ওয়াজেদ মহান
প্রকাশ : ২৬ ডিসেম্বর ২০২২, ০৩:০১ পিএম
অনলাইন সংস্করণ

খেয়েছি পিঁপড়ের ডিমের হালুয়া : ফাহমিদা নবী

খেয়েছি পিঁপড়ের ডিমের হালুয়া : ফাহমিদা নবী

তারকারাও মানুষ, কর্মব্যস্ত দিন শেষে তারাও খুঁজে ফেরেন একখণ্ড অবসর। সে অবসরে তারা ঘুরতে যান প্রিয় জায়গাগুলোতে। আর কাজের প্রয়োজনেই হয়তো তাদের সবচেয়ে বেশি ঘোরা হয় দেশ এবং দেশের বাইরের সুন্দর সব জায়গায়।

স্নিগ্ধ বিকেল, আমরা বসে আছি ফাহমিদা নবীর ধানমন্ডির বাসায়। বিকেলের সোনালি সূর্যের আলো খেলা করছে তার লিভিংরুমের সামনে যে বাড়িটা তার খোলা ছাদে। ফাহমিদা নবী জানালার কপাট মেলে দিয়ে ডাকলেন আমাদের… দেখো, কী সুন্দর সূর্যাস্ত? তারপর গুনগুন করে গান গাইতে শুরু করলেন জানালার গ্রিলে হাত রেখে।

এর মধ্যেই জিজ্ঞেস করি তাকে, এই দেশের আনাচে-কানাচে তো অনেক ঘোরাঘুরি হলো আপনার, দেশের কোন জায়গাটা বেশি ভালো লাগে?

প্রশ্ন শুনেই যেন তার সম্বিৎ ফিরে পাওয়া। চায়ের কাপটা হাতে তুলে নিয়ে প্রথম চুমুক দিয়েই বলতে শুরু করলেন…

‘২০০৯ সালের কথা, তখন আমাকে একবার শুটিংয়ের প্রয়োজনে রাঙামাটি যেতে হলো। সেবার আমরা উঠেছিলাম রাঙামাটির সার্কিট হাউসে। টানা কয়েক দিনের শুটিং, ভোরবেলায় আমাদের চলে যেতে হতো কাপ্তাই লেকঘেঁষা পাহাড়গুলোতে। সেখানেই আমাদের শুটিং সেট ফেলা হতো। একবার শুটিংয়ের মাঝে হুট করেই আমরা খেয়াল করলাম দূর পাহাড়ের ওপর কালো মেঘের খেলা। দেখেই বোঝা যাচ্ছিল বৃষ্টি হচ্ছে সে পাহাড়ে।

আমি আনমনা হয়ে তাকিয়ে রইলাম সেদিকে। যারা পাহাড়ি বৃষ্টির সঙ্গে পরিচিত তারা জানেন যে পাহাড়ি বৃষ্টি খুব হুটহাট নেমে পড়ে। ঠিক সে ধারাতেই কিনা হুট করে বৃষ্টির ফোঁটা পড়তে শুরু করল। শুটিং ইউনিটের সবাই পড়িমড়ি করে ক্যামেরা-ট্যামেরা গোছাতে শুরু করল। অতএব শুটিং প্যাকআপ। অন্য সময় শুটিং প্যাকআপ হলে মন খারাপ হতো, কিন্তু সেদিন আমি খুব খুশি হয়ে গেলাম। প্রস্তুতি নিলাম বৃষ্টিতে ভেজার। আর সে প্রস্তুতি সাঙ্গ হতেই ঝুপঝাপ নেমে এলো মুষলধারার বৃষ্টি! ইউনিটের অনেকেই ভিজলেন আমাদের সঙ্গে। কাপ্তাই সবুজ পাহাড়ে বৃষ্টির গান আর কাপ্তাই লেকে বৃষ্টির অদ্ভুত সুন্দর ছবিতে আমরা মুগ্ধ হয়ে রইলাম।

মজার বিষয় কি জানিস? সেদিন বৃষ্টি শেষে আমরা যখন একটা বিশাল বজরা নৌকোতে করে কাপ্তাই লেকের মধ্য দিয়ে সার্কিট হাউস অভিমুখে ফিরছিলাম, তখন আকাশে বিশাল একটা চাঁদ উঠল। মায়াবী জ্যোৎস্নায় ভরে গেল চারপাশ, আমরা সবাই আনন্দে যার যার মতো করে গান গাইতে লাগলাম। ওই অসাধারণ মুহূর্তের কথা আমি কখনো ভুলব না!’

তার কথা শেষ হতেই জিজ্ঞেস করি, কোন জিনিসটা আপনার বেশি ভালো লাগে? পাহাড় নাকি সমুদ্র? প্রশ্নের বিপরীতে উত্তরটা খুব হুট করেই আসে… ‘পাহাড়, সমুদ্র, নীল আকাশের মিতালিটা। এ তিনটা জিনিসেই আমার ব্যাপক মুগ্ধতা। এই করোনা-পরবর্তী সময়টাতেই সে মুগ্ধতায় ডুবে যেতে আমরা পুরো পরিবার নিয়ে ছুট লাগালাম কক্সবাজারে।

কারণ, এই তিনের বন্ধন তো সেখানে ছাড়া আর দেশে কোথাও মনে হয় না আর আছে! সমুদ্রে ঝাঁপাঝাঁপি তো থাকেই কিন্তু শেষ বিকেলে অটোরিকশা করে মেরিন ড্রাইভ ধরে ইনানীর দিকে ছুটে যাওয়াটা আমার কাছে অসম্ভব উপভোগ্য লাগে। প্রতিবারই আমি তাই করি। একটা অটো ভাড়া নিয়ে চলে যাই, যেখানে সেখানে নেমে পড়ি, পাহাড় দেখি, সমুদ্র দেখি, আর ওপরের খোলা আকাশ তো সবসময় তাকিয়েই থাকে আমাদের দিকে।

অসাধারণ অভিজ্ঞতা সেগুলো। আর সত্যি বলতে ঘোরার জন্য সবার আগে দরকার নিজের মতো একটা মানুষ। সেটা হয়ে গেলে আকাশ, সমুদ্র, পাহাড় যাই বলি না কেন, সবকিছুই সুন্দর লাগবে। এখানে সঙ্গীটা অনেক বেশি গুরুত্বপূর্ণ

ফাহমিদা নবীর কথার বিরতিতে আমরা দেশ থেকে বিদেশে চোখ ফেরাই, তাকে জিজ্ঞেস করি… অনেক অনেক দেশ তো ঘোরা হলো, সম্প্রতি একটা লম্বা সময় অস্ট্রেলিয়ায় কাটিয়ে এসেছেন। বিদেশ ভ্রমণের নিশ্চই মজার কিছু অভিজ্ঞতা আছে?

ফাহমিদা নবী এবার বিদেশ ভ্রমণের ঝাঁপি খোলেন, ‘অভিজ্ঞতা তো অনেক অনেক। কিন্তু এবারেরটা দিয়েই শুরু করি। এবার আমরা চার ভাইবোন একসঙ্গে অস্ট্রেলিয়া ভ্রমণ করেছি। সেখানে আমাদের চারজনকে নিয়ে প্রবাসীদের কিছু কনসার্ট ছিল। আমরা চার ভাইবোন সেখানে অনেক মজা করেছি। বাজার করেছি, রান্না করেছি, শহরে নিজেরা নিজেরা ঘুরেছি।

তবে সেসব বাদ দিয়ে অবশ্যই বলব এবারের মেক্সিকো ভ্রমণের কথা। অসাধারণ কিছু সময় কেটেছে মেক্সিকো সিটিতে। বিশেষ করে নৌকায় করে ঘুরে বেড়ানোর সময়টা। ওদের কিছু নৌকা আছে যেটা অনেকটা হাউসবোটের মতো। তার ভেতরে ওরা নানান ধরনের খাবার বিক্রি করে, অনেকটা রেস্টুরেন্টের মতো। আমরা খাবার খেলাম, মেক্সিকানদের সঙ্গে গান গাইলাম।

সবচেয়ে মজার যে অভিজ্ঞতা হলো পিঁপড়ের ডিম খাওয়ার বিষয়টা। ওদের কিছু ক্যাকটাস বন আছে। আমরা সে বনে ঘুরলাম। একটা সময়ে ওরা পিঁপড়ের ডিম খাবার অফার দিল। কেউ সাহস করল না খেতে। ভিনদেশে এসে ভিন্ন খাবারের সঙ্গে পরিচিত হতেই হয়তো আমি ট্রাই করলাম। মনে হলো ডিমের হালুয়া কিংবা গরুর মগজ ভাজা খাচ্ছিলাম। অনেক মজা ছিল। আর বিদেশে ভ্রমণ অভিজ্ঞতার কথা বলে তো শেষ করা যাবে না, ক্যালিফোর্নিয়া, এডিনবরা, সিডনি, স্কটল্যান্ড এমন বহু জায়গায় আমার অসাধারণ কিছু ভ্রমণস্মৃতি আছে।’

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন
  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

রাজশাহীগামী ট্রেনে আগুন,  আহত ১০

মুক্তিযোদ্ধা বাবার ঋণ পরিশোধে কিডনি বিক্রি করতে চান ছেলে

বিদ্যুৎ বিল বেশি আসায় টেকনিশিয়ানকে হত্যা

ঢাকায় অনুষ্ঠিত হলো অষ্ট-পরিষ্কার-সংঘদান সূত্রপাঠ ও জ্ঞাতিভোজন 

মসজিদে আজান দিল নায়ক সাইমনের সন্তান

গোলটেবিল বৈঠকে বক্তারা / প্রকৃতি ধ্বংস করে উন্নয়ন নয়

সুখবর দিল আবহাওয়া অফিস 

গাজায় অলৌকিকভাবে জন্ম নেওয়া শিশুটি মারা গেছে

জাতির পিতার সমাধিতে বিএসএমএমইউয়ের নতুন উপ-উপাচার্যের শ্রদ্ধা

জাতীয় লজিস্টিক নীতি প্রণয়নের জন্য প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়কে বিল্ড ট্রাস্টি বোর্ডের অভিনন্দন

১০

বিএনপি ষড়যন্ত্রে বিশ্বাস করে না : ফারুক

১১

অস্ত্র সমর্পণে যে শর্ত দিল ফিলিস্তিনি গোষ্ঠী

১২

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিকদের নির্বিঘ্ন প্রবেশাধিকার দাবি ডিআরইউর

১৩

বাচ্চাদেরও পু‌ড়ি‌য়ে মারতে চাচ্ছে সরকার: রিজভী

১৪

তীব্র তাপমাত্রার দায় এড়াতে পারে না সরকার : সাইফুল হক

১৫

মুক্তিযোদ্ধাকে ট্রেন থেকে ফেলে দেওয়ার সত্যতা পায়নি তদন্ত কমিটি 

১৬

কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞা স্বেচ্ছাচারিতামূলক : টিআইবি

১৭

গাজীপুরে নয়, ঢাকা আঞ্চলিক কেন্দ্রে পরীক্ষার দাবি শিক্ষার্থীদের

১৮

শিল্পী-সাংবাদিক দ্বন্দ্ব, চূড়ান্ত সিদ্ধান্ত

১৯

বিয়ে না দেওয়ায় মাকে জবাই করে হত্যা

২০
*/ ?>
X