সাহিত্যে নীলকে বলা হয় বেদনার রং; কিন্তু চিকিৎসাবিজ্ঞানে আজ এই রং-ই হয়ে উঠেছে সুস্থতার প্রতীক। বিজ্ঞানীরা টানা দশ বছরের গবেষণায় দেখিয়েছেন যে, মানসিক রোগে আক্রান্তদের নিরাময়ে প্রচলিত ওষুধের চেয়ে অনেক বেশি কার্যকর নীল রং। একে তারা বলছেন ‘ব্লু থেরাপি’ বা নীল চিকিৎসা। যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও নিউজিল্যান্ডের একদল বিজ্ঞানী প্রচলিত ধারণা পাল্টে দিয়ে মানসিক রোগের চিকিৎসায় সামনে এনেছেন এক নতুন দিগন্ত।
গবেষকরা বলছেন, প্রকৃতি থেকে শুরু করে কৃত্রিম উপায়ে তৈরি নীল রং-ও এই থেরাপির অংশ। শহরাঞ্চলে থাকা রোগীদের সাগর কিংবা দিগন্তের কাছাকাছি রাখলে তাদের সুস্থতার হার বেড়ে যায়। আবার যাদের পক্ষে প্রকৃতির কাছে যাওয়া সম্ভব নয়, তাদের কৃত্রিমভাবে নীল রংয়ের আলো দিয়েও চিকিৎসা করা সম্ভব।
ওয়েলিংটনের ভিক্টোরিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞান গবেষক কেট ক্যাম্পবেল বলেন, ‘নীল রং আমাদের এমন এক বিক্ষিপ্ততার মধ্য দিয়ে নিয়ে যায়, যা মনকে জীবনের প্রতিদিনের অন্য ঝামেলা থেকে দূরে সরিয়ে রাখে। বিধ্বস্ত ঢেউয়ের শব্দ, নোনা বাতাসের ঘ্রাণ, পায়ের আঙুলের নিচে বালুকারাশির কুচকে যাওয়া—এসব সংবেদনশীলতা আমাদের দেহকে শিথিল করে। আর আমাদের মন হয়ে ওঠে আগের চেয়ে শান্ত।’
ব্লু থেরাপির বিষয়টি প্রথম শুরু করে ইউনিভার্সিটি অব সাসেক্সের গবেষকরা আজ থেকে ১০ বছর আগে। তারা ২০ হাজারের বেশি মানুষের আবেগ-অনুভূতি রেকর্ড করেন। পাশাপাশি তুলনামূলক সাগর বা দিগন্তের কাছে বসবাসরত মানুষের তথ্যও নেওয়া হয়। গ্লাসগো ক্যালেডোনিয়ান ইউনিভার্সিটির গবেষকরা দেখতে পান, এসব স্থানে থাকলে মানুষের মানসিক চাপ, উদ্বেগ, স্থূলতা, কার্ডিওভাস্কুলার রোগ এবং অকাল মৃত্যুর হার কমে যায়।
পশ্চিমা ডাক্তাররা এখন মানসিক রোগে আক্রান্তদের চিকিৎসায় প্রচলিত ওষুধের জায়গায় ব্লু থেরাপি ব্যবহার করছেন। গবেষকরা দেখতে পেয়েছেন, ডোপামিন জাতীয় ওষুধে অনেক রোগী সেরে উঠলেও তা যেমন দীর্ঘস্থায়ী হয় না, তেমনি এর পার্শ্বপ্রতিক্রিয়াও আছে। ওয়াইল্ডফাউল অ্যান্ড ওয়েটল্যান্ডস ট্রাস্ট (ডব্লিউডব্লিউটি) নামে প্রতিষ্ঠানটির ডাক্তাররা এখন ব্লু থেরাপি ব্যবস্থাপত্র হিসেবে দিচ্ছেন। মেন্টাল হেলথ ফাউন্ডেশন এবং ডব্লিউডব্লিউটির মতে, নীল জলরাশির কাছাকাছি থাকা মানুষের মানসিক ও দৈহিক সুস্থতা অন্যদের চেয়ে বেশি। তাদের স্মৃতিশক্তির পাশাপাশি ঘুমও হয় ভালো। সূত্র: বিবিসি।