ঢাবি প্রতিনিধি
প্রকাশ : ০৩ জুলাই ২০২৪, ০৯:৩৭ পিএম
আপডেট : ০৩ জুলাই ২০২৪, ১০:১১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায় কার্যকরের দাবি 

শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে কোটা পুনর্বহাল আন্দোলন। ছবি : কালবেলা
শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে কোটা পুনর্বহাল আন্দোলন। ছবি : কালবেলা

মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহালের রায় কার্যকর করে নতুন পরিপত্র জারিসহ সাত দফা দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেছে মুক্তিযোদ্ধা কোটা পুনর্বহাল আন্দোলন।

বুধবার (৩ জুলাই) বিকেলে শাহবাগ জাতীয় জাদুঘরের সামনে এ সমাবেশের আয়োজন করে কোটা পুনর্বহাল আন্দোলন। এরপর একটি বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্য হয়ে সুপ্রিম কোর্টে প্রধান বিচারপতির কার্যালয়ে স্মারকলিপি প্রদান করেন প্লাটফর্মটির নেতারা।

সমাবেশে বক্তব্য রাখেন কোটা পুনর্বহাল আন্দোলনের সমন্বয়ক ও মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ডের সাধারণ সম্পাদক মো. আল মামুন, মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল, মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক রাশিদ শাহরিয়ার উদয়, ঢাবি শিক্ষার্থী কানিজ ফাতিমাসহ অন্য নেতারা।

সমাবেশে বক্তব্য প্রদানকালে মো. আল মামুন বলেন, মহান মুক্তিযুদ্ধে অংশগ্রহণকারী বীর মুক্তিযোদ্ধারা দেশ ও জাতির শ্রেষ্ঠ সন্তান। অত্যন্ত দুঃখের বিষয় কোটাবিরোধী আন্দোলনকারীরা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে প্রতিনিয়ত বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদের জঘন্য ভাষায় কটূক্তি ও গালাগাল করে যাচ্ছে যা আইনের দৃষ্টিতে সুস্পষ্ট অপরাধ। অবিলম্বে এদের চিহ্নিত করে ছাত্রত্ব বাতিলসহ আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। যারা বঙ্গবন্ধু, বীর মুক্তিযোদ্ধা ও মুক্তিযুদ্ধকে অবমাননা করে তারা কখনোই এ দেশের স্বাধীনতার আদর্শে বিশ্বাস করে না। এরা স্বাধীনতাবিরোধী রাজাকারদের বংশধর। এদের অবমাননা ও কটূক্তি স্থায়ী ভাবে বন্ধ করার জন্য হলোকাস্ট ডিনায়াল অ্যাক্টের ন্যায় নতুন আইন প্রণয়নের পাশাপাশি বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করা এখন সময়ের দাবিতে পরিণত হয়েছে।

মুক্তিযুদ্ধ মঞ্চের সভাপতি আমিনুল ইসলাম বুলবুল বলেন, স্বাধীনতাবিরোধীরা ক্ষমতায় থাকার কারণে দীর্ঘ ২১ বছর এই কোটা বীর মুক্তিযোদ্ধাদের কোন কাজে আসেনি। স্বাধীনতাবিরোধী পরিবারের বংশধর আমলারা সুকৌশলে বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তান পাওয়া যাচ্ছে না বলে পদগুলো শূন্য দেখানো শুরু করেছিল। এরপর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে ৫ বছর চাকরিপ্রত্যাশী বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানরা নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছিলেন। ২০০৭ থেকে ২০০৯ পর্যন্ত তত্ত্বাবধায়ক সরকার থাকা অবস্থায় আবার দুই বছর নিয়োগ বঞ্চিত হয়েছিল। দীর্ঘ সময় বীর মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদেরকে কোটা সুবিধা থেকে বঞ্চিত করে রাখার কারণে সন্তানদেরও চাকরির বয়স শেষ পর্যায়ে যাওয়ার কারণে নাতি-নাতনি পর্যন্ত বর্ধিত করা হয়েছে। প্রশাসনে মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধরে রাখার জন্য বিশ্বের অন্যান্য রাষ্ট্রের ন্যায় প্রজন্ম পর্যন্ত কোটা সুবিধা বর্ধিত করা হয়েছে যা অত্যন্ত যৌক্তিক ও গ্রহণযোগ্য।

মুক্তিযোদ্ধা সংসদ সন্তান কমান্ড, ঢাবি শাখার সাধারণ সম্পাদক রাশিদ শাহরিয়ার উদয় বলেন, ২০১৮ সালে কোটা সংস্কার আন্দোলনের সময় গুজব সৃষ্টিকারী ও ঢাবির ভিসির বাসায় হামলাকারীদেরকে চিহ্নিত করে আজও পর্যন্ত বিচার করা হয়নি। তদন্ত রিপোর্ট এখনো প্রকাশ হয়নি। অবিলম্বে তদন্ত রিপোর্ট প্রকাশ করে ভিসির বাসায় হামলাকারী ও উস্কানিদাতাদেরকে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দিতে হবে। কোটা কখনো বৈষম্য তৈরি করে না বরং কোটা ব্যবস্থা রাষ্ট্রে বৈষম্য দূর করে সমতা নিশ্চিত করে। অনেককে ভুল বুঝিয়ে রাস্তায় নামিয়ে সেদিন নুরু গংরা নিজেদের ফায়দা হাসিল করেছিল যা ইতিমধ্যে দেশপ্রেমিক ছাত্রসমাজের নিকট প্রমাণিত হয়েছে। নারী ও জেলা কোটার কারণে রাষ্ট্রের অধিকাংশ নাগরিক কোটা সুবিধার আওতায় পড়েন। বিশ্বের অধিকাংশ রাষ্ট্রে কোটা ব্যবস্থা চালু রয়েছে। মহান মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার জন্য কোটা পুনর্বহালের কোনো বিকল্প নেই।

সমাবেশ থেকে সরকারের নিকট সাত দফা দাবি জানানো হয়। সেগুলো হলো- সংবিধান অনুযায়ী বৈষম্যহীন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে উচ্চ আদালতের নির্দেশনা অনুযায়ী ২০১৮ সালের অবৈধ পরিপত্র বাতিলের রায় দ্রুত কার্যকর করে বঙ্গবন্ধুর উপহার মুক্তিযোদ্ধা কোটাসহ সকল কোটা পুনর্বহাল, সংরক্ষণ ও পূর্ণাঙ্গ বাস্তবায়ন করতে হবে; কোটায় নিয়োগপ্রাপ্ত প্রার্থীরা সকলেই মেধাবী, কেউ অমেধাবী নয়। সাধারণ প্রার্থীদের সাথে একই প্রশ্নপত্রে পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করে প্রিলি, লিখিত ও ভাইভায় উত্তীর্ণ হওয়ার পর কোটা প্রয়োগ হওয়ার কারণে বৈষম্যমূলক মেধা শব্দ পরিবর্তন করে সাধারণ শব্দ সংযোজনপূর্বক সাধারণ প্রার্থী নামকরণ করে সকল নিয়োগ বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করতে হবে; রাজাকারদের নামের তালিকা প্রকাশ করে দেশের প্রতিটি ইউনিয়ন পরিষদের নোটিশ বোর্ডে তালিকা প্রদর্শনপূর্বক নাগরিকত্ব বাতিলসহ এদের বংশধরদের চিহ্নিত করে চাকুরিচ্যুত করার পাশাপাশি সকল সম্পত্তি রাষ্ট্রের অনুকূলে বাজেয়াপ্ত করতে হবে; সাম্প্রতিক সময়ে কোটা বাতিল আন্দোলনের নামে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে বঙ্গবন্ধু, মুক্তিযুদ্ধ ও বীর মুক্তিযোদ্ধাদেরকে নিয়ে কটূক্তিকারীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে ছাত্রত্ব বাতিলসহ বিশেষ ট্রাইবুনালে দ্রুত বিচারের মাধ্যমে কঠোর শাস্তি নিশ্চিতের পাশাপাশি হলোকাস্ট ডিনায়াল অ্যাক্টের ন্যায় আইন প্রণয়ন করতে হবে; সমগ্র দেশে বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের ওপর হামলা, মামলা, হত্যা, নির্যাতন ও কটূক্তি স্থায়ীভাবে প্রতিরোধ করার জন্য বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবার সুরক্ষা আইন প্রণয়ন করতে হবে; ২০১৮ সালে কোটা বাতিল আন্দোলনের নামে পুলিশের ওপর নগ্ন সন্ত্রাসী হামলা, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যের বাসভবনে অগ্নিসংযোগ, ভাঙচুর ও হামলায় জড়িত সন্ত্রাসীদেরকে চিহ্নিত করে আইনের আওতায় এনে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে এবং বীর মুক্তিযোদ্ধা পরিবারদের অধিকার আদায়ের প্লাটফর্ম বাংলাদেশ মুক্তিযোদ্ধা সংসদের নির্বাচনের তফশিল ঘোষণা করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

যমুনায় পানি কমায় ব্রহ্মপুত্রে ভাঙন

আ.লীগ সরকারের কাছে আলেম-ওলামারাও রেহাই পায়নি : টুকু

কোটা পদ্ধতি সংস্কারের দাবিতে বেরোবি শিক্ষার্থীদের মহাসড়ক অবরোধ

ইউরো ২০২৪ / স্টুটগার্টে ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি, পিতা-পুত্রের স্মরণীয় উদযাপন

বেসরকারি সংস্থায় চাকরির সুযোগ, বেতন ৬০ হাজার

তীব্র বৃষ্টি উপেক্ষা করে কোটা সংস্কার আন্দোলনে ইবি শিক্ষার্থীরা

দেশবাসীর কাছে দোয়া চাইলেন ডিপজল

বিপৎসীমার ওপরে টাঙ্গাইলের সব নদীর পানি

পিজিআরকে অর্পিত দায়িত্ব সুষ্ঠুভাবে পালনের নির্দেশ রাষ্ট্রপতির

পেট্রোম্যাক্স এলপিজিতে নিয়োগ, পদসংখ্যা অনির্ধারিত

১০

পঞ্চম দিনে কোটাবিরোধী আন্দোলনে জবি শিক্ষার্থীরা

১১

বৃক্ষমেলার আড়ালে বাণিজ্য মেলা!

১২

যমুনার পানি বেড়ে ডুবে যাচ্ছে বসতবাড়ি

১৩

আমাদের রাজনৈতিক বন্ধু ভারত, উন্নয়নের চীন : কাদের

১৪

ভোটে বিজয়ী পেজেশকিয়ান, এরপর কী?

১৫

তিস্তার পানি বিপৎসীমার কাছাকাছি, বন্যার আশঙ্কা

১৬

তিস্তায় পানি বৃদ্ধি, বন্যার কবলে ৫ হাজার পরিবার

১৭

এবার মহাসড়ক অবরোধ করলেন পাবিপ্রবি শিক্ষার্থীরা

১৮

ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী ও ইরানের প্রেসিডেন্টকে বিএনপির অভিনন্দন

১৯

ফাইনালের আগে আরেক ফাইনালে দুদলের সম্ভাব্য একাদশ

২০
X