দীর্ঘ সময় ধরে চেয়ারে বসে কাজ করলে মেরুদণ্ডের হাড়ে ব্যথা হয়। এটাকে আমরা ব্যাক পেইন বা পিঠের ব্যথা বলে থাকি। একটানা চেয়ারে বসে কাজ করলে মেরুদণ্ডের জোর ও পেশিগুলোর যে শক্তি প্রয়োজন হয়, তা অনেকটাই কমে যায়। ফলে অনেকেই পিঠের ব্যথায় ভোগেন।
গবেষণায় দেখে গেছে, ৯০ শতাংশ মানুষ কোনো না কোনো সময়ে পিঠ ও কোমরের ব্যথায় ভোগেন। স্বল্পমেয়াদি ব্যথা থাকে এক মাসের কম সময় এবং দীর্ঘমেয়াদি বা ক্রনিক ব্যথা থাকে এক মাসের অধিক সময়। সঠিক সময়ে চিকিৎসা নিলে ৯০ শতাংশ রোগীই দুই মাসের মধ্যে ভালো হয়ে যায়।
পিঠের ব্যথা তৈরি হয় সাধারণত পিঠের পেশি, লিগামেন্ট, মেরুদণ্ড, কশেরুকার সমস্যা থেকে। এ ব্যথার কারণগুলোর ভেতর সবচেয়ে বেশি থাকে পিঠের পেশিতে চাপ পড়া এবং পিঠের কাঠামোগত সমস্যা।
এ ধরনের ব্যথা দূর করতে নিয়মিত শরীরচর্চা খুব ভালো কাজ করে। এ ছাড়া ব্যথা কমানোর জন্য ব্যথানাশক ওষুধও খেতে পারেন। তবে সেটা অবশ্যই চিকিৎসকের পরামর্শে খেতে হবে।
একটানা চেয়ারে বসে কাজ করলে পিঠের পেশিতে চাপ পড়ার আশঙ্কা থাকে। সেখান থেকে পিঠের ব্যথার সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। এ ছাড়া পিঠের পেশিতে অতিরিক্ত চাপ, নিচু হয়ে কোনো ভারী বস্তু তোলা, ভুল ভঙ্গিতে শরীরের আকস্মিক নড়াচড়াতেও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
মেরুদণ্ডকে ঘিরে থাকা চাকতি আকারের হাড়গুলো হলো কশেরুকা। এ হাড়গুলো একে অপরের সঙ্গে সংযুক্ত থাকে। প্রতিটি কশেরুকার মাঝের স্থানগুলোতে ডিস্ক নামক টিস্যু থাকে এবং কশেরুকাগুলোকে চারপাশ থেকে ঘিরে রাখে। যদি কোনোভাবে এই ডিস্কে আঘাত লাগে, তাহলে পিঠে ব্যথা হতে পারে।
পিঠে ব্যথার আরেকটি কারণ হলো স্পাইনাল অস্টিওআর্থ্রাইটিস। এ রোগে আপনার পিঠের নিচের জয়েন্টগুলোর কার্টিলেজের অবনতি ঘটতে পারে। এতে করে মেরুদণ্ড চেপে আসতে পারে বা সংকীর্ণ হতে পারে, যার ফলে পিঠে ব্যথা সৃষ্টি হতে পারে।
অস্টিওপরোসিস হলো হাড়ের ঘনত্ব হ্রাস পাওয়া এবং হাড় পাতলা হয়ে যাওয়া। এর ফলে কশেরুকার ছোট ছোট ফাটল হতে পারে। আর এ থেকেই পিঠে ব্যথা হতে পারে।
- ডিজেনারেটিভ স্পন্ডিলোলিস্থেসিস রোগ হলে কশেরুকা তার স্থান থেকে সরে গিয়ে কাছাকাছি একটি কশেরুকার দিকে চলে যায়। এর ফলে পিঠে ব্যথা হতে পারে। - কাউডা ইকুইনা সিনড্রোমের ফলে মেরুদণ্ডের নিচের অংশে স্নায়ুর কার্যকারিতা হ্রাস পায়। এতে পিঠে ব্যথা সৃষ্টি হয়। - মেরুদণ্ডের ছত্রাক বা ব্যাকটেরিয়া সংক্রমণের কারণেও পিঠে ব্যথা হতে পারে। - মেরুদণ্ডে ক্যান্সার বা টিউমারের জন্য পিঠে ব্যথা হতে পারে। - কিডনি সংক্রমণ বা কিডনিতে পাথর হওয়ার ফলেও পিঠে ব্যথা হতে পারে।
পিঠে ব্যথার সমস্যা দেখা দিলে আপনাকে অবশ্যই আগে শারীরিকভাবে সুস্থ হতে হবে। এ জন্য আপনার খাদ্যাভ্যাসে কিছু পরিবর্তন নিয়ে আসতে হবে। যেসব খাবার পিঠের ব্যথা উপশম করে, সেগুলো বেশি বেশি খেতে হবে। আর যেসব খাবার খেলে ব্যথা বাড়তে পারে, সেগুলো ত্যাগ করতে হবে।
পিঠে ব্যথায় সামুদ্রিক মাছ খেলে উপকার পাওয়া যায়। এ ছাড়া শস্যজাত খাবার, যেমন : বাদাম, সবুজ চা, আদা, চেরি ফল প্রভৃতি পিঠের ব্যথা কমাতে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। তাই খাদ্য তালিকায় এসব খাবার রাখলে উপকার পাবেন।
পাশাপাশি প্রক্রিয়াজাত (প্রসেসড) খাবার, ভাজাপোড়া, প্রাণিজ ও উদ্ভিদের চর্বি থেকে তৈরি মাখন, অতিরিক্ত মাত্রায় সম্পৃক্ত চর্বি ও ট্রান্সফ্যাটের খাবার খাওয়া থেকে বিরত থাকুন। কেননা এসব খাবার পিঠের ব্যথা অনেক বাড়িয়ে দেয়। সেই সঙ্গে এগুলো ওজন বাড়ায় এবং হার্টেরও ক্ষতি করে।
ভিটামিন ডি-এর অভাবে অনেক সময় পিঠে ব্যথা হতে পারে। এক গবেষণায় দেখা গেছে, ১৫-৫২ বছর বয়সীদের মধ্যে যারা দীর্ঘস্থায়ী পিঠের ব্যথায় ভুগছেন, তাদের ৮০ শতাংশের এই ভিটামিনের অভাব রয়েছে। তাই শরীরে একটু রোদ লাগাতে হবে। কারণ, ভিটামিন ডি হলো ‘সৌর’ ভিটামিন।
দীর্ঘ সময় প্যান্টের পেছনের পকেটে ম্যানিব্যাগ রেখে চেয়ারে বসে থাকলে পিঠের ব্যথা হতে পারে। কারণ, এটা মেরুদণ্ডে খোঁচা দেয় এবং নিতম্বের গুরুত্বপূর্ণ স্নায়ুতে চাপ দেয়। ফলে ওই স্নায়ুর প্রদাহ হতে পারে। ছেলেদের ক্ষেত্রে এ সমস্যা বেশি হয়। এ ধরনের ব্যথা মানিব্যাগ নিউরোপ্যাথি নামে পরিচিত।
পিঠের ব্যথা থেকে পরিত্রাণ পেতে গরম সেঁক বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে। তাই পিঠের যেখানে ব্যথা অনুভব করবেন, সেখানে গরম সেঁক দিতে পারেন। কিছুটা হলেও ব্যথা কমে যাবে। এ জন্য হট ওয়াটার ব্যাগ ব্যবহার করতে পারেন। এটি পিঠে বেঁধে রাখতে পারেন।
মন্তব্য করুন