চীনের স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল তিব্বতে ভূমিকম্পে হতাহতদের উদ্ধারে দ্বিতীয় দিনের মতো অভিযান চলছে। এখন পর্যন্ত ১২০টি মরদেহ উদ্ধার করা হয়েছে। পরিস্থিতি ভয়াবহ হওয়ায় ধ্বংসস্তূপের নিচে আরও মরদেহ থাকতে পারে। এ ছাড়া বৈরী আবহাওয়ায় চাপা পড়াদের জীবিত থাকা নিয়ে নতুন উদ্বেগ তৈরি করেছে।
গতকালের ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল থেকে বাংলাদেশের রাজধানী ঢাকার দূরত্ব ৬১৮ কিলোমিটার বলে জানিয়েছে আবহাওয়া অধিদপ্তর। ৭.১ মাত্রার এই ভূমিকম্প শুধু গোটা বাংলাদেশ না দক্ষিণ এশিয়ার বেশ কয়েকটি দেশে অনুভূত হয়েছে। ভূমিকম্পের উৎপত্তিস্থল অনেক দূর হওয়ায় বাংলাদেশে কম্পনের তীব্রতা ছিল না। তবে বিভিন্ন সময় দেখা যায় যে, ভূমিকম্প হলে অনেকেই অনুভব বা বুঝতে পারে না। একই সময়ে একই স্থানে থাকার পরও কেন সবাই ভূমিকম্প অনুভব করে না?
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর মূল কারণ সংবেদনশীলতা ও ব্যক্তির অবস্থান। আপনি কত তলায় আছেন, তার ওপর এটি নির্ভর করছে। আপনি যত উপরের দিকে থাকবেন, আপনার ঝাঁকুনিটা অনুভব করার সম্ভাবনা তত বেশি। যত নিচে থাকবেন, এটি অনুভব করার সম্ভাবনা তত কম।
তবে এখানে আরেকটি বিষয় হলো–– কিছু কিছু মানুষ গতি খুব ভালো অনুভব করতে পারে। যারা ভূমিকম্প টের পায় না তাদের সেনসিটিভিটি বা সংবেদনশীলতা কম।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, অনেকে আছেন, যারা উচ্চতা নিতে পারেন না। ছাদ থেকে নিচে তাকাতে পারেন না। কারণ তারা উচ্চতার বিষয়ে খুবই সংবেদনশীল। মোশন বা গতির ক্ষেত্রেও তাই। এক্ষেত্রে কেউ কেউ সংবেদনশীল হবেন, সেটি স্বাভাবিক হলেও ‘ভূমিকম্পের সময় ব্যক্তি কোন অবস্থায় ছিল, তার উপরেও তার টের পাওয়া না পাওয়া নির্ভর করে’।
উদাহরণস্বরূপ গতকাল মঙ্গলবার সকালের ভূমিকম্পের কথা উল্লেখ করে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিজাস্টার সায়েন্স অ্যান্ড ক্লাইমেট রেজিলিয়েন্স ডিপার্টমেন্টের সহযোগী অধ্যাপক ড. মো. শাখাওয়াত হোসেন সংবাদমাধ্যমকে বলেন, আজ যিনি বিশ্রাম নিচ্ছিলেন তার ভূমিকম্প টের পাওয়ার সম্ভাবনা বেশি। কেউ যদি চলাচলের মাঝে থাকে, তার টের পাওয়ার সম্ভাবনা কম। যিনি রান্না করছেন বা দৌড়াচ্ছেন তিনি টের না পেলেও যিনি চুপচাপ টেবিলে বসে কাজ করছেন, তার টের পাওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি।
আবহাওয়া অধিদপ্তরের ভূমিকম্প পর্যবেক্ষণ ও গবেষণা কেন্দ্রের সহকারী আবহাওয়াবিদ ফারজানা সুলতানাও একই কথা জানান সংবাদমাধ্যমকে।
তিনি বলেন, সাধারণত খুব কম মাত্রার ভূমিকম্প হলেও তিনি তা অনুভব করেন। কিন্তু তার বাসা নয় তলায় হওয়া সত্ত্বেও আজকের ভূমিকম্প তিনি অনুভব করেননি। এর কারণ, তখন বাচ্চাকে স্কুলে পাঠানোর জন্য আমি নিজেই দৌড়াদৌড়ি করছি। আমি স্থির থাকলে অবশ্যই অনুভব করতাম।
তিনি আরও বলেন, অথচ নিচ তলায় দাঁড়িয়ে থেকেও কেউ কেউ ভূমিকম্প অনুভব করেছে। আট-নয় তলার অনেক বাসিন্দাও কিন্তু আবার ভালোই ঝাঁকুনি অনুভব করেছেন। যিনি টিভি দেখছেন, তিনি হয়তো অনুভব করছেন। কিন্তু যিনি রান্না করছেন তিনি হয়তো ফিল করছেন না।
এই আবহাওয়াবিদ বলেন, যে এলাকায় ভূমিকম্প হয়েছে, সেখানকার সবাই স্বাভাবিকভাবে এটি অনুভব করে। কিন্তু দূরের ক্ষেত্রে এটা হয়– কেউ টের পায়, কেউ পায় না।
মন্তব্য করুন