চলমান কোটাবিরোধী আন্দোলন প্রসঙ্গে জাতীয় সংসদে বিরোধী দলীয় নেতা জি এম কাদের বলেছেন, বড় অঙ্কের মুক্তিযোদ্ধা কোটা স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে।
বুধবার (৩ জুলাই) বাজেট অধিবেশনের সমাপনী ভাষণে জি এম কাদের এসব কথা বলেন।
মিরনজিল্লার হরিজন সম্প্রদায়ের দুরবস্থার কথা তুলে ধরে জি এম কাদের বলেন, নগরায়ণের কথা বলে আমরা তাদের রাস্তায় ফেলে দিচ্ছি। তাদের নানাভাবে হুমকি দেওয়া হচ্ছে। তাদের উচ্ছেদ করে সেখানে একটি গোষ্ঠীর স্বার্থে মার্কেট নির্মাণ করা হবে। এরা কোথায় যাবে। এ রকম লাঞ্চ না থেকে বাঁচতে কেউ কেউ আত্মহত্যাও করেছে। তাদের অধিকার রক্ষা করতে হবে।
সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নির্যাতনের কথা তুলে ধরা মার্কিন একটি রিপোর্টের উল্লেখ করে তিনি বলেন, সরকারি দল দাবি করে তাদের আমলে সংখ্যালঘুরা ভালো আছে। আসলে তারা ভালো নেই। ২০১৩ সাল থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত সংখ্যা লঘুদের ওপর নৃশংসতা, সম্পত্তি দখল ও ধর্মীয় উপাসনালয়ে হামলার পরিসংখ্যান তুলে ধরা হয়েছে। বেশির ভাগ স্থানে রাজনৈতিক গোষ্ঠীর প্রশ্রয়ে এসব হচ্ছে। আর রাজনৈতিক মানে সরকারি দল। এখন তারা যদি বলে সংখ্যা লঘুরা ভালো আছে তবে ভালো থাকুক।
কোট সম্পর্কে জি এম কাদের বলেন, আমার ব্যক্তিগত মত হলো বীর মুক্তিযোদ্ধাদের পরবর্তী প্রজন্মের চাকরির জন্য বিশেষ বড় অঙ্কের কোটা চিরস্থায়ী বন্দোবস্ত করা স্বাধীনতার চেতনার নামে স্বাধীনতার মূল উদ্দেশ্যকে বৈষম্যমুক্ত ন্যায়বিচারভিত্তিক সমাজ গঠন এই মূল উদ্দেশ্যকে ধ্বংস করে।
জি এম কাদের বলেন, আগে নিয়োগের ক্ষেত্রে ৫৬ শতাংশ কোটা ছিল। ৪৪ শতাংশ মেধার ভিত্তিতে হতো। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে দাবি ছিল ৩০ শতাংশ মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল করা হোক। মেধাভিত্তিক সমাজ হচ্ছে না। মেধাকে দাম দিতে হবে।
তিনি বলেন, মুক্তিযোদ্ধাদের আমরা দাম দেব। কিন্তু তাদের বংশ পরম্পরায় তাদের নাতি-নাতনিসহ তাদের সবাইকে দিতে হবে বিষয়টি সম্পর্কে ছাত্রদের মধ্যে দ্বিমত আছে। তারা এর সঙ্গে একমত হতে পারছে না।
বিরোধী দলীয় নেতা বলেন, আন্দোলনের মুখে ২০১৮ সালে সব কোটা বাতিল করা হয়। এটা দাবি ছিল না। দাবি ছিল মুক্তিযোদ্ধা কোটা বাতিল বাকিগুলো থাকবে।
হঠাৎ করে ২০২১ সালে করা মামলার রায়ে বলা হয়েছে কোটা আগের মতো থাকবে। এর ফলে ছাত্রদের মধ্যে আবার সমস্যা সামনে আসছে।
জি এম কাদের বলেন, সংবিধানে সুযোগ সুবিধার ক্ষেত্রে সাম্যের কথা বলা হয়েছে। সংবিধানে বলা আছে, নিয়োগ লাভের ক্ষেত্রে সুযোগের সমতা থাকবে। ধর্ম, বর্ণ, গোষ্ঠী, জন্মস্থানের কারণে কাউকে প্রজাতন্ত্রের কাজে নিয়োগে অযোগ্য হবেন না।
সরকারকে অথরিটি দেওয়া হয়েছে, নাগরিকদের অনগ্রসর অংশের জন্য, অনগ্রসর অংশ যাতে প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রতিনিধিত্ব করতে পারেন সেজন্য বিশেষ বিধান প্রণয়ন করা যাবে। অনগ্রসর যারা নৃগোষ্ঠীকে দিতে পারি সংখ্যালঘুকে দিতে পারি।
সার্বজনীন পেনশন স্কিম নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের আন্দোলন প্রসঙ্গে জি এম কাদের বলেন, আগে যেটা সর্বজনীন পেনশন স্কিম দেওয়া হয়েছিল সেটাতে খুব একটা সাড়া আসেনি যে কোনো কারণেই হোক। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক নেতারা বেশিরভাগ সরকারের সমর্থক। সরকারের কাছের লোক। তারা মানতে চাইছেন না। অনেকে মনে করছেন সুযোগ সুবিধা আগের চেয়ে কম। অনেকে এটাও মনে করছেন না। তারপরও মানছেন না।
তিনি বলেন, বললে খারাপ শোনায় সেটা হলো মানুষের আস্থাহীনতা হচ্ছে, যে সরকার যেটা কমিট করছে আল্টিমেটলি সেটা দিতে পারবে কি না, দিবে কি না, মানুষ পাবে কি না। এটা বড় ধরনের একটা আস্থাহীনতা। এটা আমাদের সরকারের কারো জন্যই মঙ্গলজনক নয়।
মন্তব্য করুন