বিশ্বমানের চিকিৎসা প্রদানে দেশের প্রথম এবং একমাত্র ডিজিটাল 3-D ম্যামোগ্রামের (টমোসিন্থেসিস) উদ্বোধন করেছে ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার।
এর মাধ্যমে দ্রুততম সময়ে ব্রেস্ট ক্যান্সার নির্ণয় করা সম্ভব। একই সাথে হাসপাতালটি তাদের মোবাইল অ্যাপ পরিষেবা উদ্বোধন করে।
রোববার (২২ সেপ্টেম্বর) ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতালে এক বিশেষ প্রেস কনফারেন্সে এই উদ্বোধন করা হয়।
প্রতিষ্ঠানটির ম্যানেজিং ডিরেক্টর জনাব সাকিফ শামীম এ সময় উপস্থিত ছিলেন। এই অ্যাপ এবং টমোসিন্থেসিস মেশিন দেশের স্বাস্থ্য খাতে একটি যুগান্তকারী পদক্ষেপ হিসেবে দেখছেন সংশ্লিষ্টরা।
সাকিফ শামীম বলেন, এই অ্যাপের মাধ্যমে আমরা আমাদের রোগীদের জন্য স্বাস্থ্যসেবাকে আরও সহজ ও সাশ্রয়ী করতে চাই। আমরা বিশ্বাস করি, এটি আমাদের রোগীদের চিকিৎসা প্রাপ্তির প্রক্রিয়াকে আরও সহজতর করবে।
যেহেতু ক্যান্সার চিকিৎসা দীর্ঘমেয়াদী এবং ব্যয়বহুল, তাই তিনি ফার্মাসিটিক্যাল কোম্পানিকে অনুরোধ করেন ক্যান্সারের ওষুধের মূল্য যতটুকু সম্ভব রোগীর ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে আনার। ক্যান্সার চিকিৎসাকে আরও সহজতর করতে তিনি সারা দেশে ৩০টি ক্যানসার সেন্টার খোলার পরিকল্পনার কথাও জানান।
উক্ত কনফারেন্সে বক্তব্য রাখেন হাসপাতালটির ব্রেস্ট সার্জন ডা. আলী নাফিসা। এসময় ৩৫-এর অধিক যেকোনো নারীরই প্রতি ২ বছর অন্তর অন্তর নিয়মিত ব্রেস্ট স্ক্রিনিং করানোর প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেন। তিনি 2-D ম্যামোগ্রামের সাথে 3-D ম্যামোগ্রামের সামগ্রিক পার্থক্য নিয়েও কথা বলেন।
নাফিসা বলেন, অনেক সময় নারীরা মনে করেন যে, ম্যামোগ্রাম করলে রেডিয়েশন ছড়ায়। কিন্তু এই ধারণাটি সম্পূর্ণ সত্য নয়। সাধারণ একটি বুকের এক্স-রে করলে যতটুকু রেডিয়েশন ছড়ায়, তার প্রায় ১০ ভাগের ১ ভাগ রেডিয়েশন ছড়ায় 3-D ম্যামোগ্রাম করলে। তাই ম্যামোগ্রাম নিয়ে ভয় পাওয়া উচিত নয়।
এ ছাড়াও, কনফারেন্সে ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের আইটি বিভাগের প্রধান জনাব অনুপম হালদার অ্যাপের উল্লেখযোগ্য ফিচারগুলো তুলে ধরেন।
ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট, পেশেন্ট পোর্টাল, হোম স্যাম্পল কালেকশন, অ্যাম্বুলেন্স সেবাসহ বেশ কিছু সেবা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে এই অ্যাপে। ডাক্তার অ্যাপয়েন্টমেন্ট ফিচারের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা নিজেদের পছন্দমত বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের অ্যাপয়েন্টমেন্ট নিতে পারবেন। অ্যাপ ইনস্টল করে একজন গ্রাহক খুব সহজেই হাসপাতালটির ডাক্তারদের তালিকা খুঁজে পাবেন। যেখানে বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের তথ্য এবং চিকিৎসাক্ষেত্রে তাদের অভিজ্ঞতা সম্পর্কে জানা যাবে। রোগীরা সহজেই তাদের সমস্যার জন্য সঠিক ডাক্তার নির্বাচন করতে পারবে।
তিনি বলেন, এই অ্যাপের অন্যতম সেরা ফিচারগুলোর একটি হলো ‘হোম স্যাম্পল কালেকশন’। এই সুবিধাটি ব্যবহার করে রোগীরা নিজেদের বাসায় বসেই প্যাথলজি (রক্ত পরীক্ষা)ও ইউরিনের নমুনা সংগ্রহ করাতে পারবেন। এক্ষেত্রে রোগীকে কষ্ট করে হাসপাতালে আসতে হবে না, বাসায় বসেই করা যাবে সকল ধরনের প্যাথলজি পরীক্ষা। আপাতত ঢাকাতেই থাকছে এই সুবিধাটি।
অ্যাপটিতে থাকছে পেশেন্ট পোর্টাল, যেখানে রোগীদের ব্যক্তিগত তথ্য, মেডিকেল রিপোর্ট, প্রেসক্রিপশন এবং চিকিৎসার বিবরণ সংরক্ষিত থাকবে। রোগী এবং তাদের পরিবারের সদস্যরা এই পোর্টালের মাধ্যমে সর্বশেষ চিকিৎসার অগ্রগতি সম্পর্কে ঘরে বসেই জানতে পারবেন। অ্যাপটির মাধ্যমে খুব সহজেই দ্রুততম সময়ে অ্যাম্বুলেন্স সেবা পাওয়া যাবে এক ক্লিকেই। ঢাকার অভ্যন্তরীণ যেকোনো স্থানে মাত্র ৩০ মিনিটের মধ্যেই পৌছে যাবে অ্যাম্বুলেন্স।
মুমূর্ষু সময়ে এই অ্যাম্বুলেন্স সেবা অনেক রোগীর জীবন বাঁচাবে বলে আশা করা যাচ্ছে। এ ছাড়াও, অ্যাপের মাধ্যমে নির্ধারিত মূল্যে অ্যাম্বুলেন্স সেবাটি পাবেন রোগীরা।
ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারের আরেকটি বিশেষ সেবা হলো অপরাজয়ী আবাসন, যেখানে ক্যান্সার রোগী ও তাদের পরিবারের জন্য বিশেষভাবে প্রস্তুত আবাসনের ব্যবস্থা রয়েছে। রোগী ও তাদের স্বজনদের জন্য এ সেবা সহজ ও সাশ্রয়ীভাবে প্রাপ্তি নিশ্চিত করা যাবে এই অ্যাপের মাধ্যমে। এ ছাড়াও ল্যাবএইডের বিভিন্ন হেলথ কেয়ার প্যাকেজ সম্পর্কে বিস্তারিত তথ্য অ্যাপেই পাওয়া যাবে, যা সাশ্রয়ী মূল্যে উন্নত চিকিৎসা সেবা গ্রহণের জন্য একটি উপযোগী দিক-নির্দেশনা দেয়।
অ্যাপটির হোমপেজে থাকছে অপারেশন থিয়েটার সংক্রান্ত তথ্য, যেখানে আধুনিক সার্জিক্যাল প্রযুক্তির ব্যবহার করে সফল অপারেশন করানো হচ্ছে। এ ছাড়াও অত্যাধুনিক কেমোথেরাপি ইউনিট এবং ডিজিটালাইজড পেশেন্ট সার্ভিস থাকছে, যা চিকিৎসা প্রক্রিয়াকে আরও সহজতর ও স্বচ্ছ করবে। রোগীরা অনলাইনেই সকল প্রয়োজনীয় সেবা পেতে পারবেন, যা সময় ও পরিশ্রম উভয়ই সাশ্রয় করবে।
হাসপাতালের পক্ষ থেকে বলা হয়, এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা ল্যাবএইড ক্যান্সার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টারে ব্যবহৃত সর্বশেষ প্রযুক্তি সম্পর্কে জানতে পারবেন। আধুনিকতম প্রযুক্তির ব্যবহার এবং দক্ষ চিকিৎসকগণের সমন্বয়ে ল্যাবএইড রোগীদের জন্য সর্বোচ্চ মানের স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করছে।
অ্যাপটির উদ্বোধনের মাধ্যমে ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার স্বাস্থ্যসেবার ক্ষেত্রে একটি নতুন যুগের উন্মোচন করেছে। ল্যাবএইড ক্যানসার হাসপাতাল এন্ড সুপার স্পেশালিটি সেন্টার ল্যাবএইড গ্রুপেরই একটি অঙ্গপ্রতিষ্ঠান। ল্যাবএইড সেই ৮০-র দশক থেকে নিয়মিতভাবে মানুষের আস্থা অর্জন করে এসেছে, আর এই নতুন উদ্যোগ সেই আস্থাকে আরও শক্তিশালী করবে।
মন্তব্য করুন