জনশক্তি রপ্তানিতে সিন্ডিকেট প্রতিরোধে ‘বায়রা গণতান্ত্রিক যুব ঐক্য মহাজোট’ নামে একটি সংগঠনের আত্মপ্রকাশ হয়েছে।
বুধবার (৩ জুলাই) রাজধানীর একটি হোটেলে কেক কাটার মধ্য দিয়ে এই সংগঠনের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু হয়। জনশক্তি রপ্তানিতে মালয়েশিয়ার মতো যেন আর কোনো সিন্ডিকেট তৈরি না হয় এ জন্য ঐক্যবোধ্যভাবে কাজ করার অঙ্গীকার নিয়েই গঠন করা হয় এ সংগঠন।
বায়রার সাবেক কার্যনির্বাহী সদস্য ফজলুল মতিন তৌহিদের সমন্বয়ে গঠিত এই সংগঠনে বায়রার সাবেক ও বর্তমান নেতাদের ১০টি অঙ্গসংগঠনের ৭১ জন সদস্য রয়েছে। ’৭১-এর চেতনাই এই সংগঠনের মূল আদর্শ ও শক্তি।
অনুষ্ঠানে জনশক্তি খাতে অনিয়ম ও সিন্ডিকেট প্রতিরোধে মহাজোটের পৃষ্ঠপোষক শাহ এম এ রশিদ সম্রাট, আহ্বায়ক রবিউল ইসলাম রবিন ও সদস্য সচিব মোহাম্মদ মোজাম্মেল হক দৃঢ় মনোভব পোষণ করেন। একই সঙ্গে আগামীতে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, লিবিয়াসহ যে কোনো দেশে জনশক্তি রপ্তানিতে যেন কোনো ধরনের সিন্ডিকেট তৈরি না করতে পারে, তার জন্য জোরাল ভূমিকা রাখবে বলে কঠোরভাবে হুঁশিয়ারি দেন নেতারা। জনশক্তি রপ্তানি খাতে দুর্নীতি প্রতিরোধে ঐকমত্য পোষণ করেন মহজোটের অন্যান্য সদস্যরাও।
অনুষ্ঠানে বক্তারা বলেন, একটি শক্তিশালী চক্র জনশক্তি রপ্তানির বাজার কুক্ষিগত করে মালয়েশিয়া, সিঙ্গাপুর, লিবিয়াসহ বেশ কয়েকটি দেশে সরকার নির্ধারিত টাকার চেয়ে অতিরিক্ত পাঁচগুণ বেশি টাকা হাতিয়ে নিয়ে কর্মী পাঠিয়ে আসছে। এই চক্রের কারণে অসহায় হতদরিদ্র বিদেশযাত্রীরা যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, তেমনি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে সরকার অনুমোদিত তিন হাজার রিক্রুটিং এজেন্সিও।
অন্যদিকে, সীমিত সংখ্যক অসাধু ব্যক্তি জনশক্তি খাতকে ভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করার কারণে অনেক কর্মী তাদের কাঙ্ক্ষিত দেশে যাওয়া থেকে বঞ্চিত হয়েছেন। দেশ বঞ্চিত হয়েছে রেমিট্যান্স থেকেও। সংগঠনের নেতারা বলেন, মিডিয়ার কল্যাণে জানা গেছে- শুধু মালয়েশিয়ার খাত থেকে ২৪ হাজার কোটি টাকা লুটপাট করেছে একটি চক্র। শুধু মালয়েশিয়া নয়, আরও কিছু দেশেও এমন সিন্ডিকেটের পাঁয়তারা করছে বলে বিভিন্ন সূত্রে জেনেছেন তারা।
ক্ষোভ প্রকাশ করে বক্তরা আরও বলেন, শুধু প্রবাসগামীদের নিয়ে সিন্ডিকেট করেই বসে থাকেননি এই চক্রের সদস্যরা। অবৈধ পন্থায় উর্পাজিত অর্থ পাচার করেছে মালয়েশিয়া, দুবাই, সিঙ্গাপুর, কানাডা, আমেরিকায়। এসব দেশে তারা গড়ে তুলেছেন সেকেন্ড হোম।
ছাগলকাণ্ডের প্রসঙ্গ টেনে বক্তরা বলেন, একজন মতিউরের খবরে সবার চোখ কপালে। অথচ, অনেক মতিউর জনশক্তি রপ্তানি খাতে লুকিয়ে আছে। যাদের মুখোশ উন্মোচন এখন সময়ের অপেক্ষা মাত্র। কাদের জন্য এ চক্রটি এত বেপরোয়া? তারও ইঙ্গিত দিয়েছেন বক্তরা। তারা বলেন, এই চক্রের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়ের কিছু অসাধু ব্যক্তি ও রাজনৈতিক নেতা জড়িত। এ কারণে অনেকেই তাদের অনিয়ম নিয়ে মুখ খুলতে সাহস পাননি। এখন সময় এসেছে মুখ খোলার। কারণ, স্বয়ং প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা এসব দুর্নীতিবাজদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার নির্দেশ দিয়েছেন।
বক্তরা আরও বলেন, সিন্ডিকেট কারা করেছে, কারা নেতৃত্বে দিয়েছে এটা অনেকটা ওপেন সিক্রেট। আর এতে বারবারই ব্যবহার করা হয়েছে বায়রাকে। সেই বায়রাকে কলুষিত মুক্ত করতে সোচ্চার থাকবে এই ‘বায়রা গণতান্ত্রিক যুব ঐক্য মহাজোট’। আগামী নির্বাচনেও যেন কোনো সিন্ডিকেট হোতা বা দুর্নীতিবাজ নেতৃত্বে না আসতে পারে তার জন্যও কঠোর অবস্থানে থাকার ঘোষণা দিয়েছে এই সংগঠননের নেতা ও সাধারণ সদস্যরা।
মন্তব্য করুন