ব্রেন স্ট্রোক, এক নীরব ঘাতক, কেড়ে নেয় কথা বলার ক্ষমতা, স্তব্ধ করে দেয় শরীরের অঙ্গপ্রত্যঙ্গ, অন্ধকারে ঢেকে দেয় উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ। এতদিন পর্যন্ত, এই ভয়াবহ আঘাতের পর জীবনের পথে ফিরে আসার লড়াই ছিল দীর্ঘ, কঠিন আর প্রায় ক্ষেত্রেই অসম্ভব। কিন্তু এবার বিজ্ঞান এক নতুন দিগন্ত উন্মোচন করেছে। দীর্ঘ গবেষণা, অক্লান্ত পরিশ্রম আর অদম্য ইচ্ছাশক্তির ফলস্বরূপ আবিষ্কৃত হয়েছে এক যুগান্তকারী ওষুধ- যা মস্তিষ্কের মৃতপ্রায় কোষগুলোকে ফিরিয়ে দিতে পারে নতুন জীবন।
ব্রেন স্ট্রোকের ধাক্কা থেকে সেরে ওঠার অন্যতম একটি উপায় হলো শারীরিক থেরাপি। তবে সবসময় অধিকাংশের ক্ষেত্রেই তা সম্ভব হয়ে ওঠে না। অনেকেই প্রাথমিক পর্যায়ে শুরু করলেও দীর্ঘদিন থেরাপি চালিয়ে যেতে পারেন না।
যুক্তরাষ্ট্র ভিত্তিক আন্তর্জাতিক সংস্থা ইউসিএলএ হেলথ গবেষণা চালিয়ে চমৎকার এক ওষুধের সন্ধান পেয়েছে যা একদম শারীরিক থেরাপির মতোই কাজ করতে পারে। তারা একটি ইঁদুরের ওপর গবেষণা চালিয়ে এমন যুগান্তকারী ফলাফল পেয়েছেন।
গবেষণার ফলাফলটি প্রকাশ করা হয়েছে ন্যাচার কমিউনিকেশন জার্নালে। বিজ্ঞানীরা ইঁদুরের ওপর দুটি ওষুধের পরীক্ষা চালিয়েছেন। এর মধ্যে একটি ওষুধ স্ট্রোক করা ইঁদুরের নড়াচড়ার নিয়ন্ত্রণ অনেকটাই উন্নত করেছে। গবেষণার নেতৃত্বে ছিলেন ডা. এস. থমাস কারমাইকেল। তিনি বলেছেন, স্ট্রোকের রোগীদের জন্য এমন ওষুধ দরকার যেটি পুনর্বাসনের মতো একই কাজ করবে। পুনর্বাসনের মাধ্যমে সেরে উঠতে যে পরিমাণ শ্রম প্রয়োজন বেশিরভাগ রোগী সেটি ধরে রাখতে পারে না।
তিনি বলেন, অন্যান্য রোগের ক্ষেত্রে পর্যাপ্ত ওষুধ থাকলেও স্ট্রোকের চিকিৎসায় ওষুধ নেই। স্ট্রোকের পর শারীরিক থেরাপির কীভাবে ব্রেনকে সেরে উঠতে সহায়তা করে সেটি পর্যবেক্ষণ করে তারা এমন একটি ওষুধ তৈরির চেষ্টা করেছেন যেটি থেরাপির মতো কাজ করবে।
বিজ্ঞানীরা খুঁজে পেয়েছেন স্ট্রোক ব্রেনের কিছু কোষকে অন্য কোষগুলো থেকে আলাদা করে ফেলে। যা মানুষের বা অন্যান্য প্রাণীর চলাচলের ওপর প্রভাব ফেলে। তারা আরও দেখেছেন পারভেলবুমিন নিউরন নামের একটি কোষে স্ট্রোক হলে কিছু কোষ বিচ্ছিন্ন হয়ে যায়। এই নিউরনগুলো একটি ব্রেন ছন্দ তৈরি করতে সহায়তা করে। যা চলাচলের অন্যান্য নিউরনকে সংযুক্ত করে। স্ট্রোক করলে ছন্দপতন ঘটে। তবে সফল পুনর্বাসনের মাধ্যমে মানুষ ও ইঁদুরের মধ্যে এ ছন্দগুলো পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হয়।
গবেষক দলটি তাদের তৈরি করা ডিডিএল-৯২০ নামে একটি ওষুধ দিয়ে কীভাবে পুনর্বাসন ব্রেনের ওপর প্রভাব ফেলে তা খুঁজে পেয়েছেন। তারা দেখতে পেয়েছেন এই ওষুধ সম্ভবত শারীরিক থেরাপির মতোই কার্যকর ভূমিকা পালন করতে পারবে। যদিও ডিডিএল-৯২০ ওষুধটির কার্যকারিতা সম্পূর্ণভাবে নিশ্চিত করতে এবং মানবদেহে এর প্রয়োগের নিরাপত্তা পর্যালোচনার জন্য ইউসিএএল হেলথ আরও গবেষণার প্রয়োজন বলে জানিয়েছে।
মন্তব্য করুন