বর্তমান সময়ের রোগের মধ্যে ডেঙ্গুজ্বর হলো অন্যতম। বর্ষার সময় এলেই দেশে ডেঙ্গুর প্রকোপ বেড়ে যায়। অনেকেই সাধারণ ও ডেঙ্গুজ্বরের মধ্যে পার্থক্য বুঝতে পারেন না। এতে দেখা যায়, সাধারণ জ্বর ভেবে অবহেলা করে ধীরে ধীরে মৃত্যুর কোলে ঢলে পড়েন।
এডিস গোত্রের স্ত্রী মশাবাহিত এক ধরনের ভাইরাসের নাম হলো ডেঙ্গু, যা ডেঙ্গি নামে পরিচিত। ভাইরাসটিতে সংক্রমিত মশার কামড়ে ডেঙ্গুর জীবাণু মানুষের মধ্যে সংক্রমিত হয়। ডেঙ্গু আক্রান্ত কোনো মানুষ থেকে আরেক মানুষে এ রোগ ছড়ায় না।
মূলত সংক্রমিত মানুষকে যে মশা কামড়ায়, ওই মশা আবার অন্য কাউকে কামড়ালে তখন সেই মানুষটি ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়। সংক্রমিত মশার সংস্পর্শে আসা সব বয়সের মানুষই ডেঙ্গুজ্বরে আক্রান্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকে। ডেঙ্গি ভাইরাসে সংক্রমণের ফলে ডেঙ্গুজ্বর হয়।
সাধারণত শরীরে জ্বর এলে সেটি ডেঙ্গু কিনা, তা যাচাইয়ের জন্য কিছু লক্ষণের দিকে মনোযোগ দিতে হবে। এডিস মশা কামড়ের ৩ থেকে ১৪ দিনের মধ্যে ডেঙ্গুজ্বরের লক্ষণ প্রকাশ পায়। এসব লক্ষণের মধ্যে রয়েছে উচ্চমাত্রার জ্বর, মাথাব্যথা, বমি, পেশি-জয়েন্টের ব্যথা ও ত্বকের ফুসকুড়ি।
ডেঙ্গুর লক্ষণগুলো বেশি দিন স্থায়ী হয় না। তাই বেশিরভাগ মানুষ কিছুদিনের মধ্যে সুস্থ হয়ে ওঠেন। তবে অনেকের ক্ষেত্রে ডেঙ্গু প্রকোপ আকার ধারণ করেন। এর ফলে বেশ জটিলতার সৃষ্টি হয়। যেমন : প্লাজমা লিক, তরল জমা, শ্বাসকষ্ট, মারাত্মক রক্তপাত বা অঙ্গ দুর্বলতার কারণে রক্তচাপ বিপজ্জনক মাত্রায় নেমে যেতে পারে।
অনেক সময় ডেঙ্গু শক সিনড্রোমে পরিণত হতে পারে। এতে মৃত্যুর আশঙ্কা অনেকটাই বেড়ে যায়। এ ক্ষেত্রে সতর্কতামূলক কিছু লক্ষণ দেখা যায়। যেমন : তীব্র পেটে ব্যথা, ক্রমাগত বমি, শ্বাসকষ্ট ও অস্থিরতা। এসব লক্ষণ দেখামাত্রই রোগীকে দ্রুত হাসপাতালে নিয়ে যেতে হবে।
সাধারণ ডেঙ্গুজ্বর মারাত্মক হওয়ার আশঙ্কা থাকে ১ শতাংশ আর ডেঙ্গু হেমোরেজিক জ্বরে আশঙ্কা থাকে ২ দশমিক ৫ শতাংশ। তবে অনেক সময় হেমোরেজিক জ্বরের চিকিৎসা না করালে মৃত্যুহার ২০-৫০ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
ডেঙ্গুজ্বরকে তিন ভাগে ভাগ করা হয়। প্রথমটি হলো ফেব্রাইল, অর্থাৎ জ্বরের ফেইস, যা ২ থেকে ৭ দিন স্থায়ী হয়। এ ক্ষেত্রে তাপমাত্রা হঠাৎ বেড়ে যায়। ২ থেকে ৫ দিনের মধ্যে শরীরের বেশিরভাগ অংশে লাল ফুসকুড়ি দেখা দিতে পারে।
দ্বিতীয়টি হলো ক্রিটিক্যাল ফেইস, যা ৪৮ থেকে ৭২ ঘণ্টা স্থায়ী থাকে। এ সময়টাতে জ্বর খুব একটা থাকে না, কিন্তু রোগী ক্লান্ত হয়ে যায়। রক্তকণিকার মধ্যে শ্বেতকণিকা ও অনুচক্রিকা কমে যায়। হেমাটোক্রিট (রক্তের হিমোগ্লোবিনের ঘনত্ব) বেড়ে যায়। তৃতীয় ও শেষটি হলো কনভালোসেন্ট বা রোগ থেকে উন্নতি হওয়ার পর্যায়।
বর্তমানে ডেঙ্গুজ্বরের ধরন অনেকটা ভিন্ন। কেউ এ জ্বরে আক্রান্ত হলে সঙ্গে সঙ্গে অনেকটা দুর্বল হয়ে যাচ্ছে। আর তাই জ্বর আসার ২৪ ঘণ্টার মধ্যেই ডাক্তারের পরামর্শ নেওয়া উচিত। সাধারণ ডেঙ্গুজ্বরে বাড়িতেই বিশ্রামের পরামর্শ দেন চিকিৎসকরা। সেই সঙ্গে জ্বর কমানোর জন্য বয়স ও ওজন অনুযায়ী প্যারাসিটামল দেওয়া হয়। আর শিশুদের ক্ষেত্রে প্রচুর পরিমাণে তরল খাবার খাওয়ানোর কথা বলা হয়।
ডেঙ্গু রোগ প্রতিরোধে বাড়ির চারপাশ পরিষ্কার রাখতে হবে। সেই সঙ্গে ফুলের টব, টিন, বোতল, নারকেলের খোলস ইত্যাদিতে যেন পানি না জমতে পারে, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। ফ্রিজ
মন্তব্য করুন