ছোটবেলায় আনন্দে বা মজার ছলে ভূত হয়তো আমরা অনেকেই সেজেছি। কিন্তু বয়স আর ব্যস্ততা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে সেসব আনন্দ আর হয়তো পাওয়া হয়ে ওঠে না। তবে শৈশবের সেই স্মৃতিকে হাতড়ে ভূত সেজে উৎযাপন করার দিন আজ। এ দিনটিকে ‘ভূত দিবস’ বলা হয়। অনেকে আবার এটিকে হ্যালোইনও বলে থাকেন। এদিনে মানুষ নানা রকম ভূত সেজে ঘুরে বেড়ায়। প্রতিবছর ৩১ অক্টোবর ঐতিহ্যবাহী হ্যালোইন উৎসব পালিত হয়।
পশ্চিমা বিশ্বে জাঁকজমকতার সঙ্গে পালন করা হলেও বর্তমানের এর জনপ্রিয়তা বিশ্বব্যাপী। এখন পশ্চিমা বিশ্বের পাশাপাশি এশিয়াতে এ উৎসব উৎযাপন করা হয়। তবে সবচেয়ে অবাক করার বিষয় হলো এই ভূতুড়ে উৎসবের ইতিহাস ২০০০ বছরেরও বেশি পুরনো। অনেকেই ভাবেন, এ দিনটি হয়তো ভূতের মতো সাজতেই পালন করা হয়।
কিন্তু প্রকৃতপক্ষে মৃত আত্মাদের স্মরণে এ দিনটি পালন করা হয়।
হ্যালোইন শব্দের উৎপত্তি ১৭৪৫ সালের দিকে। খ্রিষ্টান সম্প্রদায়ের মধ্যে এর প্রথম উৎপত্তি ও বিকাশ ঘটে। স্কটিশ ভাষার শব্দ ‘অল হ্যালোজ’ ইভ থেকে হ্যালোইন’ বা ‘হ্যালোউইন’ শব্দটি এসেছে। হ্যালোইন শব্দের অর্থ ‘শোধিত সন্ধ্যা বা পবিত্র সন্ধ্যা’।
সময়ের সঙ্গে পরিবর্তিত হয়ে ‘হ্যালোজ’ ও ‘ইভ’ শব্দটি কালক্রমে ‘হ্যালোইন’এ রূপান্তরিত হয়। হ্যালোইন উৎসবের মূল থিম হলো, ‘হাস্যরস ও উপহাসের মাধ্যমে মৃত্যুর ক্ষমতার মুখোমুখি হওয়া’।
প্রায় ২০০০ বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, ইংল্যান্ড ও উত্তর ফ্রান্সে কেল্টিক জাতির বসবাস ছিল। নভেম্বরের প্রথম দিনটি তারা নববর্ষ বা ‘সাহ-উইন’ হিসেবে পালন করতো। এ দিনটিকে গ্রীষ্মের শেষ ও অন্ধকার বা শীতের শুরু বলে মনে করতেন তারা।
আক্টোবরের শেষ দিনের রাত সবচেয়ে খারাপ বলে কেল্টিক জাতির মধ্যে ধারণা প্রচলিত ছিল। এ রাতে সব প্রেতাত্মা ও অতৃপ্ত আত্মারা মানুষের ক্ষতি করতে পারে বলেও বিশ্বাস করতেন তারা। এজন্য কেল্টিক জাতির সদস্যরা এই রাতে বিভিন্ন ধরনের ভূতের মুখোশ ও কাপড় পরতেন।
এ তারিখে নির্ঘুম রাত কাটাতে আগুন জ্বালিয়ে মুখোশ পরে বৃত্তাকারে একসঙ্গে ঘুরতেন ও মন্ত্র যপতেন তারা। আর সময়ের পরিক্রমায় কেল্টিক জাতির ‘সাহ-উইন’ উৎসবই বর্তমানে ‘হ্যালোইন’ উৎসব হিসেবে পালিত হচ্ছে। হ্যালোইনের রাত নিয়ে অনেক ধরনের মিথ আছে।
তেমনই এক প্রচলিত আছে, এই রাতে দেবতা সামান সব মৃত আত্মাদের পৃথিবীতে আহ্বান জানান। উড়ন্ত ঝাড়ুতে করে হ্যালোইন ডাইনি উড়ে বেড়ায় আকাশজুড়ে।
এখন জেনে নেওয়া যাক হ্যালোইনের ইতিহাস-
এই উৎসবের সূচনা নিয়ে নানা তথ্য প্রচলিত রয়েছে। ইতিহাস থেকে জানা যায়, হ্যালোইন উৎসবটি মূলত সেল্টিক উৎসব সামহেইন থেকে এসেছে। যেটি ২০০০ বছর আগের ঐতিহ্যের অংশ। প্রায় দুই হাজার বছর আগে বর্তমান আয়ারল্যান্ড, যুক্তরাজ্য এবং উত্তর ফ্রান্সে কেল্টিকরা সামহেইন উৎসব উদযাপন করা হতো।
তবে এই উৎসবটি ছিল কেল্টিকদের নতুন বছর উদযাপনের দিন, যা ১ নভেম্বর শুরু হতো। তারা বিশ্বাস করতেন এই দিনে মৃতদের আত্মারা জীবিতদের জগতে প্রবেশ করতে পারে।
পরবর্তীতে খ্রিষ্টান সম্প্রদায় এই উৎসবটির আয়োজন শুরু করে। সে সময়ে ‘অল হলোজ ইভ’ নামে এই উৎসব পালন করা হলেও পরে ‘হ্যালোইন’ নামে জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। সময়ের সঙ্গে সঙ্গে এই উৎসবে এসেছে নানান পরিবর্তন। হ্যালোইনকে কেন্দ্র করে খাবার, পোশাক, ঘর সাজানো এবং চকলেট সংগ্রহ এমনকি হ্যালোইন পার্টির মতো নিয়ম এসেছে।
পশ্চিমাদের মতো বাংলাদেশেও হ্যালোইন পার্টির আয়োজন হয়ে থাকে। অনেক তরুণ-তরুণীরা ভয়ংকর মুখোশ ও পোশাক পরে নানা খেলা ও নাচগানে মেতে ওঠেন। বিশেষ করে সামাজিক মাধ্যমে হ্যালোইন উদযাপনের ট্রেন্ড দেখা যায়। এছাড়া দেশের বিভিন্ন পাঁচ তারকা হোটেলেও বর্তমানে এ উৎসবের আয়োজন করা হয়।
মন্তব্য করুন