সময়ের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে চাকরির বাজার। শিল্পবিল্পব, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ও অটোমেশনের প্রভাব পড়ছে চাকরির বাজারে। এ প্রভাবে আগামী দশকের মধ্যে হারিয়ে যেতে পারে বেশ কিছু চাকরি। অন্যদিকে বাড়তে পারে বেশকিছু চাকরির কদর।
সম্প্রতি বিশ্ব অর্থনৈতিক ফোরামের ‘ফিউচার অব জবস রিপোর্ট ২০২৫’-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০৩০ সালের মধ্যে ১৭ কোটি নতুন চাকরি তৈরি হবে, সেই সঙ্গে ৯ কোটি ২০ লাখ মানুষ তাদের চাকরি হারাবে। যার ফলে মোট ৭ কোটি ২০ লাখ নতুন চাকরি তৈরি হবে।
তবে চলুন জেনে নেওয়া যাক, আগামী কয়েক বছরে হারিয়ে যেতে পারে যেসব চাকরি-
১. ডাটা এন্ট্রি ক্লার্ক
ডাটা এন্ট্রি ক্লার্কের কাজ হলো বিভিন্ন উৎস থেকে তথ্য সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট সফটওয়্যার বা ডাটাবেসে নির্ভুলভাবে টাইপ করে সংরক্ষণ করা। পাশাপাশি তথ্য হালনাগাদ, যাচাই এবং প্রয়োজনে সংশোধন করাও তার দায়িত্ব।
এ চাকরি বিলুপ্ত হওয়া কারণ- অটোমেশন সফটওয়্যারের কারণে প্রচুর ডেটা খুবই অল্প সময়ে সঠিকভাবে এন্ট্রি করা সম্ভব। তবে সেই সঙ্গে ডেটা অ্যানালিস্ট, এআই/অটোমেশন স্পেশালিস্ট
২. টেলিমার্কেটার
টেলিমার্কেটারের কাজ হলো ফোনের মাধ্যমে পণ্য বা সেবা বিক্রির চেষ্টা করা এবং সম্ভাব্য গ্রাহকদের সাথে যোগাযোগ গড়ে তোলা। তারা কখনও কখনও জরিপ নেওয়া বা কাস্টমার ফিডব্যাক সংগ্রহের কাজও করে।
এ চাকরি বিলুপ্ত হওয়া কারণ- এআইয়ের চ্যাটবটই হাতের মুঠোয় ন্যূনতম সময়ে নিখুঁতভাবে টেলিমার্কেটারদের কাজ করে দেবে। সেই সঙ্গে ডিজিটাল মার্কেটিং অফিসার ও কাস্টমার সাকসেস ম্যানেজারদের কদর থাকবে।
৩. রিটেইল ক্যাশিয়ার
রিটেইল ক্যাশিয়ারের কাজ হলো দোকানে ক্রেতাদের বিল নেওয়া, টাকা লেনদেন করা এবং রসিদ প্রদান করা। পাশাপাশি তারা পণ্য স্ক্যান করা, ক্যাশ রেজিস্টার ব্যালেন্স রাখা এবং গ্রাহক সেবা দেওয়ার কাজও করে।
এ চাকরি বিলুপ্ত হওয়া কারণ- সেলফ চেক-আউট সিস্টেমের কারণেই মূলত বিলুপ্ত হবে এই পেশা। আপনি যে পণ্য বা সেবা চান, তা নিজেই সিস্টেমে টাকা দিয়ে নিতে পারবেন। ক্যাশিয়ারের প্রয়োজন হবে না। যেমন অনলাইন সিস্টেমে পেমেন্ট করে কেনাকাটা করা বা মেট্রোরেলে অটোমেটেড মেশিনে টাকা দিয়ে কার্ড কিনে ভ্রমণ করা। সেই সঙ্গে ই-কমার্স স্পেশালিস্ট, লজিস্টিক অ্যান্ড ইনইভেনটরি ম্যানেজার।
৪. ব্যাংক টেলার
ব্যাংক টেলারের কাজ হলো গ্রাহকদের জমা, উত্তোলন, চেক ক্যাশ করা এবং টাকা লেনদেনের অন্যান্য পরিষেবা প্রদান করা। তারা গ্রাহকের অ্যাকাউন্ট তথ্য যাচাই ও আপডেট করাও করে।
এ চাকরি বিলুপ্ত হওয়া কারণ- অনলাইন ব্যাংকিং ও অ্যাডভান্সড এটিএম সার্ভিসের কারণে সশরীর ব্যাংকে উপস্থিত হয়ে কাজ করার প্রয়োজন কমে যাবে। সেই সঙ্গে ফিন্যান্সিয়াল অ্যাডভাইজার, ফিনটেক স্পেশালিস্ট।
৫. ট্রাভেল এজেন্ট
ট্রাভেল এজেন্টের কাজ হলো গ্রাহকদের জন্য ভ্রমণের পরিকল্পনা করা, টিকিট, হোটেল বুকিং এবং ভ্রমণ সংক্রান্ত পরামর্শ প্রদান করা। তারা ভিসা প্রসেসিং, ভ্রমণ বীমা এবং ট্যুর প্যাকেজ ব্যবস্থাপনাতেও সহায়তা করে।
এ চাকরি বিলুপ্ত হওয়া কারণ- অনলাইন ব্যাংকিং প্ল্যাটফর্ম ও এআই পাওয়ার্ড ট্রাভেল প্লানিং ট্যুর থাকায় ট্রাভেল এজেন্টদের সঙ্গে সলাপরামর্শ করে ভ্রমণের পরিকল্পনা সাজানোর প্রবণতা কমে যাবে অনেকটাই। সেই সঙ্গে ট্রাভেল কনসালট্যান্ট ফর নিশ মার্কেট (লাক্সারি ট্রাভেল, অ্যাডভেঞ্চার ট্যুরিজম, ইকো-ফ্রেন্ডলি ট্রাভেল—এসব ক্ষেত্রে কনসালট্যান্সির প্রয়োজন থাকবে), কনটেন্ট ক্রিয়েটর ও ইনফ্লুয়েন্সার।
৬. পোস্টাল সার্ভিস ওয়ার্কার
পোস্টাল সার্ভিস ওয়ার্কারের কাজ হলো চিঠি, পার্সেল ও অন্যান্য ডাক সামগ্রী সংগ্রহ, বাছাই এবং নির্ধারিত ঠিকানায় পৌঁছে দেওয়া। তারা ডাকঘরে গ্রাহকদের সেবা প্রদান এবং মেইল প্রসেসিংয়ের কাজও করে।
এ চাকরি বিলুপ্ত হওয়া কারণ- ডিজিটাল যোগাযোগ ও অনলাইন বিল–ব্যবস্থার কারণে ইতিমধ্যে পোস্ট অফিসের কর্মব্যস্ততা কমে গেছে অনেকটাই। সেই সঙ্গে লজিস্টিকস অ্যান্ড সাপ্লাই চেইন স্পেশালিস্ট, কুরিয়ার অ্যান্ড ডেলিভারি ম্যানেজার।
৭. অ্যাকাউন্ট্যান্ট ও অডিটর
অ্যাকাউন্ট্যান্টের কাজ হলো আর্থিক রেকর্ড তৈরি, বিশ্লেষণ এবং রিপোর্ট করা, পাশাপাশি বাজেট এবং ট্যাক্স সংক্রান্ত দায়িত্ব সামলানো। অডিটরের কাজ হলো এই আর্থিক নথিগুলোর নির্ভুলতা যাচাই করা এবং প্রতিষ্ঠানের আর্থিক কার্যক্রম নিয়ম মেনে চলছে কিনা তা মূল্যায়ন করা।
এ চাকরি বিলুপ্ত হওয়া কারণ- এআইয়ের অ্যাকাউন্টিং সফটওয়্যারই এই পেশাদারদের কাজ করে দেবে। সেই সঙ্গে কদর বাড়বে ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট, ফিন্যান্সিয়াল টেকনোলজিস্ট ক্ষেত্রে।
মন্তব্য করুন