তীব্র গরমের এই সময় রোজা রেখে সুস্থ থাকাটা বেশ চ্যালেঞ্জের বিষয়। আবহাওয়ার ওপর কারও হাত না থাকলেও খাদ্যাভ্যাসের মাধ্যমে এই কঠিন সময়ে আপনি পেতে পারেন স্বস্তি ও প্রশান্তি। এমন পরিস্থিতি সামলাতে চাইলে ইফতার এবং সেহরিতে রাখতে পারেন এমন কয়েকটি খাবার যা উৎপাদনশীলতা বাড়াবে, শক্তি জোগাবে এবং পুরো দিন আপনাকে রাখতে ঝরঝরে। জেনে নিন সেসব খাবার সম্পর্কে-
পর্যাপ্ত পানি বা ডাব : ইফতারের সময় একসঙ্গে অনেক বেশি পানি পান করেন অনেকে। এতে খাবার ও পানি মিলে ভেতরে এক ধরনের অস্বস্তি তৈরি করে। এতে ইফতারের পর ইবাদতে, কাজে ক্লান্তি আসে। এটা না করে ইফতারের পর থেকে সেহরির আগ পর্যন্ত একটু পর পর ৮-১০ গ্লাস পানি খাওয়া উচিত।
গ্লুকোজ বা স্যালাইন : বেশি দুর্বল লাগলে যাদের উচ্চ রক্তচাপ কিংবা বহুমূত্রসহ, নানাবিধ জটিল রোগের সমস্যা নেই, তারা এক গ্লাস গ্লুকোজ বা স্যালাইন খেয়ে নিতে পারেন ইফতারের পর।
খেঁজুর : ইফতারে অবশ্যই খেজুর বা খোরমা খাবেন। এতে আছে শর্করা, চিনি, ক্যালসিয়াম, ম্যাগনেশিয়াম, সোডিয়াম, ফসফরাস, আয়রন, কপার, সালফার, ম্যাঙ্গানিজ, সিলিকন ও ক্লোরিন ফাইবার। যা সারা দিন রোজা রাখার পর ইফতারে খুবই দরকারি। সেহরিতেও একটি হলেও খেজুর খেতে পারেন। পাহাড়ে কিংবা ভ্রমণে দ্রুত শক্তি সঞ্চয় করতে এটি আবশ্যকীয় উপাদান হিসেবেই জানেন সবাই। প্রতিটি খেঁজুরে থাকে ৬৬ ক্যালরি শক্তি। সেহরিতে খাবারের পর দুটি খেঁজুর খেয়ে নিলে সারা দিনে অনেকটা সাপোর্ট পেয়ে যাবেন।
দই : ইফতারিতে দই বা দই চিড়া খেতে পারেন। এতে সারা দিন অভুক্ত পেটে ঠান্ডা কিছু হজমক্রিয়া সচল রাখবে। এ ছাড়া অ্যাসিডিটি নিয়ন্ত্রণেও সাহায্য করবে। প্রতি ১০০ গ্রাম দইয়ে শক্তি থাকে ২৫৭ ক্যালরি। কোষ্ঠকাঠিন্যের সমস্যা থাকলে জুস কিংবা দুধের সঙ্গে ইসুবগুল খেতে পারেন।
কলা : কার্বোহাইড্রেট, পটাশিয়াম আর ভিটামিন বি সিক্সের আধার হচ্ছে কলা। খুব দ্রুত তা শক্তি জোগায়। অধিকাংশ টেনিস খেলোয়াড়ই লম্বা ম্যাচের মাঝের বিরতিতে এনার্জি পেতে কলা খেতে পছন্দ করেন। সিন্থেটিক এনার্জি ড্রিঙ্কের চেয়ে তা শতগুণে ভালো। দুধ আর কলা দিয়ে মিল্কশেক তৈরি করে নিতে পারলে তো কথাই নেই, শরীরের পাশাপাশি ত্বকও ভালো হবে।
লাল চালের ভাত : লাল চালের ভাতে চালের পুষ্টিগুণের বেশিরভাগটাই সঞ্চিত থাকে। এতে ফাইবার, প্রোটিন আর খনিজ খুব তাড়াতাড়ি শক্তি উৎপাদনে সাহায্য করে। বাড়তি ফাইবারের কারণে নিয়ন্ত্রণে থাকে রক্তের শর্করার পরিমাণও।
আপেল : একটি মাঝারি আকারের আপেলে ২৫ গ্রাম কার্বোহাইড্রেট, ২০ গ্রাম চিনি আর প্রায় ৫ গ্রাম ফাইবার। এই ফাইবার আর প্রাকৃতিক শর্করার কারণেই আপনি যে শক্তি পাবেন, তা অনেকক্ষণ থাকবে শরীরে। সেই সঙ্গে জেনে রাখুন, আপেলে প্রচুর পরিমাণে অ্যান্টি অক্সিড্যান্টও মেলে। তাই ইফতার বা সাহরিতে একটা আপেল কিন্তু খেতেই পারেন।
ওটমিল : রোলড বা হোল ওটস শরীরে শক্তির জোগান দেয়। এতে দীর্ঘক্ষণ চাঙ্গা থাকা সম্ভব। ওটসে বিটা-গ্লুকান নামের একটি সলিউবল ফাইবার থাকে যা পানির সঙ্গে মিশে যখন রান্না হয়, তখন গাঢ় একটি জেল তৈরি করে। এই জেল পাচনতন্ত্রে অনেকক্ষণ থাকে, ফলে পেট বেশিক্ষণ ভরা আছে বলে মনে হয়। সেসঙ্গে এতে বিদ্যমান ভিটামিন আর খনিজ শক্তি জোগায়।
বাদাম : এনার্জি বাড়াতে কাজুবাদাম, আখরোট আর আমন্ডের কোনও বিকল্প নেই। ওমেগা থ্রি, ওমেগা সিক্স ফ্যাটি অ্যাসিড আর অ্যান্টি অক্সিড্যান্ট সমৃদ্ধ এই বাদাম থেকে কার্বোহাইড্রেট আর ফাইবারও মেলে যথেষ্ট পরিমাণে। তাই শক্তি সংরক্ষণ করার কাজে বাদামের ভূমিকা অপরিসীম।
মন্তব্য করুন