জার্মানির ফ্যাঙ্কফুর্টে ৮০০ বছরের পুরোনো এ ট্রেড ফেয়ার সর্বপ্রথম হয়েছিল ১১৫০ সালে। মধ্যযুগে, বণিক এবং ব্যবসায়ীদের মিলনক্ষেত্র তৈরির লক্ষ্যে ফ্রাঙ্কফুর্ট বসন্ত মেলাটি চতুর্থ সম্রাট লুইয়ের কাছ থেকে বিশেষ অধিকার লাভ করে। গত ৭ ফেব্রুয়ারি শেষ হলো ‘অ্যাম্বিয়েন্ট ইন্টারন্যাশনাল ট্রেড ফেয়ার, ২০২৩’-এর বর্ণাঢ্য আয়োজন।
ফ্রাঙ্কফুর্টের অ্যাম্বিয়েন্ট মেলা হলো ভোক্তাপণ্য শিল্পের জন্য বিশ্বের শীর্ষস্থানীয় আন্তর্জাতিক বাণিজ্যমেলার একটি। ফ্রাঙ্কফুর্টের এই মেলা বিশ্বব্যাপী ভোগ্যপণ্যের ক্রেতা এবং উৎপাদকের অন্যতম বিচরণ ক্ষেত্রে পরিণত হয়ে উঠেছে। ফ্রাঙ্কফুর্ট বিমানবন্দর থেকে ১২ কিলোমিটার দূরত্বেই অবস্থান এ ট্রেড ফেয়ারের।
বাংলাদেশসহ বিশ্বের ১৭০টি দেশের ৪ হাজার ৫৬১টি প্রতিষ্ঠানের অংশগ্রহণে ঝলমলিয়ে উঠেছিল প্রদর্শনী কেন্দ্রের ৩ লাখ ৫২ হাজার ৯৫০ বর্গমিটারের এলাকাটি। সারা বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডের ১ লাখ ৫৪ হাজার ক্রেতার সমাগম হয়েছিল এ প্রদর্শনীতে। তাদের প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র সরাসরি কিনতে বা অর্ডার দিতেই বিশ্বের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে ছুটে এসেছিলেন এখানে।
কারু ডিজাইন, ক্রাফট-সামগ্রী, টেবিলওয়্যার, উপহারসামগ্রী, ক্রোকারিজ, ইলেকট্রনিক-সামগ্রী, হোম ডেকর, পরিবেশবান্ধব তৈজসপত্র, বাড়ির সাজসজ্জার সরঞ্জাম, সিরামিক-সামগ্রীসহ নানান রকমের পণ্যের পসরা বসেছিল অ্যাম্বিয়েন্ট বাণিজ্যমেলায়। বিশ্বের নামিদামি ব্র্যান্ডের সঙ্গে বাংলাদেশের ইপিবির তত্ত্বাবধানে যারা হোম ডেকর নিয়ে কাজ করে এবং কুটির শিল্পকে টিকিয়ে রেখেছে এমন রপ্তানিমুখী প্রতিষ্ঠানগুলো অংশ নেয় এ মেলায়।
এবারের মেলায় দেশীয় খাদির কুশন কভার, টেবিলওয়্যার, পর্দাসামগ্রী নিয়ে প্রথমবারের মতো অংশ নেয় স্টুডিও বিবিয়ানা। প্রতিষ্ঠানটির স্বত্বাধিকারী ও ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলছিলেন, ‘অনেক বছর ধরেই আমার প্ল্যান ছিল এ ফেয়ারে অংশগ্রহণ করার কিন্তু ব্যাস্ততার কারণে সময় হয়ে ওঠেনি। তাই এ বছর অংশ নিলাম। এবারের ফেয়ারে আমি এবং স্টুডিও বিবিয়ানা বেশ সফল।’
মেলায় দেশীয় হোগলাপাতা, বাঁশ, খড় দিয়ে তৈরি জিনিসপত্র, পাটজাত পণ্যসহ উত্তরাঞ্চলের শতরঞ্জির প্রতি আগত ক্রেতাদের আগ্রহটা ছিল চোখে পড়ার মতো। মেলায় ক্রেতাদের বেশি চাহিদা ছিল বিভিন্ন প্রাকৃতিক উপকরণে তৈরি ঝুড়ির।
মেলা প্রসঙ্গে ডিজাইনার লিপি খন্দকার বলেন, ‘দেশীয় পণ্য, দেশীয় ঐতিহ্য, কারুশিল্পকে আন্তর্জাতিক পরিসরে ছড়িয়ে দিতে যারা দেশীয় ঐতিহ্য এবং কারুশিল্প নিয়ে কাজ করছেন তাদের এ ধরনের মেলায় অংশগ্রহণ করা প্রয়োজন। দেশীয় ঐতিহ্য, কারুশিল্প এবং সংস্কৃতিকে এগিয়ে নিতে আমাদের সবাইকে একসঙ্গে কাজ করে যেতে হবে। এ ক্ষেত্রে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা অতি প্রয়োজনীয়।’