পাহাড়ি ঢল এবং বঙ্গোপসাগরে সৃষ্ট মৌসুমি লঘুচাপ ও ভারি বৃষ্টিপাতে দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের সুরমা-কুশিয়ারা, ধলাই, মনু, খোয়াই, পূর্বাঞ্চলের গোমতী, মুহুরী ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের ফেনী, হালদা নদীগুলোর পানি বেড়ে দেশের ১০ জেলায় ভয়াবহ বন্যা দেখা দিয়েছে। ফেনী, কুমিল্লা, চট্টগ্রাম, খাগড়াছড়ি, নোয়াখালী, মৌলভীবাজার, হবিগঞ্জ ও সিলেটে পরিস্থিতি বেশি অবনতি হয়েছে। অন্যান্য জেলায় ধীরে ধীরে বন্যার অবনতি হচ্ছে। এতে ৩৭ লাখের বেশি মানুষ চরম মানবিক সংকটে পড়েছে। এখন পর্যন্ত মারা গেছেন ৬ জন। তাদের মধ্যে কুমিল্লায় ৪ জন, ফেনীতে একজন ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় একজন রয়েছেন।
এমন প্রাকৃতিক দুর্যোগে খাদ্য-দ্রব্যের সঙ্গে স্বাস্থ্য ঝুঁকিও তৈরি হয়। তাই এসময়ে প্রশাসনের পাশাপাশি সাধারণ মানুষেরও এগিয়ে আসা প্রয়োজন। বিশেষ করে নিম্নোক্ত বিষয়ে সজাগ থাকা প্রয়োজন-
# বন্যা কবলিত এলাকায় বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ করুন।
# পানি বিশুদ্ধ করনের ট্যাবলেট হ্যালোজেন, ক্লোটেক সলুউশন বাজারে পাওয়া যায় তা সরবরাহ করুন বা সম্ভব হলে পানি ফুটিয়ে সরবরাহ করুন বা ফিটকিরি মিশিয়ে পান করতে বলুন।
# ২ টি হ্যালোজেন ট্যাবলেট দিয়ে ১০ লিটার বা এক কলসি পানি বিশুদ্ধ করা যাবে। হ্যালোজেন ট্যাবলেট স্বাস্থ্যের কোন ক্ষতি করে না।
# একেবারে বিশুদ্ধ পানি পাওয়া না গেলে নদী বা পুকুরের পানি পরিষ্কার কাপড়ে ছেকে ৩০ ফোঁটা ক্লোটেক সলুউশন ১০ লিটার পানিতে মিশিয়ে পান করা যাবে। এসব ক্ষেত্রে সলুউশন মিশানোর পর মিনিমাম ৩০ মিনিট পানি থিতু হতে সময় দিন।
# ডায়রিয়া হলে বিশুদ্ধ পানির সাথে বারবার ওরস্যালাইন খেতে দিন।
# বেশি পাতলা পায়খানা হলে চিড়া, নরম ভাত ও স্বাভাবিক খাবার চালিয়ে নিন। মেডিকেল টিম বা চিকিৎসকের পরামর্শে এন্টিবায়োটিক প্রদান করা যেতে পারে।
# বন্যার পানিতে জ্বর, খিচুনি, শ্বাসকষ্ট, কাশি হলে মেডিকেল টিমের পরামর্শ নিন বা হাসপাতালে প্রেরণ করুন।
# প্রতিবন্ধী, বয়স্ক ও বেশি অসুস্থ রোগীদের উদ্ধারে অগ্রাধিকার দিন। প্রয়োজনে আগে আগেই নিরাপদ স্থানে সরিয়ে নিন।
# ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ ও হার্টের রোগীর স্বাভাবিক ডোজের ওষুধ চালিয়ে নিন। বিদ্যুৎ না থাকলেও ঘরের স্বাভাবিক তাপমাত্রায় আলাদা পাত্রে ইনসুলিন রাখা যাবে।
# বন্যার পানির সাথে পোকা, ব্যাঙ, ইদুর ইত্যাদির খোঁজে ঘরে সাপ প্রবেশ করতে পারে, তাই কখনোই ঘরের মেঝেতে ঘুমাবেন না। সম্ভব হলে বিছানা বারবার ঝেড়ে নিন এবং ঘুমানোর সময় মশারী ব্যবহার করুন। কোন কীটনাশক বা কেমিক্যাল দিয়ে সাপ তাড়ানো যায় না।
# শিশুরা যাতে বন্যার পানিতে ডুবে না যায় সেই জন্য আলাদা ব্যবস্থা নিন, ঘরের দরজার বাহিরের দিকে উঁচু করে বাঁশের বেড়া বা প্রতিবন্ধকতা দিন, উৎসাহী হয়ে শিশু পানির দিকে ছুটে যেতে চাইবে।
# শুকনো খাবার ( চিড়া, খই, বিস্কুট, পাউরুটি ইত্যাদি) যথেষ্ট সংগ্রহে রাখুন বা ডোনেশন এর সময় বরাদ্ধ বাড়িয়ে দিন।
# আশ্রয়কেন্দ্রে স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়ে তাই শিশু ও গর্ভবতীদের বাড়তি যত্ন নিন। হেল্পলাইন এর সহযোগিতা নিন। সরকারি হেল্পলাইন ১৬২৬৩
# বন্যা পরবর্তীতে অসুস্থতা এড়াতে আশে পাশের পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার দিকে নজর দিন। পরিস্থিতি স্বাভাবিক হতে সময় দিন, কোন দুর্যোগই দীর্ঘস্থায়ী হয়নি। সরকারি-বেসরকারি সংস্থার প্রতি আস্থা রাখুন।
# গবাদিপশু, হাঁস-মুরগী ইত্যাদি উঁচু স্থানে রাখুন, সম্ভব হলে আশ্রয় কেন্দ্রে নিয়ে যান। ঝুঁকি এড়াতে মৃত পশুপাখি মাটিতে পুঁতে ফেলুন, ইনফেকশন কমবে।
এ ছাড়াও দুর্যোগের সময় ধৈর্য্য ধরুন এবং নিজের মানসিক স্বাস্থ্যের যত্ন নিন। বিভিন্ন স্বেচ্ছাসেবীদের উদ্যোগকে স্বাগত জানান এবং গোপনে বা প্রকাশ্যে অসহায় মানুষের কল্যাণে সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিন।
মন্তব্য করুন