‘আলো আমার আলো ওগো, আলো ভুবন ভরা,/আলো নয়ন ধোওয়া আমার, আলো হৃদয় হরা।’
কবিগুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের লেখনীতে আলোর যে মহিমার সুর বেজে ওঠে তা সত্যিই অনন্য। জীবনযাপনের প্রতিটি ক্ষেত্রেই আলোর বিচরণ। আলোবিহীন একটি ক্ষণ যেন নরক যন্ত্রনাসম। আলো না থাকলে হয়তো প্রকৃতিই সৃষ্টি হতো না।
প্রতিটি জীবের প্রাণ সঞ্চালক শক্তির উৎসই হলো আলো। আধুনিক প্রযুক্তির ছোঁয়ায় এখন বিশ্বের অনেক দেশের রাতকে রাত বলে মনেই হয় না। প্রদীপ আর হারিকেনের মিটিমিটি আলোর বদলে বিজলি বাতি এখন সবার ঘরের শোভা বাড়াচ্ছে। সে জন্যই আধুনিক বাড়ি তৈরিতে ইন্টেরিয়র ডিজাইনাররা শুরুতেই ভাবেন বাড়ির অন্দর-মহলের আলোকসজ্জার নান্দনিকতা নিয়ে।
আলোকসজ্জা হলো বাড়ির অলংকার। গৃহের সৌন্দর্যের শৈল্পিকতা ফুটে ওঠে আলোকসজ্জার মাধ্যমে। উপযুক্ত আলোক বিন্যাস বাড়ির ডিজাইনকে করে তোলে আরও সমৃদ্ধ।
অন্দর সজ্জায় আলোর সঠিক ব্যবহার এবং উপযুক্ত আলোকসজ্জার বিষয়ে কিছু পরামর্শ দিয়েছেন ইন্টেরিয়র ডিজাইন স্টুডিও স্প্যারোর প্রধান ইন্টেরিয়র ডিজাইনার পাপন বড়ুয়া। তিনি কালবেলাকে জানান, ‘গৃহে বসবাসযোগ্য পরিবেশ আনতে আলোর ভূমিকা অপরিসীম, তা দিনের আলোই হোক অথবা রাতের বিজলি বাতি। আলোকসজ্জার সঠিক বিন্যাস ঘরের পরিবেশকে করে মনোরম ও রুচিশীল।’
অন্দর সজ্জায় আলোর সঠিক ব্যবহার এবং উপযুক্ত আলোকসজ্জার বিষয়ে ডিজাইনার পাপন বড়ুয়ার পরামর্শগুলো হলো :
দরজার ওপরে ঠিক মাঝখানে সিলিং বানিয়ে তাতে বাতি এমনভাবে জুড়ে দিন, যাতে আলো দেখা যায়; কিন্তু আলোর উৎস খুঁজে পাওয়া যাবে না। আর আশপাশের অন্ধকার জায়গাগুলোয় ডেকরেটিভ স্পট লাইট দিয়ে দূর করতে পারেন প্রধান ফটকের আঁধার।
বসার ঘর
আলোকসজ্জার জন্য চমৎকার জায়গা বসার ঘর। খোলামেলা জায়গা হওয়ায় ঘরের কেন্দ্রে একটি বড় ওভারহেড ফিক্সচার রাখতে পারেন। আর ফ্লোর ল্যাম্পগুলো অন্ধকার কোণের আলো বৃদ্ধির জন্য ব্যবহার করতে পারেন।
ড্রইংরুমে স্যান্ডেলিয়ার বাতির ব্যবহার করলে ঘরের আলো বাড়ে বহুগুণ। আর আভিজাত্য প্রকাশে সিলিংয়ে লাগাতে পারেন বিভিন্ন আকারের নান্দনিক ডিজাইনের ঝাড়বাতি।
খাবারের ঘর
ঘরের আলোকসজ্জার ক্ষেত্রে খাবারের ঘরকে দৃষ্টিনন্দন করা সবচেয়ে সহজ। এখানে মূল ফোকাসের কেন্দ্র হলো খাবারের টেবিল। তাই টেবিলের মাঝ বরাবর সিলিং করে তাতে ঝুলিয়ে দিন একটি ক্রিস্টাল স্যান্ডেলিয়ার বাতি। অতিরিক্ত অন্ধকার জায়গাগুলোয় টেবিল ল্যাম্প ব্যবহার করতে পারেন।
রসই ঘর
রান্নাঘরকে আলোকিত করা একটি জটিল বিষয়। এক্ষেত্রে আপনি লাগাতে পারেন ওভারহেড ফিক্সচার বাতি। ঘরের নান্দনিকতা বাড়াতে প্রয়োজনে ঝাড়বাতিও লাগাতে পারেন। এখানে বাতি যেটাই লাগান খেয়াল রাখবেন যেন আলোর ফোকাসটা রান্নাঘর অ্যাটল এবং ডাইনিং টেবিলের দিকে থাকে। সঙ্গে আন্ডার-ক্যাবিনেট লাইটিং সুবিধাও রাখতে পারেন।
শয়ন কক্ষ
বেডরুম হলো গৃহস্থালির প্রধান ঘর। ঘরের মাঝে একটি বড়সড় ঝাড়বাতি লাগান সঙ্গে ওয়ার্ডরোবে রাখুন একটি টেবিল ল্যাম্প। ঘরে গাছের টব থাকলে টবের ঠিক ওপরে একটি ওভারহেড লাইট ব্যবহার করতে পারেন।
ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে ড্রেসিং টেবিলের আয়নার চারপাশে নিরবচ্ছিন্ন টাস্ক লাইটিং যোগ করতে পারেন। আর বারান্দার শোভা বাড়াতে সিলিংয়ে দিতে পারেন ছোট ডেকরেটিভ সিলিং স্পট লাইট।
ঘরের অন্দরে নিখুঁত আলো ঘরকে করে বাসযোগ্য আর স্বল্প আলো চোখের ক্ষতির কারণ। সঠিক উপায়ে করা আলোকসজ্জা ঘরের লেআউটকে করে দৃষ্টিনন্দন। ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে এবং ডিজাইনের নান্দনিকতা ফুটিয়ে তুলতে আলোকসজ্জার বিকল্প কোনো ব্যবস্থা নেই। ঘর নানা রঙের বর্ণীল আলোয় রাঙাতে দরকার আলোকসজ্জা নামক অলংকার।