পবিত্র রমজান সেহরিতে খাবার খেয়ে মাগরিব বা ইফতার পর্যন্ত না খেয়ে সংযমের সঙ্গে থাকতে হয়। অর্থাৎ সারাদিন না খেয়ে থাকতে হয় মুসলমানদের। এ কারণে কিছু জটিল রোগে আক্রান্তরা রোজা রাখা নিয়ে চিন্তিত থাকেন। এর মধ্যে রয়েছে কিডনি রোগীরা। অনেকেই রোজা রাখতে পাড়েন না। আবার অনেকেই চেষ্টা করেন রোজা রাখার।
যারা রোজা রাখেন বা রাখতে চান তাদের জন্য পরামর্শ দিয়েছেন রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালের মেডিসিন বিভাগের অ্যাসোসিয়েট কনসালট্যান্ট ডা. রোজানা রউফ।
সম্প্রতি একটি গণমাধ্যমের সঙ্গে আলাপকালে তিনি বলেন, কিডনি রোগীদের নির্ধারিত পরিমাণ পানি পান, পানির ভারসাম্য বজায় রাখা জরুরি। যেসব কিডনি রোগীর ক্রিয়েটিনিন ক্লিয়ারেন্স রেট ৬০ মিলিলিটারের থেকে কম, তাদের রোজা রাখার জন্য নিষেধ করা হয়। আর এ পরীক্ষা রোগীর ২৪ ঘণ্টা প্রস্রাব সংগ্রহ করে করা হয়। কেননা, পানিশূন্যতা থেকে ক্রিয়েটিনিনের পরিমাণ বেড়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে।
এ চিকিৎসক জানান, কিডনি রোগীদের পটাশিয়াম বাড়ার সম্ভাবনা থাকে। পেয়ারা ও আপেলে তুলনামূলক পটাশিয়ামের পরিমাণ কম থাকে, এ জন্য কিডনি রোগীরা এই ফল খেতে পারেন। তবে ডাবের পানি, লেবু চা, টমেটো, কলা ইত্যাদি খাবার খাওয়া যাবে না। এসব খাবারে পটাশিয়ামের পরিমাণ বেশি থাকে। আর শাকসবজি খাওয়ার ক্ষেত্রে রান্নার পর পানি ফেলে দিয়ে তারপর খেতে হবে।
তিনি আরও জানান, কিডনি রোগীদের এক টুকরোর বেশি মাছ বা মাংস খাওয়া যাবে না। যদি ইউরিক অ্যাসিড বেশি থাকে তাহলে কলিজা, গরুর মাংস, সামুদ্রিক মাছ খাওয়া যাবে না। ডায়াবেটিসের কারণে যদি কিডনি রোগ হয়, তাহলে অবশ্যই ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে। রোজায় নিয়ম করে তিন বেলা স্বাস্থ্যকর খাবার খেতে হবে। ইফতার, রাতের খাবার ও সেহরি, কোনোটাই বাদ দেয়া যাবে না।
যেসব রোগীরা ইনসুলিন ব্যবহার করেন তাদের সকালের ডোজ ইফতারের সময় এবং রাতের ডোজ রাতে না দিয়ে ডোজের অর্ধেক বা তিন ভাগের একভাগ সেহরির সময় নিতে হবে। রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ পরীক্ষা করতে হবে। সেটাও অন্তত তিনবার―দুপুর ১২টায়, ইফতারের আগে এবং এর দুই ঘণ্টা পর।
এ জন্য দুপুর ১২টায় রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ কমে যদি চার মিলিমোল/লিটার হয় (হাইপোগ্লাইসেমিয়া) বা আবার এর বেশি হলে ঘাম হওয়া, হাত কাঁপা, বুক ধড়ফড় ইত্যাদি হাইপোগ্লাইসেমিয়ার মতো লক্ষণ দেখা দিলে, রোজা ভেঙে গ্লুকোজ বা চিনির শরবত পান করতে হবে। তা না হলে জ্ঞান হারিয়ে ফেলতে পার রোগী। এ অবস্থায় নিকটস্থ হাসপাতালে নিয়ে ওই ব্যক্তির শিরায় গ্লুকোজ স্যালাইন দিতে হবে।
এছাড়া রক্তচাপ কম বা বেশি থাকা দুটিই কিডনি রোগের জন্য ক্ষতিকর। রক্তে ক্রিয়েটিনিনের মাত্রা বৃদ্ধি না পাওয়ার জন্য অবশ্যই রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হবে রোগীকে। এ ক্ষেত্রে ডায়াবেটিস ও রক্তচাপ নিয়ন্ত্রণে রাখার জন্য বিশেষজ্ঞ কোনো চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে পারেন।
মন্তব্য করুন