ইদানীং ভারি বর্ষণ ও বন্যার কারণে সাপে কাটা রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। বাংলাদেশে প্রায় ৮০ প্রজাতির সাপ রয়েছে যার মধ্যে ২৭ প্রজাতির সাপ বিষধর। সর্প দংশন পরবর্তী বিষক্রিয়ায় অনাকাঙ্ক্ষিত মৃত্যু ঘটে অনেকের। সর্প দংশন সম্বন্ধে অনেক ভুল ধারণা এখনো সমাজে বিরাজমান। প্রয়োজন সচেতনা বাড়ানো ও কার্যকরী পদক্ষেপ নেওয়া এসব কুসংস্কার রোধ করার জন্য।
সাপে কাটার পর কী করবেন?
ভয় পাবেন না। শান্ত থাকুন। বেশিরভাগ সাপ অবিষধর। এমনকি বিষধর সাপের দংশনেও অনেক সময় পর্যাপ্ত বিষ নাও থাকতে পারে। প্যানিক অ্যাট্যাকে অনেকে মৃত্যু ভয়ে আতঙ্কগ্রস্ত হয়ে অসংগত আচরণ, মূর্ছা যেতে পারেন। তাই যথাযথ আশ্বস্ত করুন। বিজ্ঞানভিত্তিক ও কার্যকরী চিকিৎসা রয়েছে এ ব্যাপারে বারবার অভয় দিন। তাতে রোগী বিশ্বাস ও আস্থা ফিরে পারে।
মারাত্মক বিষক্রিয়া হতে সময় লাগে। ততক্ষণে আপনি হাসপাতালে পৌঁছে যেতে পারবেন। ২৪ ঘণ্টার মধ্যে সাধারণত বেশিরভাগ লক্ষণ প্রকাশ পায়- বিষধর সাপ হলে।
দংশিত সাইট (হাত বা পা) নিশ্চল রাখুন। পায়ে দংশিত হলে হাঁটাচলা করবেন না। হাতে দংশিত হলে হাত নাড়াচাড়া করবেন না। বাঁশ, কাঠ বা শক্ত কিছু দিয়ে স্প্লিন্ট দেওয়া যেতে পারে। যেমন দেওয়া হয় হাড় ভাঙলে।
গিরা নাড়াচাড়া বা মাংসপেশীর সংকোচনের ফলে বিষ দ্রুত রক্তের মাধ্যমে শরীরে ছড়িয়ে পড়ে বিষক্রিয়া সৃষ্টি করতে পারে। তাই যথাসম্ভব শান্ত ও ধীর থাকুন।
সুতা, শক্ত নাইলনের রশি, তার ইত্যাদি দিয়ে গিট দিবেন না। এতে হিতে বিপরীত হতে পারে। রক্তসরবরাহ বন্ধ হয়ে হাতে পায়ে পচন ধরে দীর্ঘমেয়াদি জটিলতা দেখা দেয় অনেকের। বিকলাঙ্গতা হতে পারে দীর্ঘদিন চিকিৎসার পরেও।
গামছা বা চওড়া কাপড় দিয়ে হালকা একটি গিট দেওয়া যেতে পারে। তবে এর ফলে বিষ অবরোধ করা যাবে বা গিটের উপকারিতা নিয়ে বিজ্ঞানভিত্তিক কোনো প্রমাণ নেই।
দংশিত স্থান সাবান পানি দিয়ে ধুয়ে নিন। খালি হাতে ক্ষতস্থান ওয়াশ করবেন না। অন্তত হাতে বাড়তি পলিথিন মুড়িয়ে নিন। অ্যান্টিসেপটিক মলম থাকলে ক্ষতস্থানে লাগানো যেতে পারে।
দংশিত স্থান কাঁটবেন না, সুঁই ফুটাবেন না, গাছ- গাছালীর রস, গোবর, চুলার মাটি কিংবা কোনো প্রকার প্রলেপ দিবেন না। এতে সংক্রমণের ঝুঁকি বাড়ে।
মন্ত্রপড়া, পানি পড়া, ওঝা, বৈদ্য এসব অর্থহীন ও অকেজো চিকিৎসা পদ্ধতি গ্রহণ করবেন না। এতে সময় ক্ষেপণ হয় এবং এসব জটিলতায় রোগী হাসপাতালে গেলেও বিলম্বের কারণে অনেকে মৃত্যুবরণ করেন।
মোটরসাইকেল, সিএনজি অটোরিকশা বা অ্যাম্বুলেন্স (সম্ভব হলে) এ দ্রুত নিকটস্থ হাসপাতালে রোগীকে স্থানান্তর করুন। সরকারি হাসপাতালে বিনামূল্যে অ্যান্টিভেনম সরবরাহ করা হয়ে থাকে।
এ ছাড়া বিষধর সাপের দংশনের ফলে ব্যথা, ফোলা, রক্তক্ষরণ, প্যারালাইসিস, শক, চোখ বুজে আসা, নাকি স্বরে কথা বলা, কথা বলতে অসুবিধা কিংবা মুখ দিয়ে লালা ঝরলে, কিডনি বৈকল্য ইত্যাদি ‘সিন্ড্রোম’ দেখে নিবিড় পর্যবেক্ষণে রেখে সাপের বিষের ওষুধ বা অ্যান্টিভেনম প্রয়োগ করা হয়ে থাকে যথেষ্ট সতর্কতার সঙ্গে।
অভিজ্ঞ ও কনফিডেন্ট চিকিৎসক রোগীর ‘সিন্ড্রোম’ অনুযায়ী প্রয়োজনীয় ডোজ (এক ডোজে ১০ ভায়াল, সকল বয়সের রোগীদের ক্ষেত্রে) প্রয়োগ করবেন যথেষ্ট পর্যবেক্ষণে রেখে। কিছু কিছু ক্ষেত্রে প্রথম ডোজের পর দ্বিতীয় বা তৃতীয় ডোজ ও লাগতে পারে। আবশ্যক প্রয়োজন ছাড়া অ্যান্টিভেনম ব্যবহার করা উচিত নয়, কারণ সব সর্প দংশনে অ্যান্টিভেনম প্রয়োগের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া অযৌক্তিক ও অযাচিত ব্যবহারের পর কিছু সিরামজনিত জটিলতা হতে পারে।
ডা. মুহম্মদ আশিকুর রহমান: আরএমও ও বিভাগীয় প্রধান, জরুরি বিভাগ, সদর হাসপাতাল, কক্সবাজার
মন্তব্য করুন