মো. মুরাদ ইসলাম (৪১)। গুলশানের ক্যাফে রিও-র ম্যানেজার ছিলেন। স্ত্রী, এক ছেলে ও এক মেয়েকে নিয়ে সুখের সংসার ছিলো তার। খুব ইচ্ছে ছিলো ছেলেকে বড় মাপের হাফেজ বানানোর। ১৮ জুলাই স্বৈরশাসকের বুলেট তার সাজানো সংসার তছনছ করে দেয়।
গত ১৮ জুলাই অফিস শেষে বাসায় ফেরার পথে রাত ৯টার দিকে মিরপুরের সেনপাড়ায় পানির ট্যাংক এলাকায় পৌঁছালে পুলিশের গুলিতে তিনিসহ বেশ কয়েকজন আহত হন। ওই সময় ঘটনাস্থলে দুজনের মৃত্যু হলেও ভাগ্যক্রমে বেঁচে যান মুরাদ। গুলি তার গলার ডান পাশে ঢুকে বাম পাশ দিয়ে বের হয়ে যায়। শুরুতে তাকে স্থানীয় আল হেলাল হাসপাতালে ও পরে শহীদ সোহরাওয়ার্দী হাসপাতালে নেওয়া হয়।
মুরাদের স্ত্রী রানী ইসলাম বলেন, শহীদ সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজে চারদিক থেকে গুলিবিদ্ধ রোগী আসায় চিকিৎসা পেতে বেশ বেগ পেতে হয়েছে। পরে ভাস্কুলার সমস্যার কথা বলে হৃদরোগে পাঠানো হয়, সেখান থেকে নিউরো সায়েন্সেস হাসপাতালে। তিন মাস ধরে মুরাদ এ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন।
মুরাদের বাবা আমিনুল ইসলাম বলেন, ছেলের অবস্থা এতটাই সংকটাপন্ন ছিল যে চিকিৎসক মৃত্যুর সংবাদ শুনতে মানসিকভাবে প্রস্তুত থাকতে বলেছিলেন। এখন কিছুটা উন্নতি হলেও গলা থেকে পুরো শরীর অবস। হাত, পা ও শরীরের কোনো অংশই সক্রিয় নয়। এর জন্য রোবট থেরাপি দরকার, যা বাংলাদেশে নেই।
রানী ইসলাম বলেন, আইসিইউতে মুরাদের সঙ্গে দেখা করতে গেলে খালি কান্না করে। ছেলেকে নিয়ে খুব আশা ছিলো ওর। ছেলের জন্য কান্না করতে করতে মুরাদ বলেন, আমার খুব ইচ্ছে ছিলো ছেলেকে বড় হাফেজ করার। এখন আমার তো উপার্জন নাই। এখন কিভাবে ছেলেকে হাফেজ করবো? সুস্থ হলেও তো কিছু একটা করে করে খেতে পারতাম।
রানী ইসলাম আরও বলেন, তিন মাস ধরে তো মুরাদের ইনকাম নেই। মেয়েকে বললাম বাসা পরিবর্তন করি। খরচ কম হবে। মেয়ে বললো, মা খাবার কম দিও কিন্তু থাকার কষ্ট দিও না। বলেই কান্নায় ভেঙে পড়েন রিনা ইসলাম। তিনি জানান, মুরাদের সুচিকিৎসার জন্য স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম যেভাবে দ্রুত ব্যবস্থা করেছেন তাতে তিনি তার প্রতি কৃতজ্ঞ।
চিকিৎসকরা জানিয়েছেন, মুরাদের হাত-পা সচল করার জন্য প্রয়োজন রোবোটিক ফিজিওথেরাপি। দেশে রোবোটিক ফিজিওথেরাপির ব্যবস্থা নাই। এজন্য থাইল্যান্ডের ভেজথানি হাসপাতালে পাঠানো হচ্ছে তাকে।
স্বাস্থ্য উপদেষ্টা যোগদানের পর থেকেই আহতদের নিয়ে কাজ করে যাচ্ছেন। রবিবার (১৭ নভেম্বর) রাতে কাজল মিয়াকে এয়ার অ্যাম্বুলেন্সে করে থাইল্যান্ডে পাঠানো হয়। সেদিনই সিদ্ধান্ত হয় মুরাদকে বিদেশে পাঠানোর। গতকাল হাসপাতালে টাকা জমা দেওয়া হয়। আজকে (মঙ্গলবার) বিমান বাংলাদেশের টিকেট করা হয়। বুধবার (২০ নভেম্বর) বাংলদেশ বিমানের বিজি ৩৮৮ ফ্লাইটে ব্যাংকক নেওয়া হবে তাকে।
এ ব্যাপারে স্বাস্থ্য উপদেষ্টা নূরজাহান বেগম বলেন, আমার প্রধান কাজ হচ্ছে আহতদের চিকিৎসার ব্যাবস্থা করা। এজন্য বিদেশ থেকে অনেকগুলো মেডিকেল টিম এনেছি। ইতোমধ্যে ৫ জনকে চিকিৎসার জন্য বিদেশে পাঠানো হয়েছে। আরও কয়েকজনকে বিদেশে পাঠানোর প্রক্রিয়া চলছে। তবে তাদেরকেই বিদেশি পাঠানো হবে যাদের দেশে চিকিৎসা সম্ভব নয়।
আগামীকাল সকাল সাড়ে ৯ টায় হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে মুরাদকে বিদায় জানাবেন স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের বিশেষ সহকারী অধ্যাপক সায়েদুর রহমান, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক মো আবু জাফর ও নাগরিক কমিটির নেতা ডা. আহাদ।
মন্তব্য করুন