অক্টোবর মাস ব্রেস্ট বা স্তন ক্যান্সার সচেতনতার মাস। নানা কর্মসূচীর মধ্য দিয়ে গোটা বিশ্বে পালিত হচ্ছে মাসটি। স্তন ক্যান্সার বিষয়ক সচেতনতা বৃদ্ধি করতে বার্ষিক প্রচারণা কর্মসূচি এটি। এই অক্টোবর মাস সহ বছরের অন্যান্য সময়ে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বৃদ্ধির প্রচারনাকালে মানুষ গোলাপী ফিতা পরিধান করে। স্তন ক্যন্সারের কারণে যারা মৃত্যুবরণ করেছে তাদের স্মরণে, আক্রান্ত হয়েও যারা বেঁচে আছে তাদের সম্মান দেখাতে এবং স্তন ক্যান্সারকে পরাজিত করতে একসাথে কাজ করা মানুষদের প্রতি সমর্থন যোগাতে এই গোলাপী ফিতা পরিধান করা হয়। বিশ্বের অন্যান্য দেশের মত বাংলাদেশেও নানা কর্মকান্ডের মধ্য দিয়ে পালিত হয় স্তন ক্যান্সার সচেতনতার এই মাস। এছাড়া, ১০ই অক্টোবর বাংলাদেশে স্তন ক্যান্সার সচেতনতা দিবস হিসেবে বেসরকারিভাবে পালিত হয়।
যদিও নারী এবং পুরুষ উভয়েই স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হতে পারে, পুরুষের স্তন ক্যান্সার অনেকাংশে বিরল। নারীদের মধ্যে প্রতি ৪ জন ক্যান্সার আক্রান্তের অন্তত ১ জন স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত এবং ক্যান্সার জনিত প্রতি ৬টি মৃত্যুর ১ টি স্তন ক্যান্সারের কারনে ঘটে। আন্তর্জাতিক সংস্থা আইএআরসি (The International Agency for Research on Cancer) এর তথ্য মতে ২০২০ সালে বিশ্বব্যাপী সনাক্ত ক্যন্সারের মধ্যে স্তন ক্যন্সার ছিল শীর্ষে। ২০২০ সালে গোটা বিশ্বে নতুন করে সনাক্ত স্তন ক্যান্সার রোগীর সংখ্যা ২.২ মিলিয়নেরও বেশি এবং এ কারণে মৃত্যু হয়েছে প্রায় ৬৮৫,০০০ জনের। বিশ্বব্যাপী প্রতি ৮ জন নারীর মধ্যে ১ জনের স্তন ক্যান্সার হতে পারে এবং প্রতি ৩৬ জন আক্রান্তের মধ্যে মৃত্যুর সম্ভাবনা রয়েছে ১ জনের। প্রতি ৬ মিনিটে একজন নারী স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় এবং প্রতি ১১ মিনিটে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত একজন নারী মারা যায়। অতি সম্প্রতি (০২ সেপ্টেম্বর ২০২২) দ্য ব্রেস্ট জার্নালে প্রকাশিত এক প্রবন্ধে অনুমান করা হয়েছে যে, ২০৪০ সালের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে নতুন আক্রান্তের সংখ্যা প্রতি বছর ৩ মিলিয়ন অতিক্রম (৪০% বৃদ্ধি) করবে এবং এর ফলে প্রতি বছর ১ মিলিয়নেরও অধিক মৃত্যু (৫০% বৃদ্ধি) ঘটবে।
২০২০ সালে, নিম্ন ও মধ্যম আয়ের দেশে প্রায় ৫ লক্ষ নারী স্তন ক্যান্সারে মারা গেছে যা সারা বিশ্বে মোট মৃত্যুর প্রায় তিন চতুর্থাংশ। স্তন ক্যান্সার সারা বিশ্বের মত বাংলাদেশেও নারীমৃত্যুর অন্যতম কারণ। বাংলাদেশে ২০২০ সালে ১৩ হাজারের বেশি নারী নতুন করে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত হয় যা নারীদের মধ্যে মোট ক্যান্সারের ১৯ শতাংশ। স্তন ক্যান্সারের কারনে মৃত্যু হয় ৬৭৮৩ জনের যা ক্যান্সারের কারনে মোট নারী মৃত্যুর প্রায় ১৫ শতাংশ।
ব্রেস্ট বা স্তন মানবদেহের বক্ষদেশের উপরিভাগে অবস্থিত এক জোড়া গ্রন্থিযুক্ত অঙ্গ যা সংযোজক কলা, চর্বি এবং স্তন কলার সমন্বয়ে গঠিত। স্তন ক্যান্সার বলতে স্তনকোষের অনিয়ন্ত্রিত বৃদ্ধি পাওয়াকেই বোঝায়। আমাদের শরীরে কোন অংশের কোষ খুব দ্রুত এবং অনিয়ন্ত্রিতভাবে বৃদ্ধি পেয়ে এক প্রকারের অস্বাভাবিক লাম্প বা চাকা তৈরি করে যাকে সাধারণতঃ টিউমার বলা হয়। এই টিউমার বেনাইন এবং ম্যালিগন্যান্ট -এই দুই ধরনের হয়ে থাকে। স্তন টিউমারের অধিকাংশই বেনাইন হলেও এর ১০ থেকে ১৫ শতাংশ টিউমার ম্যালিগন্যান্ট টাইপের হয়। স্তনের এই ম্যালিগন্যান্ট টিউমারকেই স্তন ক্যান্সার বলা হয়।
স্তনের যেসব পরিবর্তনে মনোযোগী হতে হবে :
বেশিরভাগ ক্ষেত্রে, একেবারে শুরুর দিকে স্তন ক্যান্সারের তেমন উল্লেখযোগ্য লক্ষণ বা উপসর্গ প্রকাশ না পেলেও সময়ের সাথে এক বা একাধিক লক্ষণ প্রকাশ হতে থাকে। স্তনের এসব পরিবর্তন একজন নারী নিজে নিজেই অথবা তার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারী অনুভব করতে পারে। তবে, অধিকাংশ পরিবর্তন শুধুমাত্র ম্যামোগ্রাম, এমআরআই, বা আল্ট্রাসাউন্ডের মতো ইমেজিং পদ্ধতির মাধ্যমেই সনাক্ত করা সম্ভব হয়।
স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ বা উপসর্গসমূহ নিম্নরুপ: o স্তনে এক বা একাধিক লাম্প বা চাকা অনুভূত হওয়া যা আগে ছিল না o আগে অনুভূত হওয়া কোন চাকা পরিবর্তিত হওয়া o স্তনের আকার বা আকৃতিতে পরিবর্তন o স্তনের যেকোনো জায়গায় চামড়া ফ্যাকাশে, লাল বা ফোলা ওঠা o স্তন বা স্তনবৃন্তে ব্যথা হওয়া যা সহজে দূর হয় না o স্তনবৃন্তের শেপ বা আকৃতি আগের চেয়ে পরিবর্তিত হওয়া যেমন, অসমান হওয়া, চ্যাপ্টা হওয়া বা বেঁকে যাওয়া o স্তনবৃন্ত থেকে দুধ ছাড়া অন্য কোন তরল নিঃসরণ হওয়া
o বগলে ফুলে যাওয়া বা চাকা দেখা দেয়া
উপরের যেকোন এক বা একাধিক উপসর্গ অথবা স্তনের অন্য কোন পরিবর্তন নারী নিজে অথবা তার চিকিতসক যেই-ই বুঝতে পারুক না কেন পরিবর্তনটি সঠিকভাবে নির্ণয় করার জন্য চিকিৎসকের সাথে পরামর্শ করা জরুরী। চিকিৎসক প্রয়োজনীয় পরীক্ষা নিরীক্ষার মাধ্যমে পরিবর্তনটি স্তন ক্যান্সার কি না তা নির্ণয় করবেন। প্রাথমিক পর্যায়ে ধরা পড়লে রোগীর সুস্থ হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে। আর তাই নিয়মিত স্তন পরীক্ষা করে দেখতে হবে অস্বাভাবিক কোনো পরিবর্তন চোখে পড়ে কি না।
স্তন ক্যান্সারের কারণ ও ঝুঁকি :
অধিকাংশ ক্ষেত্রেই এটা জানা সম্ভব হয় না যে ঠিক কি কারনে তাদের ক্যান্সার হয়েছে। BRCA1 এবং BRCA2 জিন মিউটেশনকে স্তন ক্যানসারের কারন হিসেবে ব্যাখ্যা করেছেন বিজ্ঞানীরা। এই জিন মিউটেশন মা বাবা থেকে তাদের বাচ্চাদের শরীরে স্থানান্তরিত হতে পারে। বায়োলজিক্যালি ক্যান্সার এর জন্যে কোষের ক্ষতিগ্রস্ত ডিএনএ কেই দায়ী বিবেচনা করা হয়। কিন্তু কেন বা কিভাবে ডিএনএ ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা এখনও অনেকাংশে অজানা। ডিএনএ এর ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার কারণ এটি জেনেটিক কিংবা পরিবেশগত, অথবা উভয়ের সমন্বয়ে হতে পারে। যা হোক, স্তন ক্যান্সারের সাথে যুক্ত কিছু নির্দিষ্ট রিস্ক ফ্যাক্টর বা ঝুঁকির কারণ রয়েছে। স্তন ক্যান্সারের ঝুকি সমূহকে অপরিহারযোগ্য ও পরিহারযোগ্য এই দুই ভাগে বিভক্ত করা হয়।
স্তন ক্যান্সারের অপরিহারযোগ্য ঝুঁকি সমুহ :
লিঙ্গ: সাধারনভাবে স্তন ক্যান্সার কেবল মাত্র মহিলাদের হয়ে থাকে বলে ধারণা করা হলেও এটা পুরুষদেরও হয়ে থাকে। তবে, পুরুষদের তুলনায় মহিলাদের প্রায় ১০০ গুণ বেশি ঘটে।
বয়স: বয়স বৃদ্ধির সাথে একজন মহিলার স্তন ক্যান্সার হওয়ার সম্ভাবনা বাড়তে থাকে। ৪০ বছরের কম বয়সী মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সারের হার কম। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত মহিলাদের কেবলমাত্র ৪ শতাংশের বয়স ৪০ এর নীচে। স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের হার ৪০ বছর বয়সের পরে বৃদ্ধি পেতে শুরু করে এবং ৭০ বছরের বেশি বয়সী মহিলাদের মধ্যে সর্বোচ্চ। এক গবেষনায় দেখা গেছে আক্রমণাত্মক স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত তিনজনের মধ্যে দুইজন ৫৫ বছর বয়সের অধিক।
জাতি: জাতিভেদে স্তন ক্যান্সার এর ঝুকি কম বেশী হয়। অন্যান্য জাতির তুলনায় ককেশীয় মহিলাদের মধ্যে স্তন ক্যান্সার আক্রান্তের হার বেশী।
পারিবারিক ইতিহাস এবং জেনেটিক ফ্যাক্টর: যদি কোন মহিলার মা, বোন, বাবা বা সন্তানের স্তন বা ডিম্বাশয়ের ক্যান্সারের ইতিহাস থাকে, তাহলে ভবিষ্যতে তার স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। ৪০ বছরের কম বয়সী একজন নিকটাত্মীয়ের স্তন ক্যানসার থাকলে এই রোগের সম্ভাবনা বাড়ে।
ব্যক্তিগত স্বাস্থ্যের ইতিহাস: যদি কারও একটি স্তনে ক্যান্সার ধরা পড়ে, তাহলে ভবিষ্যতে অন্য স্তনে ক্যান্সার ধরা পড়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়।
ঋতুস্রাব এবং সন্তান জন্মদান বিষয়ক: অল্প বয়সে (১২ বছরের কম) ঋতুস্রাব শুরু হওয়া, অধিক বয়সে মেনোপজ (৫৫ বছর এর পরে) শুরু হওয়া, অধিক বয়সে প্রথম সন্তান জন্ম দেয়া, অথবা সন্তান একেবারেই না হওয়া ইত্যাদি স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়।
ঘন স্তন টিস্যু: স্তন টিস্যু অধিকতর ঘন হলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। এর ফলে স্তনের লাম্প বা চাকা সনাক্ত করা কঠিন হয়ে যায়।
জেনেটিক পলিমরফিজম: কিছু জিনের জেনেটিক পলিমরফিজমের কারনে স্তন ক্যান্সার এর ঝুঁকি কম-বেশী হয়। এই জেনেটিক পলিমরফিজমের কারনে বিভিন্ন জনগোষ্ঠীর মধ্যে এমনকি একই জনগোষ্ঠীর বিভিন্নজনের মধ্যে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্তের সংখ্যা কম বেশী হয়।
নিয়ন্ত্রন বা পরিহারযোগ্য ঝুঁকি সমূহ :
অপর্যাপ্ত শারীরিক ক্রিয়াকলাপ: তুলনামূলকভাবে কম শারীরিক শ্রমের সাথে অলস জীবনযাপন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। অতিরিক্ত ওজন বা স্থূলতা: শারীরিক স্থূলতা বা অতিরিক্ত ওজন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলতে পারে। মেনোপজের পরবর্তী সময়ে এই ঝুঁকি আরও বেড়ে যায়। শরীরের অতিরিক্ত চর্বি ইস্ট্রোজেন হরমোন উৎপাদন করে, যা ক্যান্সারের সহায়ক হিসেবে কাজ করে। খাদ্যাভ্যাস: খাদ্যতালিকায় শাকসবজি বা ফলমূলের চাইতে চর্বি ও প্রাণীজ আমিষ বেশি থাকলে এবং প্রসেসড ফুড বেশি খেলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়। অ্যালকোহল পান: ঘন ঘন অ্যালকোহল সেবন স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বাড়ায়। যত বেশি অ্যালকোহল পান করা হয়, ঝুঁকি তত বেশি হয়। সন্তান গ্রহণ ও ব্রেস্টফিডিং: যারা দেরিতে সন্তান গ্রহন করে, একেবারেই সন্তান জন্ম দেয় না, বা সন্তানকে বুকের দুধ খাওয়ায় না তাঁদের স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। বুকে রেডিয়েশন থেরাপি: তিরিশ বছর বয়সের পূর্বে বুকে রেডিয়াশন থেরাপি নিলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি থাকে। জন্ম নিয়ন্ত্রণ পিল: জন্ম নিয়ন্ত্রণ করতে যেয়ে দীর্ঘদিন ধরে পিল খেলে বা হরমোন ইনজেকশন নিলে স্তন ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি থাকে। কম্বাইন্ড হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি (এইচআরটি): মেনোপজের জন্য নির্ধারিত যৌথ হরমোন রিপ্লেসমেন্ট থেরাপি গ্রহণ করলে স্তন ক্যান্সারের ঝুঁকি বেড়ে যায়।
আমেরিকার ন্যাশনাল ব্রেস্ট ক্যান্সার ফাউন্ডেশন কিন্তু একটি মজার তথ্য জানিয়েছে। তাদের তথ্য মতে স্তন ক্যান্সারে আক্রান্ত ৬০-৭০ শতাংশ মহিলার এই ঝুঁকির কারণগুলির সাথে কোন সম্পর্ক নেই। পক্ষান্তরে, এসব ঝুঁকিতে আছেন এমন মহিলাদের অনেকেরই কখনই স্তন ক্যান্সার হতে দেখা যায় না।
স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বলতে আমরা কি বুঝি?
স্তন ক্যান্সার সচেতনতা বলতে এক প্রকারের প্রচেষ্টা বোঝায় যার মাধ্যমে প্রচলিত ভুল ধারনা এবং সামাজিক স্টিগ্মা, ট্যাবু ইত্তাদি দূর করে স্তন ক্যান্সারের লক্ষণ, সনাক্তকরণ এবং চিকিতসার উপর সঠিক শিক্ষার দেয়া হয়।
স্তন ক্যান্সার বিষয়ে সচেতনতার যথেষ্ঠ অভাব রয়েছে আমাদের সমাজে। স্তন ক্যান্সার নিয়ে লজ্জা বা সামাজিক ট্যাবুও রয়েছে। সামাজিক রক্ষণশীলতার কারণে বাংলাদেশে নারী বা পুরুষ যে কেউই প্রকাশ্যে স্তন বিষয়ক কোন আলোচনা করতে অস্বস্তি বোধ করে। একইভাবে নারীদের স্তনে কোন পরিবর্তন বা প্রাথমিক লক্ষণ দেখা দিলেও তারা তা গোপন রাখে। এমনকি অনেকেই মা বা স্বামীর কাছেও প্রথমদিকে গোপন রাখার চেষ্টা করে। বিডিনিউজ টোয়েন্টিফোর ডটকমকে দেয়া এক সাক্ষাতকারে জনৈক খন্দকার শাহানা বিলকিস তার নিজের স্তন ক্যন্সার সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেন “যেহেতু স্তন একটা গোপন অঙ্গ হিসেবেই বিবেচিত এবং যেহেতু ব্যাপারটি আমাকে তেমন একটা যন্ত্রণা দিত না, অতিরিক্ত ব্যথাও ছিল না, তাই আমি ব্যাপারটি নিয়ে আর ডাক্তারের শরণাপন্ন হইনি।” সেই সঙ্গে ছিল লজ্জা ও জড়তাও। শাহানার মতই অধিকাংশ নারীই চিকিতসকের কাছে আসে একেবারে শেষ পর্যায়ে। অনেক ক্ষেত্রে তখন আর তেমন কিছুই করার থাকে না। রোগী শুধু মৃত্যুর প্রহর গুনতে থাকে। তাই স্তন ক্যান্সারকে লজ্জা পাওয়া বা গোপন রোগ হিসেবে চিন্তা করার অবকাশ নেই। জীবনের দামে লজ্জার দাম পরিশোধ করা কোন ভাবেই সমীচিন নয়।
প্রাথমিক পর্যায়ে স্তন ক্যান্সার সনাক্তকরণ :
সমাজের সকলে সচেতন হলে স্তন ক্যান্সার প্রাথমিক পর্যায়েই দ্রুত সনাক্ত করা সম্ভব। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন প্রাথমিক পর্যায়ে দ্রুত সনাক্ত করা গেলে স্তন ক্যান্সার ক্ষেত্রবিশেষে পুরোপুরি নিরাময়যোগ্য এবং এর মাধ্যমে স্তন ক্যান্সার জনিত মৃত্যুহার হ্রাস করা সম্ভব। প্রাথমিক পর্যায়েই দ্রুত সনাক্তকরন তিনটি ধাপে সম্পন্ন করতে হয়।
১। Breast Self-Examination (BSE) বা স্তনের স্ব-পরীক্ষা: চিকিৎসকেরা ২০ বছর বয়স থেকে বাড়িতে বসে নিজেই নিজের স্তন পরীক্ষা করার পরামর্শ দিয়ে থাকেন। এর মাধ্যমে স্তনে কোন্রুপ অস্বাভাবিকতা বা পরিবর্তন থাকলে তা বোঝা যায়।
২। Clinical Breast Examination (CBE): একজন ডাক্তার বা অন্য কোন পেশাদার স্বাস্থ্যসেবী দ্বারা স্তনের পরীক্ষা করানো হয়। ২৯ থেকে ৩৯ বছর বয়সের মধ্যে, মহিলাদের প্রতি ১ থেকে ৩ বছরে একবার স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীর দ্বারা CBE করানো উচিত। ৪০ উর্দ্ধ বয়সের মহিলাদের প্রতি বছর ১ বার নিয়মিত CBE করানো দরকার।
৩। Mamography: ম্যামোগ্রাফি হল স্তনের এক ধরনের কম মাত্রার এক্স-রে। ম্যামোগ্রাফি স্তন টিস্যুর বৈশিষ্টপূর্ণ ভর বা মাইক্রোক্যালসিফিকেশন পরীক্ষা করে স্তন ক্যান্সারের প্রাথমিক সনাক্তকরণ নিশ্চিত করে থাকে। ঝুঁকির মাত্রার উপর নির্ভর করে ম্যামোগ্রামের সাথে স্তনের এমআরআইও করা যেতে পারে।
স্তন স্বাস্থ্য পরিকল্পনা :
৪০ বছর বা তার বেশি বয়সী মহিলাদের প্রতি বছর একটি ম্যামোগ্রাম করা উচিত। যতদিন তারা সুস্থ থাকে ততদিন এই রুটিন চালিয়ে যাওয়া উচিত।
২৯ থেকে ৩৯ বছর বয়সী মহিলাদের নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার অংশ হিসাবে পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীর নিকটে প্রতি ১-৩ বছর অন্তর একটি ক্লিনিকাল স্তন পরীক্ষা (CBE) করানো উচিত। ৪০ বছর বয়সের পরে, মহিলাদের প্রতি বছর একজন পেশাদার স্বাস্থ্যকর্মীর দ্বারা CBE করা উচিত। ২০ এর অধিক বয়সী মহিলারা প্রতি মাসে একবার নিয়মিতভাবে স্তনের স্ব-পরীক্ষা (BSE) করতে পারেন। তবে স্তনের স্ব-পরীক্ষা করার সময় একজন স্বাস্থ্যকর্মীকে দিয়ে দেখিয়ে নিবেন যে তাদের স্ব-পরীক্ষার কৌশল সঠিক কি না? স্তন ক্যান্সারের জন্য উচ্চ ঝুঁকিতে থাকা মহিলাদের প্রতি বছর একটি এমআরআই এবং ম্যামোগ্রাম করা উচিত।
ড. মোঃ মোস্তাফিজুর রহমান : অধ্যাপক, ফার্মেসি ডিসিপ্লিন, খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়, খুলনা।
মন্তব্য করুন