আধুনিক চিকিৎসা ব্যবস্থায় এসেছে নানা কঠিন রোগের চিকিৎসা। প্রাথমিক অবস্থায় ক্যানসার শনাক্ত করা গেলেও তা সারিয়ে তোলা সম্ভব হয় বেশিরভাগ সময়। এতে সামগ্রিকভাবে ক্যানসারে আক্রান্ত ও মৃত্যু কমেছে বলে মনে হলেও চিত্র পুরোপুরি ভিন্ন।
পরিসংখ্যান বলছে, ২০২২ সালে পৃথিবীব্যাপী ক্যানসার আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রায় ২ কোটি, যেখানে মৃত্যু ঘটেছে প্রায় ১ কোটির। ক্যানসার শনাক্তের পর ৫ বছর বেঁচে ছিলেন এমন রোগীর সংখ্যা সাড়ে পাঁচ কোটির বেশি।
পরিসংখ্যান আরও বলছে, প্রতি পাঁচজনের একজন তার জীবদ্দশায় ক্যানসারে আক্রান্ত হচ্ছেন। লিঙ্গভেদে এই হিসাব প্রতি ৯ জন পুরুষ ও ১২ জন নারীর মধ্যে যথাক্রমে একজন করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থ্যার ক্যানসার এজেন্সি ইন্টারন্যাশনার এজেন্সি ফর রিসার্চ অন ক্যানসার (আইঅ্যাআরসি) বিশ্ব ক্যানসার দিবস উপলক্ষে গেল ১ ফেব্রুয়ারি এই জরিপ প্রকাশ করে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার ওয়েবসাইটে প্রকাশিত জরিপটি বলছে, ২০৫০ সালের মধ্যে ৩ কোটি ৫০ লাখ মানুষ ক্যানসারে ভুগবে, যা ২০২২ সালের তুলনায় ৭৭ শতাংশ বেশি। আর শুধু এশিয়াতেই বাড়বে ৬৪ শতাংশ ক্যানসার রোগী। সবচেয়ে উদ্বেগজনক বিষয় হলো ১১৫টি দেশের ওপর জরিপ করা অধিকাংশ দেশেই ক্যানসার চিকিৎসার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট সেবার পর্যাপ্ত অর্থায়নের ব্যবস্থা নেই।
২০২২ সালে পৃথিবীতে সবচেয়ে বেশি আক্রান্ত ও মৃত্যু হয়েছে ফুসফুস, স্তন ও কোলোরেক্টাল ক্যানসারে। প্রায় ১২.৪ শতাংশ বা ২৫ লাখ মানুষ ওই বছর নতুনভাবে ফুসফুস ক্যানসারে আক্রান্ত হয়, যেখানে স্তন ক্যানসার রয়েছে দ্বিতীয় স্থানে। একই বছর প্রায় ২৩ লাখ মানুষ স্তন ও ১৯ লাখ মানুষ কোলোরেক্টাল ক্যানসারে আক্রান্ত হয়। এ ছাড়া প্রস্টেট ও পেটের ক্যানসারে আক্রান্তের সংখ্যা ২৪ লাখ ৭০ হাজার।
মৃত্যুও সবচেয়ে বেশি ফুসফুস ক্যানসারেই। মোট মৃত্যুর ১৮ দশমিক ৯ শতাংশই ফুসফুস ক্যানসারে। অঙ্কের হিসাবে যা ১৮ লাখের বেশি। এর পরের স্থানে থাকা কোলোরেক্টাল ক্যানসারে ২০২২ সালে ৯ লাখ মানুষের মৃত্যু হয়। সংশ্লিষ্টরা বলছেন, এশিয়ায় তামাকজাত পণ্যের ব্যবহার বৃদ্ধির কারণেই ফুসফুস ক্যানসারের পুনরুত্থান হচ্ছে।
বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে ক্যানসারের চিত্র আরও ভয়াবহ। ২০১৮ সালের পর ৫ বছরে ক্যানসার রোগীর সংখ্যা বেড়েছে প্রায় ১১ শতাংশ।
জরিপ অনুযায়ী ২০২২ সালে দেশে ক্যানসার আক্রান্ত মোট রোগীর সংখ্যা ছিল প্রায় ১৬ লাখ সাত হাজার ২৫৬ জন। একই বছর ক্যানসারে মৃত্যু প্রায় ১২ লাখ রোগীর। মানুষ সবচেয়ে বেশি ভুগছে খাদ্যনালি, স্তন ও ফুসফুস ক্যানসারে। এ ছাড়া জরায়ুমুখ, সার্ভিক্স, ঠোঁট ও মুখের ক্যানসারেও ভুগছে দেশের একটি বিশাল সংখ্যক রোগী।
ব্যাপক হারে ক্যানসার রোগী বাড়লেও দেশে রোগ নির্ণয়, চিকিৎসা ও অন্যান্য আনুষঙ্গিক সেবা বাড়েনি। সংশ্লিষ্টদের মতে, জীবনযাত্রার ধরন পরিবর্তন, বায়ুদূষণ, ধূমপান, স্থূলতা, পর্যাপ্ত শারীরিক কাজকর্ম না করা, গড় আয়ু বেড়ে যাওয়া, ফাস্ট ফুড-জাংক ফুডের ওপর নির্ভরশীলতা বাড়াসহ বিভিন্ন কারণে দেশে ক্যানসার রোগী বেড়ে যাচ্ছে। দেশের ক্রমবর্ধমান এই রোগের প্রতিরোধ ও চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা না গেলে সংকট তীব্র হবে।
মন্তব্য করুন