাদের ওপর খবরদারি করত, আর ভাবখানা ছিল এরা ছাড়া বাংলাদেশ চলতেই পারে না, সেই মানসিকতাটা বদলে গেছে। মানুষ এখন গর্ব করে আন্তর্জাতিকভাবে বুক ফুলিয়ে চলত পারে। এটাই সব থেকে বড় পাওয়া।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এই স্বাধীনতা। সেই স্বাধীনতা ব্যর্থ হয়নি, সফল হয়েছে এবং আমরা এখন আর্থসামাজিক উন্নয়নের মাধ্যমে ২০৪১ সালের বাংলাদেশকে উন্নত সমৃদ্ধ স্মার্ট বাংলাদেশ হিসেবে গড়ে তুলব, ইনশাআল্লাহ। সেই সঙ্গে আমরা ২০২১ থেকে ২০৪১ পর্যন্ত প্রেক্ষিত পরিকল্পনা করেছি পাশাপাশি প্রজন্মের পর প্রজন্মের উন্নত জীবনের জন্য নেদারল্যান্ডের সঙ্গে চুক্তি করে ‘ডেল্টা পরিকল্পনা-২১০০’ প্রণয়ন ও বাস্তবায়নও আমরা শুরু করে দিয়েছি।

তিনি বলেন, এটাই সব থেকে বড় পাওয়া যে লাখো শহীদের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত আমাদের এ স্বাধীনতা আর এ পতাকা আজকে সারাবিশ্বে গর্বের সঙ্গে এগিয়ে যাবে। আমরা এগিয়ে যাব অপ্রতিরোধ্য গতিতে। যত বাধা আসুক ইনশাআল্লাহ অতিক্রম করে জাতির পিতার সে আদর্শ বাস্তবায়ন করেই এদেশকে এগিয়ে নিয়ে যাব।

প্রধানমন্ত্রী বলেন, যখন সবাই না করছে আর আমি যখন বলেছি আমি করব। সে সময় দেশের জনগণ আমার সঙ্গে ছিল। আর আজকে সে পদ্মা সেতুর কাজ শেষ করতে পেরেছি যা আমার দক্ষিণাঞ্চলের মানুষের আর্থসামাজিক উন্নয়নের দ্বার উন্মোচন করেছে। আল্লাহ রাব্বুল আল আমিনের কাছে সত্যিই কৃতজ্ঞ। আর কৃতজ্ঞ আমার দেশবাসীর কাছে। তিনি বলেন, এই পদ্মা সেতুটা একটি জটিল স্ট্রাকচার। কারণ আমাজনের পরে সব থেকে খরস্রোতা হচ্ছে এ পদ্মা নদী। এই জটিল পরিস্থিতি, প্রাকৃতিক দুর্যোগ, কখনো নদীর পার ভেঙেছে, নানা ধরনের সমস্যা দেখা দিয়েছে, একে একে সবকিছু অতিক্রম করে আমরা এই সেতুটি নির্মাণ করেছি। প্রধধানমন্ত্রী পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে গিয়ে দুর্যোগে মৃত্যুবরণকারী এবং সেতুর কাজে সম্পৃক্ত ছিলেন এবং প্রয়াত, তাদের প্রতিও তিনি কৃতজ্ঞতা জানিয়ে তাদের রুহের মাগফিরাত কামনা করেন। তিনি সাবেক যোগাযোগমন্ত্রী প্রয়াত সৈয়দ আবুল হোসেন এবং প্রকৌশলী, গবেষক, ও বিজ্ঞানী অধ্যাপক ড. জামিলুর রেজা চৌধুরীকেও শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন।

শেখ হাসিনা বলেন, সেই পদ্মা নদীকে দুকূলে বেঁধে দেওয়া আর এই সেতু নির্মাণ করা, এই জটিল কাজের সঙ্গে যারা জড়িত সেই সেতু বিভাগ, বাংলাদেশ সেতু কৃতর্পক্ষ এবং পদ্মা বহুমুখী সেতু প্রকল্পের নিবেদিত কর্মকর্তা-কর্মচারী, দেশি-বিদেশি প্রকৌশলী, জাতীয় ও আন্তর্জাতিক পরামর্শক ও বিশেষজ্ঞরা, নিরাপত্তার তদারকিতে সেনাবাহিনী এবং পুলিশ ও অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারি সংস্থা এবং নির্মাণ শ্রমিক তাদের প্রতি আজকে আমি আমার কৃতজ্ঞতা ও আন্তরিক ধন্যবাদ জানাতেই আজ আমি এখানে এসেছি।

সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন। অনুষ্ঠানে পদ্মা সেতুর ওপর একটি প্রামাণ্য চিত্রও প্রদর্শিত হয়।

এরআগে প্রধানমন্ত্রী মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান উপভোগ করেন।

২০০১ সালের ৪ জুলাই মুন্সীগঞ্জের মাওয়ায় ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন ও নিজস্ব অর্থায়নে নির্মাণ শেষে ২০২২ সালের ২৫ জুন এই স্থানে পদ্মা সেতুর শুভ উদ্বোধন করেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। পরের দিন যান চলাচলের জন্য তা উন্মুক্ত করা হয়।

এরআগে ২০১৫ সালের ১২ ডিসেম্বর প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মাওয়ায় বহুল প্রত্যাশিত পদ্মা সেতুর নির্মাণকাজ উদ্বোধন করেন।

সংশ্লিষ্ট সূত্র মতে, পদ্মা বহুমুখী সেতুর নির্মাণের কাজ চলতি বছরের ৩০ জুন শেষ হয়েছে। মূল সেতুর দৈর্ঘ্য ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার। এর অ্যাপ্রোচ সড়ক ১২ দশমিক ১১৭ কিলোমিটার। ভায়াডাক্ট ৩ দশমিক ১৪৮ কিলোমিটার (সড়ক) এবং ৫৩২ মিটার (রেল)। গত দুই বছরে পদ্মা সেতু দিয়ে ১ কোটি ২৭ লাখ যানবাহন চলাচল করেছে। চলতি বছরের ২৯ জুন পর্যন্ত রাজস্ব আদায় হয়েছে ১ হাজার ৬৬১ কোটি টাকা। প্রতিদিন গড়ে যান চলাচল করেছে প্রায় ১৯ হাজার। প্রতিদিন গড়ে টোল আদায় হয়েছে ২ কোটি ৩০ লাখ টাকা।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

জবি শিক্ষককে হত্যার হুমকির প্রতিবাদে বিক্ষোভ

শেখ হাসিনার ছবিতে ‘হা হা রিঅ্যাক্ট’, ছাত্রদল কর্মীদের বেধড়ক পেটাল ছাত্রলীগ

অফিস টাইমে ব্যক্তিগত কাজ ও ইসলামের দৃষ্টিভঙ্গি

তারেক রহমানের নামে মিথ্যা মামলা প্রত্যাহার হয়নি কেন, প্রশ্ন ফারুকের

সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য যা করা দরকার তাই করব : সিইসি

চীনা ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আহ্বান বিডার

ব্যাটারিচালিত অটোরিকশার বিষয়ে নির্দেশনা আদালত দেবে : স্বরাষ্ট্র উপদেষ্টা

ভিক্ষা না করার শর্তে হজে যেতে পারবেন পাকিস্তানিরা

আবারও ঘনিষ্ঠ শাকিব-পূজা! (ভিডিও)

জিএসপি সুবিধা ফিরে পেতে চেষ্টা করছে অন্তর্বর্তী সরকার : বাণিজ্য উপদেষ্টা

১০

পাঁচ বিসিএসে নিয়োগ পাবে ১৮ হাজার ১৪৯ জন

১১

‘পোলারে কুনদিন কষ্ট দেই নাই, হেই পোলায় কত কষ্ট পাইয়া মরল’

১২

বিমানবন্দরে নিউ এজ সম্পাদকের হয়রানির ঘটনায় এসবির দুঃখ প্রকাশ

১৩

কারখানা বন্ধের নোটিশ পেয়েই মহাসড়ক অবরোধ

১৪

‘বিদেশ ভ্রমণ ঠেকাতে কয়েক হাজার মানুষকে ব্লকড লিস্ট করেছিল হাসিনা সরকার’

১৫

শপথ নিলেন নতুন সিইসি ও ৪ কমিশনার

১৬

পর্তুগাল সফরে গে‌লেন পররাষ্ট্র উপদেষ্টা

১৭

শিক্ষার্থীকে বেধড়ক পেটালেন প্রধান শিক্ষক

১৮

শিক্ষার্থীর মৃত্যু, ঢাকা ন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ঘেরাও

১৯

গণহত্যা চলছেই : ইসরায়েলের হামলায় ১২০ ফিলিস্তিনি নিহত

২০
X