আমাদের শরীরের গুরুত্বপূর্ণ একটি অঙ্গ হলো কিডনি, যা রক্ত থেকে বর্জ্য পদার্থ বের করে শরীরকে সুস্থ রাখতে সহায়তা করে। কিন্তু অনিয়ন্ত্রিত খাদ্যাভ্যাস ও জীবনযাপনের কারণে অনেকেই কিডনির সমস্যায় ভুগে থাকেন। তবে ঘরোয়া কিছু উপায় আছে, যেগুলো মেনে চললে কিডনি ভালো থাকবে এবং বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিও কমে যাবে।
রক্তের মধ্যে থাকা বর্জ্য পদার্থ পরিশ্রুত করে বের করে দেওয়াই হলো কিডনির মূল কাজ। যখন কিডনি নষ্ট হয়ে যায়, তখন এ কাজ অনেকটা ব্যাহত হয়। চিকিৎসকের মতে, খাবার ও পানীয়র মাধ্যমে আমাদের শরীরে দূষিত পদার্থ প্রবেশ করে। তাই খাবার খাওয়ার সময় আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।
কিডনির সমস্যা দেখা দিলে কয়েকটি প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দেয়—তা হলো পেট ও পা ফুলে যাওয়া। আমাদের শরীরের যে টিস্যুগুলো থাকে, তাতে অতিরিক্ত পানি ও লবণ জমলে শরীর ফুলে যায়। আর কিডনি ভালো থাকলে শরীরে অক্সিজেন ও পুষ্টির মাত্রা ঠিক থাকে। তাই কিডনিকে ভালো ও যত্নে রাখা দরকার। এ ছাড়া আরও কয়েকটি প্রাথমিক লক্ষণ আছে। সেগুলো হলো বমি বমি ভাব, খাদ্যে অরুচি বা ক্ষুধামান্দ্য, ত্বক শুষ্ক, চুলকানি, মাথা ধরা, ক্লান্তি, ওজন হ্রাস পাওয়া, ঘনঘন প্রস্রাবের বেগ পাওয়া।
অনেক কারণে কিডনিতে রোগ হতে পারে। এর মধ্যে রয়েছে টাইপ-১ বা টাইপ-২ ডায়াবেটিস, উচ্চ রক্তচাপ, পলিসিস্টিক কিডনি রোগ, বংশগত কিডনি রোগ, বয়সজনিত কিডনির সমস্যা, প্রোস্টেট গ্রন্থি বড় হয়ে যাওয়া, কিডনিতে পাথর হওয়া, গ্লোমেরুলোনফ্রাইটিস, ইন্টারস্টিসিয়াল নেফ্রাইটিস, ক্যান্সার, মূত্রথলির প্রদাহ, পাইলোনেফ্রাইটিস, মূত্রথলিতে পাথর।
কয়েকটি ঘরোয়া পদ্ধতি মেনে চললে কিডনিকে ভালো রাখা সম্ভব। চলুন, একনজরে দেখে নেওয়া যাক সেসব পদ্ধতি—
কিডনি ভালো রাখার সহজ উপায় হলো প্রচুর পরিমাণে পানি পান করা। পানি খেলে অনেক রোগ থেকে মুক্তি পাওয়া যায়। পানি আমাদের শরীর থেকে টক্সিন বের করে দেয়, যা কিডনির জন্য অনেক উপকারী।
অস্বাস্থ্যকর খাবার কিডনি নষ্ট হওয়ার অন্যতম কারণ। তাই কিডনিকে ভালো রাখতে স্বাস্থ্যকর খাবার খাওয়ার বিকল্প নেই। প্রতিদিন তেল, মসলাযুক্ত খাবার খাওয়া কিডনির জন্য ক্ষতিকর। অতিরিক্ত লবণ, চিনি, চর্বিযুক্ত খাবার কিডনি রোগের ঝুঁকি অনেকাংশে বাড়িয়ে দেয়। তাই পটাশিয়ামযুক্ত খাবার, যেমন : কলা, কমলালেবু, পালংশাক খেতে পারেন; যা কিডনিকে ভালো রাখতে সহায়তা করে।
নিয়মিত শরীর চর্চা আমাদের স্বাস্থ্যের জন্য বেশ উপকার এবং কিডনি সুস্থ রাখতেও সহায়তা করে। একই সঙ্গে নিয়মিত শরীর চর্চা রক্তচাপ অনেকটা কমিয়ে দেয়। তাই চিকিৎসকরা প্রতিদিন ২০-৩০ মিনিট ব্যায়াম করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন।
ধূমপান মৃত্যুর কারণ জানার পরও আমরা অনেকেই ধূমপান করি। অতিরিক্ত ধূমপান ফুসফুসের জন্য যেমন ক্ষতিকর, তেমনি আমাদের কিডনিকেও খারাপ করে দেয়। তাই আপনি যদি অতিরিক্ত ধূমপান করেন, তাহলে আজ থেকেই সেটি ত্যাগ করুন। তাহলে আপনার কিডনি সুস্থ থাকবে, সঙ্গে আপনিও।
ব্যথা কমানোর জন্য আমরা অনেকেই আইবুপ্রোফেন ও অ্যাসপিরিনের মতো ব্যথানাশক ওষুধ খেয়ে থাকি। এসব ওষুধ বেশি দিন খেলে আমাদের কিডনির ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা থাকে। তাই এসব ওষুধ কম খাওয়ার চেষ্টা করতে হবে।
কিডনির জন্য উচ্চ রক্তচাপ ও উচ্চ শর্করার পরিমাণ মারাত্মক ক্ষতিকর। এ জন্য নিয়মিত ডায়াবেটিস পরীক্ষা করান এবং রক্তে শর্করার মাত্রা ঠিক রাখতে চিকিৎসকের পরামর্শে ওষুধ খেতে পারেন।
সূত্র : হিন্দুস্তান টাইমস
মন্তব্য করুন