ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড নারীদের জন্য একটি স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। বেশিরভাগ নারী পিরিয়ডের সময় সবচেয়ে বেশি ভয়ে থাকে ব্যথা নিয়ে। কারণ, এ ব্যথা এতটাই তীব্র হয়, বেশিরভাগ এতে কাবু হয়ে যান। অনেক সময় এ ব্যথা সারা শরীরেও ছড়িয়ে পড়ে।
পিরিয়ড চলাকালে নারীরা বিভিন্ন রকম সমস্যার সম্মুখীন হয়ে থাকেন। এসব সমস্যার মধ্যে রয়েছে খিটখিটে মেজাজ, মাথাব্যথা, পেটব্যথা, কোমরব্যথা, হাত-পা জ্বালাপোড়া করা ও বমি বমি ভাব। এসব সমস্যা সমাধানে প্রতিদিনের খাবারের তালিকায় রাখুন ভিটামিনসমৃদ্ধ খাবার। তাহলে এ ব্যথা থেকে অনেকটা মুক্তি মিলতে পারে।
হরমোনের প্রভাবে প্রতি মাসে মেয়েদের জরায়ু চক্রাকারে পরিবর্তনের সময় রক্ত ও জরায়ু নিঃসৃত অংশ যোনিপথ দিয়ে বের হয়ে আসে—তাকেই ঋতুস্রাব বা পিরিয়ড বলে। কারও কারও ক্ষেত্রে পিরিয়ড প্রতিমাসে হয় না। এক্ষেত্রে দুই মাস আবার কখনো চার মাস পরপর হয়ে থাকে, তখন সেটাকে অনিয়মিত পিরিয়ড বলে। অনিয়মিত পিরিয়ডের ফলে নারীরদের বিভিন্ন সমস্যা হতে পারে।
পিরিয়ডের ব্যথা একেক সময় একেক রকম হতে পারে। কোনো কোনো মাসে এ ব্যথা একদম কম থাকতে পারে আবার কোনো কোনো মাসে এ ব্যথা তীব্র হতে পারে। সাধারণত পিরিয়ডের ব্যথা পেট কামড়ানোর মতো হয়। যা কোমরে ও উরুতে ছড়িয়ে যেতে পারে। আবার কখনো এ ব্যথা প্রচণ্ডভাবে কামড়ে ধরা বা খিঁচ ধরার মতো আচরণ করে।
সাধারণ পিরিয়ড শুরু হওয়ার সময় এ ব্যথা শুরু হয়। তবে কারও কারও ক্ষেত্রে এ ব্যথা পিরিয়ড হওয়ার দুএকদিন আগেও শুরু হয়ে থাকে। পিরিয়ডের ব্যথা সাধারণত ৪৮-৭২ ঘণ্টা পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। মূলত, পিরিয়ডের যে সময়টা বেশি রক্তক্ষরণ হয় সে সময়েই ব্যথা বেশি হয়।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য অনেকেই ওষুধ সেবন করে থাকেন। তবে কিছু ঘরোয়া উপায়ের মাধ্যমেও এ ব্যথা কমানো যায়। চলুন এক নজরে সেসব উপায়গুলো দেখে নেয়া যাক—
পিয়িডের ব্যথায় গরম পানির সেঁক দারুণ কার্যকর। গবেষণায় দেখা গেছে, পিরিয়ডের ব্যথায় ওষুধের চেয়ে গরম পানির সেঁক বেশি কার্যকর। গরম পানির সেঁক দেয়ার জন্য আপনি হট ওয়াটার ব্যাগে গরম পানি নিয়ে পেটের ওপর রাখতে পারেন।
আদা পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে সাহায্য করে। তাই যারা নিয়মিত পিরিয়ডের ব্যথায় ভুগে থাকেন তারা চাইলে পিরিয়ড শুরু হওয়ার আগে আদা খেতে পারেন। চাইলে আদা কুচি কুচি করে খেতে পারেন। আবার চায়ের সঙ্গেও মিশিয়ে আদা খেতে পারেন। পিরিয়ডের প্রথম ৩-৪ দিন তিনবেলাই আদা খেতে পারেন।
পিরিয়ডের ব্যথা কমানোর জন্য শ্বাসের ব্যায়াম একটি দারুণ উপায়। এ ব্যায়াম করতে হলে আপনাকে বুকের ওপর একহাত ও পেটের ওপর আরেক হাত রেখে নাক দিয়ে বড় করে শ্বাস নিতে হবে। এমনভাবে শ্বাস নিবেন যেন বাতাস বুকের গভীরে ঢুকে এবং পেট ফুলে যায়। এরপর এমনভাবে শ্বাস ছাড়ুন যেন আপনি একটি মোমবাতি নেভাচ্ছেন।
ব্যায়াম আমাদের শরীরের জন্য অনেক উপকারী। তবে গবেষণায় দেখা গেছে, নিয়মিত ব্যায়াম করলে পিরিয়ডের ব্যথা অনেকটা কমে যেতে পারে। এজন্য আপনাকে সপ্তাহে তিন দিন বা তার বেশি ৪৫ থেকে ১ ঘণ্টা করে নিয়মিত শরীরচর্চা করতে হবে। অনেক সময় পিরিয়ডের ব্যথার কারণে ব্যায়াম করতে সমস্যা হতে পারে সেক্ষেত্রে সম্ভব হলে হাঁটাচলার মতো ব্যায়াম করতে পারেন।
পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে তলপেট ও তার আশপাশে আলতোভাবে ম্যাসাজ করতে পারেন। এতে উপকার পাবেন।
পিরিয়ডের ব্যথার সময় মানসিকভাবে চাপমুক্ত থাকার চেষ্টা করুন। এজন্য আপনি যোগব্যায়াম বা মেডিটেশন করতে পারেন। যা আপনার মানসিক চাপ দূর করতে সহায়তা করবে।
পিরিয়ডের ব্যথা কমাতে কুসুম গরম পানি দিয়ে গোসল করতে পারেন। এর ফলে আপনি আরামবোধ করবেন।
মন্তব্য করুন