নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে বিভিন্ন সময় এডহকে নিয়োগ দেওয়া ব্যক্তিদের স্থায়ীকরণ নিয়ে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বিএসএমএমইউ) চিকিৎসকদের দুই গ্রুপের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করছে।
এ ঘটনায় গত বৃহস্পতিবার (১৪ মার্চ) ও আজ শনিবার (১৬ মার্চ) দুই দফা হাতাহাতির ঘটনা ঘটে। এতে আহত হয়েছেন দুজন। এমন উত্তপ্ত পরিস্থিতির মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাধারণ চিকিৎসক, কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের মধ্যে আতঙ্ক রিরাজ করেছে।
অভিযোগ উঠেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম না মেনে গত তিন বছরে চিকিৎসক, নার্স, কর্মকর্তা, কর্মচারীসহ বিভিন্ন পদে প্রায় দুই হাজার এডহকে নিয়োগ দেওয়া হয়েছে। অর্থের বিনিময়ে নিয়োগ পাওয়া এসব ব্যক্তিদের চাকরি স্থায়ীকরণ করতে আবার নিয়ম ভাঙছেন বিএসএমএমইউ উপাচার্য অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ।
এ নিয়ে আপত্তি জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) নেতাদের একাংশ।
তাদের দাবি, বর্তমান উপাচার্যের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে ২৮ মার্চ। ইতোমধ্যে উপাচার্য হিসেবে নিয়োগ প্রাপ্ত হয়েছেন অধ্যাপক ডা. দ্বীন মোহাম্মদ। এ সময়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের স্থায়ীকরণ কমিটির মতামত না নিয়ে তড়িঘড়ি করে স্থায়ীকরণের জন্য ভাইভা নিচ্ছেন বর্তমান উপাচার্য। যা সম্পূর্ণ অবৈধ।
বিএসএমএমইউ’র একাধিক সূত্র জানায়, গত বৃহস্পতিবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি ও বিশ্ববিদ্যালয় স্বাচিপ নেতাদের একাংশ মিছিল করে উপাচার্যের কার্যালয়ের অভিমুখে ঘেরাও করে। এসময় উপচার্যের অনুগতদের সঙ্গে তাদের সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে।
এর আগে উপাচার্য শারফুদ্দিন আহমদের অনিয়ম-দুর্নীতি-স্বজনপ্রীতি নিয়ে বেশ কিছু প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে প্রথম সারির কয়েকটি সংবাদপত্র ও টেলিভিশন চ্যানেল।
বিশ্ববিদ্যালয়ের নিয়ম অনুযায়ী এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তি এক বছর পর নিয়মিত হবে এবং বিজ্ঞপ্তি অনুসারে ভাইভা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ ও স্থায়ীকরণ কমিটির মতামতের ভিত্তিতে স্থায়ী হতে পারবেন। স্থায়ীকরণ কমিটিতে থাকবে হবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রভিসি, ট্রেজারার, বিশ্ববিদ্যালয় বিভিন্ন বিভাগের ডিন ও হাসপাতাল পরিচালক।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের নেফ্রোলজি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক ডা. জাকির হোসেন সুমন বলেন, নিয়ম অনুযায়ী স্থায়ীকরণ হবে ভাইভা বোর্ডের প্রতিটি সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে। কিন্তু সেটি মানছেন না বর্তমান উপার্চায। তড়িঘড়ি করে নিজ অনুগতদের পদোন্নতি ও এডহকে নিয়োগ পাওয়া ব্যক্তিদের স্থায়ী করছিলেন। এতে আর্থিক লেনদেনেরও অভিযোগ রয়েছে। ডা. জাকির হোসেন সুমন বলেন, বর্তমান উপাচার্য নিয়োগ পাওয়ার পর থেকে তিনি কোনো নিয়মনীতির তোয়াক্কা করেননি। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চালাতে গেলে প্রভিসি, ট্রেজারার, ডিন এসব পদ গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করতে হয়। সেটা তিনি করেননি। পছন্দমতো নিয়োগ দিয়ে, এখন এদের স্থায়ী করার চেষ্টা করছেন।
বিশ্ববিদ্যালয় প্রক্টর অধ্যাপক ডা. হাবিবুর রহমান দুলাল বলেন, বৃহস্পতিবার দুপুরে যতটুকু জানি স্বাচিপের চিকিৎসক ও বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা কর্মচারীরা মিছিল বের করে। ওনাদের দাবি, যেহেতু ইতোমধ্যে নতুন উপাচার্য নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন সুতরাং কোনো পদোন্নতি দেওয়া, স্থায়ীকরণ, সিন্ডিকেট মিটিং করতে দেওয়া হবে না। এ বিষয়ে বর্তমান উপাচার্য নিজেও আশ্বস্ত করেছেন। নাম প্রকাশ না করার শর্তে বঙ্গবন্ধু মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক চিকিৎসক-কর্মকর্তা বলেন, অধ্যাপক ডা. শারফুদ্দিন আহমেদ নিয়ম-নীতিকে পাত্তা না দিয়েই বিজ্ঞপ্তি দিয়ে ভাইভা নিচ্ছিলেন। যদিও চলতি মাসের শুরুতেই সিন্ডিকেট মিটিংয়ে সিদ্ধান্ত হয় নতুন উপাচার্য দায়িত্ব পাওয়ার আগে কোনো পদোন্নতি বা স্থায়ীকরণ যেন না করা হয়।
এ ঘটনায় বর্তমান উপাচার্য ডা. শারফুদ্দিন আহমেদকে একাধিকবার ফোন করেও তাকে পাওয়া পাওয়া যায়নি।
এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য অধ্যাপক কনক কান্তি বড়ুয়ার বিরুদ্ধেও একই অভিযোগ ওঠে। তবে এ অভিযোগ মানতে নারাজ কনক কান্তি বড়ুয়ার। তার মতে, বর্তমান উপাচার্যের সঙ্গে তার যোজন যোজন ফারাক।
তিনি বলেন, আমি একক ক্ষমতার বলে কোনো পদোন্নতি দেইনি। যাদের পদোন্নতি হয়েছে নিয়ম মেনেই হয়েছে। যতদিন দায়িত্বে ছিলাম সততা ও নিষ্ঠার সঙ্গে কাজ করেছি।
বর্তমান উপাচার্য প্রসঙ্গে আমি কোনো মন্তব্য করতে রাজি নই। এ ছাড়া আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের এখন নেই। সুতরাং নো কমেন্টস।
বিএসএমএমইউ’র ডিন (ডেন্টাল অনুষদ) ডা. মোহাম্মদ আলী আসগর মোড়ল বলেন, নিয়ম অনুযায়ী, এডহক ভিত্তিতে নিয়োগ হয় ছয় মাসের জন্য। এরপর বাড়লে সেটা আবার ছয় মাসের জন্য বাড়ে। এভাবে এক বছর হলে স্বয়ংক্রিয়ভাবে নিয়মিত হয়। নিয়মিত হওয়ার পর চাকরি স্থায়ী করতে হয় মূলত বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি কমিটির মাধ্যমে। মূলত এ বিষয় নিয়ে ঝামেলা হচ্ছে। গতকাল একটি মিটিং ছিল, সেটি হয়নি।
মন্তব্য করুন