কালবেলা ডেস্ক
প্রকাশ : ২০ নভেম্বর ২০২৩, ০৯:৫২ এএম
অনলাইন সংস্করণ

পাইলস : লজ্জা-সংকোচে বিলম্বিত চিকিৎসায় ঝুঁকি

পাইলস ।  ছবি : সংগৃহীত
পাইলস । ছবি : সংগৃহীত

পায়ুপথের যে কোনো রোগকেই অধিকাংশ মানুষ পাইলস বলে জানে। কিন্তু পায়ুপথের রোগ মানেই পাইলস নয়। পায়ুপথে নানা ধরনের সমস্যা হতে পারে। বেশির ভাগ রোগী, বিশেষত নারীরা, এসব সমস্যার কথা গোপন করে রাখেন এবং চিকিৎসা গ্রহণ করতে দেরি করে ফেলেন। আবার অনেকেই লজ্জা বা সংকোচের কারণে চিকিৎসকের কাছে না গিয়ে টোটকা ওষুধ, কবিরাজি, হোমিওপ্যাথি গ্রহণ করেন। আর ক্রমেই অবস্থা জটিল হয়ে পড়ে। কিন্তু সময়মতো চিকিৎসা নিলে অধিকাংশ মানুষ সার্জারি বা অস্ত্রোপচার ছাড়াই ভালো হয়।

পায়ুপথে সাধারণত ফিসার, ফিস্টুলা, হেমোরয়েড, ফোড়া, প্রোলাপস, রক্ত জমাট, পলিপ বা টিউমার ইত্যাদি রোগ হতে পারে। সব সমস্যার অন্যতম কারণ হলো কোষ্ঠকাঠিন্য। তাই এ বিষয়ে আগে থেকে সচেতন ও সতর্ক থাকতেই হবে। চিকিৎসা না নিলে এ থেকে কখনো কখনো ক্যান্সার বা বড় সমস্যাও দেখা দিতে পারে। তাই যথাসময়ে এর চিকিৎসা ও সতর্কতা জরুরি।

পাইলস সম্পর্কে খুঁটিনাটি তথ্য :

পাইলস, যাকে অর্শ্বরোগও বলা হয়। বৃহদান্ত্রের শেষাংশে রেকটামের ভেতরে ও বাইরে থাকা কুশনের মতো একটি রক্তশিরার জালিকা থাকে, যা প্রয়োজন সাপেক্ষে সংকুচিত ও প্রসারিত হয় যা আমরা পাইলস নামে জেনে থাকি। যখন পায়ুপথে এসব শিরার সংক্রমণ বা প্রদাহ হয় এবং চাপ পড়ে তখন পাইলস বা হেমোরয়েডসে প্রদাহ হয়। যাকে সাধারণ ভাষায় অর্শরোগ বলা হয়।

এটি মলদ্বারের এক ধরনের জটিল রোগ। পাইলস এর ফলে রক্তনালিগুলো বড় হয়ে গিয়ে ভাসকুলার কুশন তৈরি হয়। শিশু থেকে বৃদ্ধ যে কোনো বয়সের মানুষ এ জটিল রোগে আক্রান্ত হতে পারে। পাইলস হলে সাধারণত চুলকানি বা রক্তক্ষরণ হয়। মলদ্বারের নিচের অংশে গোল আকারে ফুলে ওঠে, ফলে যে কোনো সময় সেই জায়গা থেকে রক্তপাত হতে থাকে। এটি খুবই অস্বস্তিকর এবং যন্ত্রণাদায়ক।

দীর্ঘকালীন কোষ্ঠকাঠিন্যের রোগীদের পাইলসের সমস্যা দেখা দেওয়া অস্বাভাবিক কিছু নয়। এ ছাড়া যাদের মলত্যাগের অকারণে বেগ প্রদানের বদভ্যাস রয়েছে, তারাও এই রোগ বাধিয়ে ফেলতে পারেন। আসুন তাহলে বিস্তারিত জেনে নেই পাইলস সম্পর্কে বিস্তারিত।

পাইলস সাধারণত দুই ধরনের :

১। অভ্যন্তরীণ পাইলস ২। বাহ্যিক পাইলস

অভ্যন্তরীণ পাইলস এবং বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারে তাদের অবস্থানের ওপর ভিত্তি করে। এগুলো সাধারণ এবং মলদ্বারের ভেতরে মলদ্বারের খোলার উপরে ২ থেকে ৪ সেন্টিমিটার (সেমি)-এর মধ্যে ঘটে।

অভ্যন্তরীণ পাইলস :

অভ্যন্তরীণ অর্শ্বরোগ চারটি শ্রেণি বা পর্যায়ের হয় যা প্রোল্যাপের ওপর ভিত্তি করে।

পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে না বা প্রলেপস হয় না। মলমূত্র ত্যাগের পর পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে এবং তারপর আপনা-আপনি ঠিক হয়ে যায়। পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে এবং নিজে নিজে ঠিক করতে হয়। পাইলস ফুলে বাইরের দিকে বের হয়ে আসে বা প্রলেপস হয় এবং তা আর নিজে ঠিক হয় না বা করা যায় না।

বাহ্যিক পাইলস :

বাহ্যিক পাইলস মলদ্বারের বাইরের প্রান্তে ছোট ছোট গলদ গঠন করে। এগুলো প্রায়ই চুলকানিদায়ক এবং বেদনাদায়ক হয়ে থাকে।

পাইলসের কারণ :

পাইলসের প্রধান কারণগুলো হচ্ছে দীর্ঘদিন কোষ্ঠকাঠিন্যে ভোগা, পুরোনো ডায়রিয়া, মলত্যাগে দীর্ঘক্ষণ টয়লেটে বসে থাকা ও দীর্ঘক্ষণ দাঁড়িয়ে থাকা। এ ছাড়া পারিবারিক ইতিহাস, আঁশযুক্ত খাবার কম খাওয়া, ভারি মালপত্র বহন করা, স্থুলতা, কায়িক শ্রম কম করা।

গর্ভকালে, পায়ুপথে যৌনক্রিয়া, যকৃত রোগ বা লিভার সিরোসিস ইত্যাদি কারণেও এ রোগের আশংকা বেড়ে যায়। সর্বোপরি পোর্টাল ভেনাস সিস্টেমে কোনো ভাল্ব না থাকায় উপরিউক্ত যে কোনো কারণে পায়ু অঞ্চলে শিরাগুলোতে চাপের ফলে পাইলস সৃষ্টি হয়।

পাইলসের লক্ষণ :

পাইলস রোগে যেসব লক্ষণ দেখা যায় তা হচ্ছে, পায়ুপথের অন্ত্র বা ভেতরের পাইলস রোগে সাধারণত তেমন কোনো ব্যথা বেদনা, অস্বস্তি থাকে না। অন্যদিকে পায়ুপথের বহিঃঅর্শরোগে পায়ুপথ চুলকায়, বসলে ব্যথা করে, পায়খানার সঙ্গে টকটকে লাল রক্ত দেখা যায় বা শৌচ করার টিস্যুতে তাজা রক্ত লেগে থাকে, মলত্যাগে ব্যথা লাগা, পায়ুর চারপাশে এক বা একের অধিক থোকা থোকা ফোলা থাকে।

পাইলসের সাধারণ লক্ষণগুলো :

পায়ু অঞ্চলে ব্যথা এবং চুলকানি। মল বা মলত্যাগের পর রক্ত। মলদ্বারের চারপাশে একটি শক্ত গলদা।

অভ্যন্তরীণ অর্শ্বরোগের লক্ষণ :

মল অতিক্রম করার সময় অতিরিক্ত চাপ বা জ্বালা হতে পারে। মলত্যাগের সময় ব্যথাহীন রক্তপাত। যদি পাইলস প্রল্যাপস, ব্যথা এবং জ্বালা হয়।

বহিরাগত অর্শ্বরোগের লক্ষণ :

মলদ্বারের চারপাশে চুলকানি। মলদ্বারের কাছে বেদনাদায়ক মাংসল গলদ। বসার সময় ব্যথা বা অস্বস্তি। মলদ্বারে রক্তক্ষরণ।

পাইলসের চিকিৎসা :

পায়ুদ্বারসংক্রান্ত যে কোনো সমস্যা হলে প্রথমেই চিকিৎসকের শরণাপন্ন হওয়া উচিত। এ ধরনের অসুখের ক্ষেত্রে অনেকেই চেপে যান প্রথমে, যা অসুখের মাত্রা আরও বাড়িয়ে দেয়। চিকিৎসকরা রোগ নির্ণয় করে প্রক্টোস্কোপির মাধ্যমে প্রাথমিকভাবে চিকিৎসা শুরু করতে পারেন।

প্রথম পর্যায়ে মলম, ইনজেকশন বা রাবার ব্যান্ড লাইগেশনের সাহায্যেই রোগ নিরাময় করা সম্ভব। অসুখের মাত্রা বাড়াবাড়ি পর্যায়ে চলে গেলে অবশ্য শল্যচিকিৎসা ছাড়া উপায় নেই। তবে সব কয়টি ক্ষেত্রেই রোগটি ফিরে আসার শঙ্কা থাকে, যদি না সাবধানে থাকা যায়।

এজন্য বদলে ফেলুন লাইফস্টাইল। পাইলস বা পায়ুদ্বারসংক্রান্ত যে কোনো অসুখের জন্য পরোক্ষভাবে দায়ী অনিয়মিত লাইফস্টাইল। এজন্য খাওয়ার অভ্যাস বাড়াতে হবে। এড়িয়ে চলতে হবে ক্যাফেইন জাতীয় পানীয়, তেল-ঝাল মশলাযুক্ত রান্না। পাইলসের রোগীদের পক্ষে শুকনো লঙ্কা বিষতুল্য। ভারী জিনিস তোলাও কিন্তু বারণ।

পাইলস থেকে ক্যান্সার হওয়ার পূর্বেই এর চিকিৎসা করা জরুরি। রিং লাইগেশন এবং লংগো অপারেশনের দ্বারা শতকরাই প্রায় ১০০ শতাংশ রোগী সুস্থ হয়ে উঠছেন। প্রচলিত এই অপারেশনে মলদ্বারের তিনটি অংশ কাটার প্রয়োজন হয়।

এই অপারেশন শুধু তাদের জন্যই করা হয় যাদের রিং লাইগেশনের জন্য উপযুক্ত হিসেবে বিবেচনা করা হয় এবং যারা লংগো অপারেশন করানোর জন্য মেশিন কিনতে অক্ষম।

চলিত অপারেশনের মতই আরেকটি অপারেশন হলো লেজার অপারেশন। পার্থক্য শুধু এটাই, লেজার অপারেশনে বিম ব্যবহার করা হয় এবং প্রচলিত অপারেশনে সার্জিক্যাল নাইফ ব্যবহার করে কাটাকাটির কাজ করা হয়।

চলিত অপারেশনের মতো লেজার অপারেশনে ক্ষত স্থান হবে তিনটি । লেজার অপারেশন ও সাধারণত অপারেশন এর মধ্যে তেমন কিছু তফাৎ নেই কারণ দুটি অপারেশনেই সমান ব্যথা অনুভব করতে হয়। ক্ষত স্থানটি শুকাতে ১-২ মাস সময় লাগে।

পাইলস চিকিৎসা শাস্ত্রে বহু ধরনের পদ্ধতি রয়েছে। যেমন : ক্রায়োথেরাপি, ইঞ্জেকশন, আল্ট্রয়েড, লেজার থেরাপি, রিং লাইগেশন ইত্যাদি।

তবে আপনি যদি ঘরোয়াভাবে এর সমাধান বের করতে পারেন সে ক্ষেত্রে নিচের নির্দেশনাগুলো আপনার জন্য।

পাইলসের ঘরোয়া চিকিৎসায় নিয়মিত সবুজ শাকসবজি খেতে হবে। দৈনিক পর্যাপ্ত পানি পান করতে হবে।

মল শক্ত হয় এমন খাবার থেকে দূরে থাকতে হবে। অতিরিক্ত গরুর মাংস খাওয়া যাবে না। পরিমাণ মতো আঁশযুক্ত খাবার নিয়মিত খেতে হবে। পাইলসের হাত থেকে রক্ষা পেতে চাইলে পাইলসের লক্ষণ ধরা দেয়ার পূর্বে থেকেই এ সব খাবার খেতে হবে। প্রয়োজনে চিকিৎসকের কাছে গিয়ে পাইলসের ওষুধ গ্রহণ করতে হবে।

কালবেলা অনলাইন এর সর্বশেষ খবর পেতে Google News ফিডটি অনুসরণ করুন

মন্তব্য করুন

  • সর্বশেষ
  • জনপ্রিয়

এনসিটিবি থেকে ফ্যাসিস্ট দোসরদের অপসারণের দাবি ছাত্রদলের

অপকর্ম ঢাকতে সেই ইউএনও রাসেলের পক্ষে মানববন্ধন

নিরাপদ সড়ক আন্দোলনে যড়যন্ত্র / আমীর খসরুসহ ৫ জনকে খালাস

রোম ছেড়েছেন প্রধান উপদেষ্টা

বগুড়ায় একসঙ্গে চার সন্তানের জন্ম দিলেন জুঁই

বড়বোনকে না পেয়ে ৭ বছরের শিশুকে ধর্ষণচেষ্টা

আখাউড়ায় ট্রেনের টিকিট কালোবাজারি সিন্ডিকেট যেন ‘ওপেন সিক্রেট’

অটোরিকশার পেছনে বাসের ধাক্কা, নিহত ১

জামালপুরে ১১ পরীক্ষার্থী ও ২ শিক্ষক বহিস্কার

বর্ণিল আয়োজনে যুক্তরাষ্ট্রের ফোর্ট কলিন্সে বর্ষবরণ উদ্‌যাপন করলেন বাংলাদেশিরা

১০

তিন মন্ত্রণালয়কে উপদেষ্টার জরুরি নির্দেশনা

১১

মাগুরায় আলোচিত শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় সাক্ষ্যগ্রহণ শুরু

১২

পরকীয়া সম্পর্কের জেরে স্ত্রীকে হত্যা, স্বামী পলাতক

১৩

ঘুণপোকা ধরা রাজনীতির চেয়ার সংস্কার প্রয়োজন : ব্যারিস্টার ফুয়াদ

১৪

বাংলাদেশের সঙ্গে শক্তিশালী সম্পর্ক চায় পাকিস্তান: আসিফ

১৫

তীব্র গরম থেকে কবে মিলবে মুক্তি, জানাল আবহাওয়া অফিস

১৬

কানাডায় উৎসব চলাকালীন গাড়িচাপায় বহু হতাহত

১৭

স্কুল ভবনের ছাদে বোমাসদৃশ বস্তু, কারণ খুঁজছে পুলিশ

১৮

বিকেলে জরুরি সভায় বসছে বিসিবি

১৯

ট্রাক-অটোরিকশার সংঘর্ষে নিহত ২

২০
X