শুধু ভালো চিকিৎসা নয়, রোগ প্রতিরোধ চাই বলে জানিয়েছেন ঢাকা মেডিকেল কলেজের (ঢামেক) অধ্যক্ষ অধ্যাপক ডা. মো শফিকুল আলম চৌধুরী। তিনি বলেন, রোগ নিরাময়ের চেয়ে প্রতিরোধ করার মাধ্যমে প্রধানমন্ত্রীর নির্দেশনা অনুসারে স্বাস্থ্য খাতের সফলতা অর্জন করা সম্ভব হবে।
শনিবার (৯ মার্চ) বিকালে ঢামেকের মিলন অডিটোরিয়ামে ‘রমজানে ডায়বেটিস ও করণীয়’ শীর্ষক সেমিনারে এ তথ্য জানানো হয়। হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের সার্বিক সহযোগিতায় ডিএমসির অ্যান্ডোক্রাইন বিভাগ ও শিক্ষক সমিতির যৌথ উদ্যোগে চিকিৎসকদের জন্য নির্দেশনামূলক এ সেমিনারটি আয়োজন করা হয়।
অধ্যাপক ডা. মো শফিকুল আলম চৌধুরী বলেন, আমাদের জাঙ্ক ফুড পরিহার করে সুষম খাদ্যাভ্যাস গড়ে তুলতে হবে। আর রমজান মাস আমাদের জন্য অনেক আশীর্বাদস্বরূপ। কেননা রোজা রাখলে আমাদের প্রায় ৩০ শতাংশ ওজন কমে, ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে থাকে, উচ্চ রক্তচাপ দূরে থাকা অনেক রকমের উপকার রয়েছে। ঢামেকে অ্যান্ডোক্রাইন বিভাগের আলাদা করে কাউন্সিলিং রুম রয়েছে। যেখানে চিকিৎসক ও নার্সরা নিযুক্ত আছে এবং সরকারি অনেক সুবিধা রয়েছে।
ঢামেকের অ্যান্ডোক্রাইন বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ডা. ইন্দ্রজিৎ প্রসাদের সভাপতিত্বে সেমিনারে মূল বক্তব্য উপস্থাপন করেন অ্যান্ডোক্রাইন বিভাগের সহকারী রেজিস্ট্রার ডা. মোবারক হোসেন।
এ ছাড়া আরও উপস্থিত ছিলেন ঢামেক হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান, হেলথকেয়ার ফার্মাসিউটিক্যালসের ডেপুটি জেনারেল ম্যানেজার মইনুল হোসেন চৌধুরী, মেডিসিন বিভাগের ডিন ডা. শাহরিয়ার নবী, টিচার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি অধ্যাপক ডা. দেবেস চন্দ্র তালুকদার, অ্যান্ড্রোক্রাইনোলজি বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. এম সাইফুদ্দিন, সহযোগী অধ্যাপক ডা. মঈনুল ইসলাম, সহকারী অধ্যাপক ডা. মির্জা শরিফুজ্জামান প্রমুখ।
সেমিনারে ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মো. আসাদুজ্জামান বলেন, রমজান মাসকে কেন্দ্র করে আমাদের মসজিদকেন্দ্রিক ডায়াবেটিস সচেতনতামূলক আয়োজন রাখা উচিত। তাতে সচেতনতা কার্যক্রম আরও বেশি কার্যকর হবে। কেননা আমরা প্রচুর ভাত বা কার্বোহাইড্রেট খাই। দেখুন আমরা দুপুরের খাবার কিংবা রাতের খাবার খেয়েছি এরকম বলি না। আমরা বলি ভাত খেয়েছি। কার্বোহাইড্রেটের ওপর আমরা এতটাই অভ্যস্ত। ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য এই বিষয়টা নির্মূল করতে আমাদের পরিবারের সদস্যদের সহযোগিতা খুবই প্রয়োজন।
বক্তারা বলেন, রমজান মাস শুধু ধর্মীয় উপকারের মাস নয়। এ মাসে রোজা রাখার মাধ্যমে আমাদের শারীরিক, মানসিক ও সামাজিক উপকার রয়েছে। তবে ডায়াবেটিস রোগীদের জন্য রমজানের দুই থেকে তিন মাস আগে চিকিৎসকদের নিকট এসে ব্যবস্থাপনা গ্রহণ করা উচিত। এক্ষেত্রে রোগীর অবস্থার ওপরে চিকিৎসক নির্ধারণ করবেন, রোগী রোজা রাখতে পারবে কি না। এক্ষেত্রে গত রমজানের অভিজ্ঞতাসহ রোগীর জন্য দিকনির্দেশনা প্রদান করবে চিকিৎসক।
আবার রোজা রেখে নিয়মিত রক্তের সুগার পরীক্ষা করা অনেক জরুরি মন্তব্য করে বক্তারা বলেন, ২৪ ঘণ্টায় কমপক্ষে তিনবার ডায়াবেটিস মাপা উচিত। রোজা রেখেও রক্ত পরীক্ষা করা যাবে। এক্ষেত্রে আমাদের যে সব ভুল ধারণা আছে সংশোধন করা অতীব জরুরি। মিসরের বিজ্ঞ ইসলামী চিন্তাবিদরা ও বাংলাদেশের জাতীয় মসজিদের খতিবরা মিলে এই ফতোয়া প্রদান করেন, প্রয়োজনে রোজা রেখেও রক্ত পরীক্ষা করা যাবে। এতে করে রোজা ভাঙবে না। এমনকি রোজা রেখে সাবকিউটেনাস ইনজেকশন কিংবা ইনসুলিনের ইনজেকশন নিলেও রোজার কোনো ক্ষতি হবে না।
এ সময় বক্তারা অতিরিক্ত তৈল যুক্ত খাবার খেতে অনুৎসাহিত করেছেন এবং সেহরির খাবার সময় শেষ হওয়ার আগ মুহূর্তে খাওয়ার পরামর্শ দিয়েছেন। তাছাড়া সারা দেশের ডায়াবেটিস রোগীদের নিরাপদে রাখার দায়িত্ব চিকিৎসকদের বলে অভিহিত করেছেন অ্যান্ডোক্রিনোলজিস্টরা।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের বেশিরভাগ মানুষই জানে না, তাদের ডায়াবেটিস রয়েছে। তথ্যমতে, এদেশে প্রায় ২ কোটি বা প্রতি ১৪ জনে ১ জন মানুষ ডায়াবেটিসে আক্রান্ত। তাই এ সময় নিশ্চিত চিকিৎসার সুযোগ পাওয়ার লক্ষ্যেই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের অ্যান্ডোক্রাইন বিভাগ কাজ করে যাচ্ছে। তাছাড়া দেশের কেন্দ্রীয় এই হাসপাতালটির মেডিসিন ও শিশু বিভাগসহ সব বিভাগই বর্তমানে বিশেষ নজর দিয়ে ডায়বেটিস রোগের সেবা দিয়ে যাচ্ছে। কেননা এখন সব বয়সের ডায়বেটিস রোগী পাওয়া যাচ্ছে এবং রোগটি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়ে চলছে।
মন্তব্য করুন